এবাদতের স্যালুট রহস্য

পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের নব্বইতম ওভারের প্রথম বল। মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির ঠিক পরমুহূর্তেই ইবাদত হোসেন ছুড়লেন বল,ব্যাটার ফর্মে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ান। অফ স্টাম্পের খানিক বাইরের বল সজোড়ে ভেতরের দিকে প্রবেশ করলে গতিতে পরাস্থ হন রিজওয়ান। বল গিয়ে লাগে তাঁর পেছনের পায়ে।

এবাদতসহ পুরো বাংলাদেশ দলের আবেদনের সাথেসাথেই তর্জনীর ইশারায় জানিয়ে দিলেন রিজওয়ানকে ফিরতে হবে সাজঘরে। তারপর এবাদত ছুটলেন তাঁর সিগনেচার উদযাপনের দিকে। সটান দাঁড়িয়ে ঠিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মতো করে স্যালুটের মাধ্যমে রিজওয়ানের উইকেটটি উদযাপন করলেন তিনি। এমন উদযাপনের পেছনের ছোট্ট গল্প রয়েছে।

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যকার প্রথম টেস্টে বাংলাদেশি পেস বোলারদের নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষে বেশ সমালোচনাই হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। পেছনের কারণ অবশ্য যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশ দলে খেলছেন দুইজন পেসার একজন আবু জাহেদ রাহি অন্যজন এবাদত হোসেন। দু’জনের কেউই পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবিদ আলী ও আবদুল্লাহ শফিকের জন্যে সৃষ্টি করতে পারেননি কোন হুমকির।

তবে তৃতীয় দিনে এসে নিজেকে যেন খুঁজে পেলে এবাদত হোসেন। পেয়ে গেলেন দুইটি উইকেট। প্রথমটি ফর্মে থাকা পাকিস্তানি উইকেটরক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ানের, পরবর্তীটি বোলিং অলরাউন্ডার সাজিদ খানের। দু’টো উইকেটই তিনি উদযাপন করছেন সশস্ত্র বাহিনীর স্যালুটের মধ্য দিয়ে। এর পেছনে কাজ করেছে তাঁর ফেলে আসা জীবনের স্মৃতিকাতরতার পাশাপাশি সাবেক কর্মক্ষেত্রের প্রতি সম্মানবোধ।

এবাদত হোসেন ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিণীর একজন সদস্য। দীর্ঘ বেশ কিছু বছর যাবৎ তিনি যুক্ত ছিলেন দেশের সশস্ত্র বাহিণীর সাথে। সেখান থেকে ক্রিকেটে এসেছেন এই পেস বোলার। তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তিনি এমন স্যালুট জানিয়ে উদযাপন করেন তাঁর নেওয়া প্রতিটি উইকেট। তবে তাঁকে এমন উদযাপনের উদ্বুদ্ধ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বছর দু’য়েক আগে এমন তথ্যই দিয়েছিলেন এবাদত হোসেন। 

এবাদত বলেছিলেন, ‘আমার নিজস্ব কোন উদযাপন ভঙ্গি ছিল না। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথম বিভাগের এক ম্যাচে রিয়াদ ভাই আমাকে বলেছিলেন যে স্যালুট দিয়ে উদযাপন করতে আমার নেওয়া প্রতিটি উইকেট। যেহেতু আমি একজন বিমান বাহিনীর সদস্য ছিলাম। তিনি আরো বলেছিলেন যে এমন উদযাপন একদিন আমার প্রতীকে পরিণত হবে।’

সেই থেকেই এবাদত যেকোন ক্রিকেটে নেওয়া তাঁর প্রতিটি উইকেট এমন স্যালুট জানিয়ে উদযাপন করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি প্রথম এমন উদযাপন করেন ভারতের বিপক্ষে খেলা টেস্ট ম্যাচে। সেই টেস্ট ম্যাচে তিনি ভারতের অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির উইকেট নিয়ে তাঁর এই ভিন্নধর্মী উদযাপনের সূত্রপাত করেন। তারপর থেকে এখন অবধি তিনি এই উদযাপন অব্যাহত রেখেছেন।

দর্শক-সমর্থকেরা নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করে এবাদাত টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের একজন সেরা বোলারে পরিণত হবে। বিশ্বের নামকরা সকল ব্যাটারদের উইকেট তুলে নেবেন নিজের রেকর্ডের ঝুলিতে। আর আমাদের বাংরবার দেখাবেন তাঁর ভিন্নধর্মী উদাযাপন। যার পেছনে রয়েছে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধের অন্তর্নিহিত এক বার্তা। তবে মাত্র নয় ম্যাচে দশ উইকেট পাওয়া এবাদত তাঁর প্রতি করা প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারবেন কিনা তা সময় বলে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link