নতুন রাজা রিজওয়ান

বর্তমান সময়ে ২২ গজ মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন পাকিস্তানি তারকা মোহাম্মদ রিজওয়ান। চলতি বছর টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে উড়ন্ত ফর্মে আছেন এই ব্যাটার। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেই গড়েছেন অনন্য এক রেকর্ড। এক ক্যালেন্ডার বছরে প্রথম ও একমাত্র ব্যাটার হিসেবে ২ হাজার রানের রেকর্ড গড়েছেন রিজওয়ান। চলতি বছর টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের মালিকও তিনি।

চলতি বছর টি-টোয়েন্টিতে ২০৩৬ রান করেছেন সময়ের সেরাদের একজন এই রিজওয়ান। তারপর দ্বিতীয় স্থানে আছেন পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজম। চলতি বছর বাবরের করা ১৭৭৯ রান এক বছরে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান! তবে চলতি বছর রিজওয়ান যেনো সবাইকে ছাড়িয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

২০২১ সালে পাঁচটি সিরিজে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জেতেন রিজওয়ান। এক বছরে সর্বোচ্চ পাঁচবার সিরিজ সেরার পুরষ্কার জিতেছেন মাত্র দু’জন। ১৯৯৮ সালে ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার পাঁচবার সিরিজ সেরা হন। শচীনের ওই কীর্তিতে চলতি বছর নাম লিখিয়েছেন রিজওয়ানও।

ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিলো একদমই সাদামাটা। জাতীয় দলে আসার রাস্তাটাও ছিলো কঠিন। কারণ উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলতেন দলের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। ২০১৫ সালে অভিষেক হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি রিজওয়ান। প্রথম চার বছরে দলে আসা যাওয়ার মাঝে খেলেন ২৭ ওয়ানডে। এই ২৭ ম্যাচে মাত্র ৩ ফিফটিতে করেন মাত্র ৪৬০ রান!

টি-টোয়েন্টিতে প্রথম দুই বছরে ১০ ম্যাচ খেলার পরই বাদ পড়েন দল থেকে! ৭ ইনিংসে ব্যাট হাতে করেন মোটে ১০৬ রান। এরপর ২০১৯ এর আগ অবধি টি-টোয়েন্টিতে ফিরতে পারেননি তিনি। অপরদিকে, ২০১৬ সালে টেস্টে অভিষেকের পরের ম্যাচেই বাদ পড়েন তিনি। পরের তিন বছর আর সুযোগ হয়নি।

কারণ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে তখন দলে থিতু সরফরাজ আহমেদ। এছাড়া দলের অধিনায়ককে হটিয়ে একাদশে জায়গা পাওয়াটা আকাশ-কুসুম কল্পনার মতোই। ক্যারিয়ারের প্রথম চার বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রিজওয়ান খেলেন মাত্র ৩৮ ম্যাচ। যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সে সমর্থকরাও নাখোশ ছিলেন রিজওয়ানের উপর।

এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে নিজেকে আবারও প্রস্তুত করেন জাতীয় দলের জন্য। সরফরাজ আহমেদের পারফরম্যান্স, অধিনায়কত্ব নিয়ে তখন বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছিলো। ব্যাকআপ হিসেবে তখন নির্বাচকদের পছন্দের ছিলেন রিজওয়ানই।

ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স, ভবিষ্যত সম্ভাবনা সব মিলিয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপের পর সরফরাজের জায়গায় দলে সুযোগ পান রিজওয়ান। সরফরাজকে সরিয়ে এই জায়গায় সুযোগ পাওয়াটা মোটেও সহজ ছিলো না রিজওয়ানের জন্য। সরফরাজ ভক্ত সহ পাকিস্তান ক্রিকেট সমর্থকদের একাংশ বেশ চটেওছিলেন রিজওয়ানকে সরফরাজের বদলি হিসেবে দলে আনায়।

রিজওয়ানের জন্য চ্যালেঞ্জটা তাই খুব কঠিন ছিলো। সমর্থকদের কটু কথা, সমালোচনা আর সরফরাজের পজিশনে নিজেকে প্রমাণের কঠিন চ্যালেঞ্জ রিজওয়ান উতরে গেছেন সহজেই। পালের হাওয়ার মতো পালটে যায় রিজওয়ানের ক্যারিয়ারের মোড়।

টেস্টে চলতি বছর ২০২১ সালে ৯ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি আর ২ ফিফটিতে ৪৫ গড়ে ৪৫৫ রান করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে চলতি বছর ২৯ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি আর ১২ ফিফটিতে প্রায় ৭৪ গড়ে ১৩২৬ রান! সেই সাথে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে ২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির তুলনায় ওয়ানডেতে অবশ্য নিষ্প্রভ রিজওয়ানের ব্যাট। চলতি বছর ৬ ম্যাচে ১ ফিফটিতে করেছেন মাত্র ১৩৪ রান!

টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ২৫ ম্যাচে মাত্র ১৭ গড়ে করেছিলেন ২২৪ রান। আর পরের ২৯ ম্যাচে ৭৪ গড় আর ১৩৩ স্ট্রাইক রেটে ১৩২৬ রান।

ক্যারিয়ারের প্রথম চার বছর ব্যাকফুটে থাকা রিজওয়ান এখন ক্রিকেটের হট কেক। দিন দিন যেনো ব্যাট হাতে আরো পরিণত হয়ে উঠছেন এই ব্যাটার। ব্যাটিং টেকনিক, শট সিলেকশনেও করেছেন অনেক উন্নতি। সব মিলিয়ে রিজওয়ান ছুটছেন অদম্য গতিতে। চলতি বছরের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কারের যোগ্য দাবিদারও তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link