নতুন এক বিস্ময় বালক

১৩ বছর ছোট্ট কিশোর। ভারি ব্যাট, সেই সাথে নানানরকমের প্যাড পাশাপাশি গ্লাভস হেলমেট পড়ে ক্রিকেট খেলছে তপ্ত রোদে। শুধু খেলছে বললে ভুল হবে। সে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলছে। বয়সের কোন প্রভাব নেই। দিব্যি খেলে যাচ্ছেন। সদ্যই এক যুগ পাড় করা কিশোরের ব্যাটিং এ এক যুগের অভিজ্ঞতার ছাপ। যেন নিজের ভেতর ক্রিকেটীয় ডিএনএ নিয়েই জন্ম তাঁর। ভারতের মধ্যপ্রদেশের চেম্বেলের ছেলে যশবর্ধন চৌহানের কীর্তি দেখে চোখ ছানাবড়া হওয়া যেন অবধারিত।

চেম্বেল জায়গাটার বেশ একটা কুখ্যাতি রয়েছে। ডাকাতদের আস্তানা হিসেবেই এই কুখ্যাতি অর্জন। কিন্তু এই যে অপবাদ এই নেতিবাচক ট্যাগের মুক্তি হয়ত মিলতে পারে যশবর্ধন চৌহানের হাত ধরে কিংবা ব্যাট মারফত। কেন এত কথা এই খুদে ক্রিকেটারকে নিয়ে তা নিয়ে হয়ত সকলের মনেই জেগেছে প্রশ্ন। আচ্ছা একটু সবুর করুন সব কিছুই বলছি। ভারতের মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত অনূর্ধ্ব ১৩ টুর্নামেন্ট চলমান। সেই টুর্নামেন্টেই নতুন সম্ভাবনার উদয় হয়েছে যশবর্ধন চৌহান বেশে।

অনূর্ধ্ব ১৩ টুর্নামেন্টে এখন অবধি চার ম্যাচ খেলেছে যশবর্ধন। এই চার ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে রান এসেছে মোট ১০৯৮ রান। হাজার পেড়োনে রান করতে ঠিক কতগুলো ম্যাচ খেলতে হয় সেই হিসাবে না গিয়ে আরেকটু চমকে দেওয়া তথ্য দেই। এই ১৩ বছর বয়সী খুদে খেলোয়াড় একাধারে শতক, দ্বিশতক, ত্রিশতক হাঁকিয়েছেন এমনকি চারশ রান করেছেন যশবর্ধন। প্রথম ম্যাচে ৪৭ রান করেছিলেন তিনি।

এরপর তাঁর রানে পাহাড় যেন আপন অংক মেনে বেড়েছে ম্যাচ অনুসারে। দ্বিতীয় ম্যাচেই চারশ রান পাড় করেন খুদে ক্রিকেটার যশ। করেন ৪২৫। তারপরের ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ২৩৫ রান। সেমিফাইনালে তাঁর ব্যাটে থেকে এসেছে ৩৯১ রান। অল্পের জন্য দ্বিতীয় বারের মতো চারশ রান ছুঁয়ে দেখা হলো না তাঁর।

যশের এমন দূর্দান্ত পারফর্মেন্স দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়শনের সেক্রেটারি সঞ্জীব রাও-কে। তিনি যশের ব্যাটিং দেখতে আমন্ত্রণ জানান মধ্যপ্রদেশের প্রধান কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে। যদিও চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত যশের দীর্ঘ ব্যাটিং দেখতে পারেননি।

আগের দিনের ৩৬৭ রানে অপরাজিত থাকা যশ পরদিন ৩৯১ রানে আউট হয়ে যান। তবে সেই আউটের পেছনেও যশের খুব একটা ভুল ছিলো তা বলা যায় না। তেমনটাই বলেছেন চন্দ্রকান্ত। যশের ব্যাটিং দক্ষতা এবং খেলোয়াড়ী মানসিকতায় সন্তুষ্ট এবং অভিভূত চন্দ্রকান্ত বেশ প্রসংশা করেছেন।

চন্দ্রকান্ত বলেন, ‘গেল রাতেই সঞ্জীব আমাকে আমন্ত্রণ জানালো এই খেলোয়াড়ের খেলা দেখার জন্যে। যেহেতু আমি মধ্যপ্রদেশের সকল বয়সভিত্তিক খেলায় নজড় রাখি সেহেতু তাঁর খেলা দেখাও আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। যদিও নিচু হয়ে যাওয়া একটি বলে সে আউট হয়েছে তবুও সে বেশ ভালই ব্যাটিং করছে সে।’

যশের ব্যাটিং দক্ষতা ও শৈলীও  বেশ প্রসংশা কুড়িয়েছে। চন্দ্রকান্ত প্রসংশা করে বলেন, ‘টেকনিক্যালি সে বেশ ভাল একজন ব্যাটার বিশেষ করে বয়স বিবেচনায় সে দারুণ। অধিকাংশ সময় সে সোজা ব্যাটেই খেলেছে।’

সবচেয়ে বড় বিষয় যশের ধৈর্য এবং ধারাবাহিকতা। সে মোট ৭০৫টি বল খেলেছে এই যে ১০৯৮ রান সংগ্রহে। দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে রান করে যাওয়ার এই দক্ষতা চন্দ্রকান্ত পন্ডিতকে বেশ মুগ্ধই করেছে। তাছাড়া যশের ক্রিকেটীয় মানসিকতারও প্রসংশা করেছেন চন্দ্রকান্ত।

‘আমি তাঁর সাথে দেখা করে প্রায় আধ ঘন্টা যাবৎ কথা বলেছি, বেশ কিছু প্রশ্নও করছি তাঁকে। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি ত্রি-শতকের পর তোমার অনুভূতি কি? সে আমাকে উত্তর দেয় সে রান করতে পছন্দ করে, আউট হওয়া তাঁর খুবই অপছন্দ।’ এই বিষয়টাই চন্দ্রকান্তের বেশ মনে ধরেছে।

এই খুদে খেলোয়ড় যশ তাঁর ১০৯৮ রানে মধ্যে ১৯৭ টি চার মেরেছেন। পক্ষান্তরে সে একটিও ছক্কা মারেনি কিংবা চেষ্টাও করেনি। তাঁকে এই বিষয়ে প্রশ্নও করেন চন্দ্রকান্ত তাঁর প্রতি উত্তরে যশ তাঁকে বলেছিল যে সে হাওয়া ভাসানো শটে বিশ্বাসী নয়। সে বিশ্বাস করে হাওয়ায় ভাসানো শট ছাড়াও সে তাঁর দক্ষতা ব্যবহার করে রান বের করতে পারবে এবং তা দ্রুততার সাথেই পারবে।

তাঁর এমন মনোভাবেও বেশ মুগ্ধ হয়েছেন চন্দ্রকান্ত পন্ডিত। তাছাড়া চন্দ্রকান্ত আরো বলেন, ‘আমি জানি না সে কতদূর পর্যন্ত যেতে পারবে শেষ অবধি। তবে সে তাঁর বড় ইনিংস খেলার ক্ষুদা ইতোমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছে তাঁর ব্যাটিং এবং তাঁর কথাবর্তায়।’

ব্যাট হাতে সেমিফাইনাল ম্যাচে ৩৯১ রানে আউট হওয়ার পর যশবর্ধন চৌহান তাঁর অফ স্পিন বোলিং এর অবদানে মাত্র ৪৬ রান দিয়ে ছয়টি উইকেট নিয়েছেন। হাট্রিক ও করেছেন যশ। বেশ সম্ভাবনাময়ী খুদে খেলোয়াড়কে নিশ্চয়ই হারিয়ে যেতে দেবেন না মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link