বর্ষসেরা অভিষিক্ত একাদশ

একটা বছর শেষের দিকে। এই বছরের ক্রিকেট ছিল পুরোটা জুড়েই। পুরো বছরে ক্রিকেট যেমন ছিল নিয়মিত ঠিক তেমনি নিয়মিত বেশ কিছু খেলোয়াড়দের অভিষেক হয়েছে এই ২০২১ সালে এসে। বছরের শেষপ্রান্তে তাই সেই সকল অভিষিক্ত খেলোয়াড়দের নিয়ে একটা একাদশ সাজানোর প্রচেষ্টা।

জৈব সুরক্ষা বলয়ের জগতে এই বছরই ক্রিকেট বিশ্ব সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে, খেলোয়াড়দের অনেক বেশি মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়েছে। অনেক দলই এই সুযোগে অনেক বেশি খেলোয়াড়দের অভিষেকও করেছে। অভিষিক্তদের  অনেকেই নিজেকে বেশ দারুণ ভাবে প্রমাণও করেছেন।

  • ফিলিপ সল্ট (ইংল্যান্ড)

ওয়েলশে জন্ম হওয়া ফিলিপ সল্ট মূলত ছিলেন ফ্রাঞ্চাইজি লিগগুলোর নিয়মিত মুখ। ২৫ বছর বয়সে এসে তিনি সুযোগ পেয়েছেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে অভিষেক ঘটে তাঁর। সেই সিরিজে তিনটি ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে রান আসে ১০৪। একটি অর্ধশতকও রয়েছে।

অভিষেকে অর্ধশতক হাঁকানো সল্ট বেশ সম্ভাবনার সঞ্চার করেছেন। এখন সময় বলে দেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন কিনা। আজকের একাদশের ওপেনার হিসেবেই থাকছেন তিনি।

  • ঈশান কিষাণ (ভারত)

এই বছর অভিষেক হওয়া ব্যাটারদের মধ্যে অন্যতম প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময়ী ব্যাটার ভারতীয় তরুণ ঈশান কিষাণ। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ থেকে শুরু করে ভারতের ঘরোয়া লিগগুলোতে নিয়মিত রানে থাকা ঈশান কিষাণের ভারত জাতীয় দলে অভিষেক হয় সাদা বলের ক্রিকেটে।

টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই অর্ধশতক করে ঈশান প্রমাণ করেছেন যে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছেন সব প্রস্তুতি নিয়েই। এমনকি তিনি ছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের দলে। তাছাড়া উইকেট কিপিং টাও বেশ ভালভাবেই করতে পারেন তিনি ওপেনিং-এ ব্যাটিং করার পাশাপাশি।

  • সুরিয়াকুমার যাদব (ভারত)

অনেক অপেক্ষার পর জাতীয় দলের অভিষেকের প্রথমবারের মতো ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটার সুরিয়াকুমার যাদব। বছরে অভিষিক্ত হওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে তাঁকে বেশ লম্বা সময় ধরে অপেক্ষমান থাকতে হয়েছে জাতীয় দলের আসার জন্যে।

ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডে বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সুযোগ পান তিনি। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং করবার সুযোগ না পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তুলে নেন প্রথম আন্তর্জাতিক অর্ধশতক। পাশাপাশি নিজেকে প্রমাণ করেন। ভারতের মিডেল অর্ডার সামলানোর জন্যে সম্পূর্ণ রসদ নিয়েই তিনি এসেছেন জাতীয় দলে সেই কথা জানিয়ে দেন ক্রিকেট বিশ্বকে।

  • উইল পুকোভস্কি (অস্টেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ সুনাম কামানো ২৩ বছর বয়সী ব্যাটার উইল পুকোভস্কির অভিষেক ঘটে ২০২১ সালে। এই বছর জানুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ঐতিহ্যের অংশ হন পুকোভস্কি।

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ভবিষ্যতের কাণ্ডারি বিবেচিত হওয়া এই তরুণ ব্যাটার এখন অবধি অজিদের হয়ে একটি মাত্র টেস্ট ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। ভারতীয় শক্ত বোলিং লাইন আপের বিরুদ্ধে অভিষেক ইনিংসে ৬২ রান করেন। এই রান তুলতে দারুণসব ক্ল্যাসিক শট খেলেন তিনি। মিডেল অর্ডারে যোগ্যতা সম্পন্ন খেলোর উইল পুকোভস্কি।

  • সৌদ শাকিল (পাকিস্তান)

প্রায় ৬.৬ ফুট উচ্চতার তরুণ এক নান্দনিক ব্যাটার সৌদ শাকিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেই নিজের ছাপ ফেলে গিয়েছেন তিনি। তিন ম্যাচ খেলে তাঁর নামের পাশে রয়েছে একটি দূর্দান্ত অর্ধশতক।

তাছাড়া প্রত্যাশা করা হয় ভবিষ্যতে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপের স্তম্ভ হবেন তিনি। ২০১৭-১৮ মৌসুমে পাকিস্তানের ঘরোয়া লিগ কয়েদ-এ আজম লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। সেই মৌসুমে ৪৮৮ রান তুলেছিলেন শাকিল। 

  • চারিথ আসালাঙ্কা (শ্রীলঙ্কা)

একটা ট্রানজিশন পিরিয়ডের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। এই সময়ে দলের হাল ধরতে কিংবা ভবিষ্যতে লংকান ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এই বছরে অভিষেক হওয়া চারিথ আসালাঙ্কা। বেশ মারকুটে এই ব্যাটার ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলতে বেশ পারদর্শী।

এই বছর সাদা বলের দুই ফরম্যাটে অভিষেক হয়েছে আসালাঙ্কার। আট ওয়ানডে ম্যাচে তাঁর রান ৩২৬, রয়েছে তিন অর্ধশতক। নয়টি টি-টোয়েন্টিতে দুই অর্ধশতকের বদৌলতে এখন অবধি করেছেন ২৯৫ রান। এছাড়া ২০১৮ সালে প্রথম টেস্ট দলে ডাক পেয়ে প্রথম সুযোগেই অভিষেক হয় তাঁর।

  • মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র (পাকিস্তান)

ক্রিকেটের ক্ষুদ্র ফরম্যাট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে পাকিস্তানের সম্ভাবনাময়ী অলরাউন্ডার মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের। পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলা এই তরুণ ইতোমধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।

তবে এখন অবধি পর্যাপ্ত সুযোগ তিনি পাননি নিজেকে প্রমাণ করার। এমতবস্থায় দেখবার বিষয় সুযোগ পেলে তিনি সেই সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে পারেন কিনা।

  • ক্রিস গ্রিভস (স্কটল্যান্ড)

২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে নজড়ে আসেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া স্কটল্যান্ড জাতীয় দলের অলরাউন্ডার ক্রিস গ্রিভস। তবে এই বছরের সেপ্টেম্বরেই স্কটল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয় তাঁর।

লেগ ব্রেক বোলিং এর পাশাপাশি পিঞ্চ হিট করতে সুদক্ষ ক্রিস গ্রিভস টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষের ম্যাচে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। দেরিতে শুরু হওয়া গ্রিভসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারটায় যথাযথ সুযোগ পেলে হয়ত সমৃদ্ধ করতে পারবেন রান ও উইকেট দিয়ে।

  • নাসুম আহমেদ (বাংলাদেশ)


খানিক ধুকতে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেটে আশার আলোর সঞ্চালনা করছেন যেন এই বছরই অভিষেক হওয়া বাম-হাতি স্পিন বোলার নাসুম আহমেদ। মূলত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অভিষেক হওয়া নাসুম এই বছর বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন ১৮ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

যার মধ্য থেকে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে অজিদের বিপক্ষে ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটে বাংলাদেশের প্রথম জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন নাসুম। তাঁর মোট উইকেট সংখ্যা এখন ২২টি।

  • ওলি রবিনসন (ইংল্যান্ড)

একজন মূল সারির পেস বোলারের যে সকল রসদ থাকা প্রয়োজন তাঁর সবটুকুই যেন নিজের মধ্যে ধারণ করেন ইংল্যান্ডের হয়ে ২০২১ সালে অভিষেক হওয়া ওলি রবিনসন। এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে ছয়টি টেস্ট ম্যাচে অংশ নিয়েছেন রবিনসন।

বেশ একটা বাজে বছর কাটাচ্ছে ইংল্যান্ড আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তবুও নতুন দিনের আশার আলো যেন দেখাচ্ছেন ডানহাতি এই পেস বোলার। এখন পর্যন্ত তিনি নিজের ঝুলিতে পুরেছেন ৩২ খানা টেস্ট উইকেট।

  • জায়ডেন সিলস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ফাইফার নেওয়ার কীর্তি নিজের অভিষেক বছরেই করে ফেলেছেন জায়ডেন সিলস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের মধ্য দিয়ে অভিষেক হয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিকাংশ খেলোয়াড় যখন ঝুঁকছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দিকে তখন সিলসের মতো সম্ভাবনাময়ী ২০ বছর বয়সী তরুণরা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন টেস্টকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এখন অবধি চারটি টেস্ট ম্যাচ খেলে জায়ডেন সিলসের উইকেট সংখ্যা ১৬টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link