তিন কীর্তি, দুই স্মৃতি

রিচার্ড স্টোকস এখনও জীবিত কিনা জানিনা। ১০ বছর বয়সে ১৯৫৬ সালে বাবার সাথে ছোট ছেলেটা অ্যাশেজের ওল্ড ট্রাফোর্ডে টেস্ট দেখতে গিয়েছিলো। সেই টেস্টে জিম লেকার এমন এক কীর্তি করেছিলেন যেটা সব বোলার-ব্যাটার মিলিয়ে এক টেস্টে কোন এক নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের শ্রেষ্ঠতম কীর্তি!

হ্যাঁ, আপনি ব্রায়ান লারার ৪০০ এর কথা মনে করতে পারেন। সেই রেকর্ড ভাঙার দ্বারপ্রান্তে ওয়ার্নার, ক্লার্ক গিয়েছেন- ভাঙেননি। হয়তো কোনদিন সময় নিয়ে কেউ ভাঙতেও পারেন। কিন্তু এক টেস্টে একজনের ১৯ উইকেট! সেটা যে শুধু একজন একক বোলারের কৃতিত্ব, তাই না, অন্য সব বোলারের ব্যর্থতাও বটে! টনি লক আর ইংল্যান্ড দলের অন্যান্য বোলারদের প্রতি জিম লেকার সম্ভবত মৃত্যুর পরের জীবনেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। টনি লক অন্যদিকে পুরো টেস্টে মাত্র ১ উইকেট না পেলে হয়তো লেকারের অবিশ্বাস্য ১৯ উইকেটের কীর্তি হয় না। লেকারও এভাবে ক্রিকেট ইতিহাসে অমর হয়ে যান না!

যাই হোক, রিচার্ড স্টোকসে ছিলাম। ১০ বছরের স্টোক্স মাঠে বসে লেকারের ১০ উইকেটের কীর্তি দেখেছিলেন বাবার সাথে। এর ৪৩ বছর পরের কথা। ১৯৯৯ সালে ভারত বনাম পাকিস্তানের টেস্টে রিচার্ড স্টোক্স ব্যবসার কাজে দিল্লী গিয়েছিলেন। লাঞ্চের পরে টেস্ট ম্যাচ দেখতে মাঠে গেলেন। মাঠে বসে দেখলেন অনিল কুম্বলের ১০ উইকেট! হয়ে গেলেন মাঠে বসে জিম লেকার আর অনিল কুম্বলের ১০ উইকেট দেখা একমাত্র ব্যক্তি! বেঁচে থাকলে এখন রিচার্ড স্টোক্সের বয়স হবার কথা ৭৫। তবে তিনি যে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে বসে নেই সেটা প্রায় নিশ্চিত।

অ্যাজাজ প্যাটেলের জন্ম মুম্বাইতেই। আট বছর বয়সে পরিবারের সাথে নিউ জিল্যান্ডে গিয়েছেন। সেখানেই বেড়ে ওঠা। ৩০ জনের বিশাল পরিবারের সাথে একদিন ডিনার করছিলেন, সেখানেই শোনেন তিনি নিউ জিল্যান্ড টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছেন। তখন কি ভাবতে পেরেছিলেন এমন এক অর্জন করবেন যেই অর্জনটা দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এর আগে মাত্র দুই জনই করতে পেরেছেন!

মুম্বাইয়ে জন্ম নিয়ে সেই মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতেই ভারতের বিপক্ষেই ইনিংসে ১০ উইকেট! অভাবনীয়, অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়! কে লিখেছিলো অ্যাজাজ পাটেলের স্ক্রিপ্ট?

রিচার্ড স্টোকসে আবার ফিরে যাই, ভদ্রলোক মাঠে বসে প্রথম দুইটা কীর্তি দেখেছিলেন, রাহুল দ্রাবিড় সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যিনি দলের অংশ হয়ে দুইটা কীর্তি দেখলেন। অনিল কুম্বলের সময়ে সতীর্থ ছিলেন, অ্যাজাজ প্যাটেলের সময়ে হলেন প্রতিপক্ষ কোচ। জাভাগাল শ্রীনাথের আবার কুম্বলের ১০ উইকেটে বেশ ভালো ভূমিকা ছিল। কুম্বলের ৮ উইকেট হয়ে যাবার পর শ্রীনাথ ইচ্ছা করেই অনেক বাইরে বল করছিলেন যেন শেষ ২টা উইকেট কুম্বলেই পান। সেই শ্রীনাথ এই ম্যাচের ম্যাচ রেফারি!

নিজের একটা ছোট আনন্দ সহভাগ করি। আমার মতো দর্শকদের জন্য টেলিভিশনই ভরসা! অনিল কুম্বলের দশ উইকেট লাইভ দেখেছিলাম, এবার অ্যাজাজ পাটেলেরটাও লাইভ দেখলাম! ৯ উইকেট পাবার পরে উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। সিরাজ যখন বলটা সুইপ করলেন, বলটা আকাশে উঠে গেলো, আমিও লাফিয়ে উঠলাম। না, অ্যাজাজ পাটেল আমার এমন কোন প্রিয় ক্রিকেটার নন। এটা দেড়শ বছরে মাত্রই তিন বার হওয়া মুহূর্ত দু’বারই টিভিতে লাইভ দেখতে পারবার আনন্দ, উত্তেজনা! আর টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা!

টেস্ট ক্রিকেটের কীর্তিগুলোর স্ক্রিপ্ট সম্ভবত বিধাতা লিখেন বলেই কিনা জানিনা, টেস্ট ক্রিকেট বেঁচে আছে এই দ্রুত পরিবর্তনশীল সময়ে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link