হার্শা ভোগলে বলছেন, ‘লিটন দাস যেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিলেন সেই ফুলটা ফুটতে দেখে তিনি আনন্দিত।’
কমেন্ট্রি বক্সের এক শিল্পী যেন বাইশ গজের এক শিল্পীকে নিয়ে কিছু বলছেন। এক শিল্পী আরেক শিল্পীর মর্যাদা বুঝবেন সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের মত ছাপোষা মানুষও লিটনের মাহত্মটা ধরতে পেরেছিলেন। লিটন যেদিন প্রথম ফতুল্লায় ব্যাট করতে নামলেন। আমাদেরও মনে হয়েছিল লিটন বিশেষ কিছু।
২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হলেন। প্রথম ইনিংসে ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৪৪ রানের ছোট্ট একটি ইনিংস খেলেছিলেন। সেই ম্যাচে লিটনের ব্যাটিং দেখতে ফতুল্লায় ছুটে গিয়েছিলেন তখনকার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এমনকি সেই ম্যাচে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিব আল হাসানও লিটনের প্রশংসা করেছিলেন।
এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসা সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানদের একজন হিসেবে ধরা হয় লিটনকে। লিটন বাইশ গজে নেমে যে কয়েকটা রানই করেন সেটাই চোখে লেগে থাকে। ইয়ান বিশপ বলেছিলেন, ‘সে যখন ব্যাট করে, মনে হয় মোনালিসার মত কোন চিত্রকর্ম দেখছি।’
সত্যিই বাইশ গজে নামলে একজন শিল্পী হয়ে উঠেন। কখনো তাঁর মনোমুগ্ধকর ফ্লিকে, কখনো আবার চোখ জুড়ানো কাভার ড্রাইভে।
তবে লিটনকে নিয়ে সমালোচনার জায়গাও ছিল অনেক। এখনো আছে। এই যেমন আজকেই ৮৬ রানের কী অসম্ভব সুন্দর এক ইনিংস খেললেন। তবে এরপরই স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের একটা বল খেলতে গিয়ে আউট হয়ে আসলেন। অন্তত টেস্ট ক্রিকেটে লিটনের মত ব্যাটসম্যান ৮৬ রান করার পর এমন আউট মেনে নিতে কষ্টই হয়। এই ইনিংসটাকে তিনি অনেক বড়ই করতে পারতেন। অন্তত নামের পাশে আরেকটা সেঞ্চুরি তো যোগ হতেই পারতো।
সেজন্যই তো ছয় বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের পরেও লিটনের টেস্টে সেঞ্চুরি মাত্র একটি। তবে টেস্টে যে তিনি ছয়-সাত নম্বরে ব্যাট করেন সেই বাস্তবতাও মানতে হবে। তবুও একেবারেই যে সেঞ্চুরি করার সুযোগ আসেনি সেটাও না। যেই ১০ টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তাঁর অন্তত কয়েকটাকে তো বড় করতেই পারতেন।
এছাড়া লিটনের ধারাবাহিকতা নিয়েও বড় প্রশ্ন ছিল। এখানে আবার লিটনের ক্যারিয়ারকে দুভাগে ভাগ করা যায়। ক্যারিয়ারের প্রথম ১৫ টেস্টেও নিজের পুরোটা দিতে পারেননি। মাঝে মাঝে কিছু ইনিংস খেলেছেন তবে তাতে ঠিক সাধ মিটছিল না। লিটন তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারটাকে নতুন করে আবিষ্কার করলেন করোনার আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
আর করোনার পর টেস্টে লিটন মোটামুটি অবিশ্বাস্য। গতবছর ক্রিকেট দুনিয়ার কিপার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড়ে রান করেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষেও চট্টগ্রামে দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছেন। নতুন বছরেও যেনো সেখান থেকেই শুরু করলেন। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৬ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেললেন। যেই ইনিংস দেখে হার্শা ভোগলেও টুইট করতে বাধ্য হলেন।
২০২১ সালে মোট ৭ টি টেস্ট খেলেছেন। সেখানে ১২ ইনিংস ব্যাট করে ৪৯.৫০ গড়ে রান করেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরি সহ গতবছর করেছেন ৫৯৪ রান। এবছর ৫ টি হাফ সেঞ্চুরসহ করেছেন একটি সেঞ্চুরি। আর এবছরের শুরুটাও করেছেন ঠিক যেখানে গতবছর শেষ করেছিলেন।
লিটনের ক্লাস, ক্রিকেট মেধা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে একটি চাওয়া আছে। আমরা বিশ্বাস করি লিটন তাঁর ক্যারিয়ারটাকে নতুন করে সাজাচ্ছেন। ক্যারিয়ারের এই নতুন ইনিংসে লিটন এই হাফ সেঞ্চুরি গুলোকে যতবেশি সম্ভব সেঞ্চুরিতে পরিণত করুক।
হার্শা ভোগলের কথা মতো লিটন নামক ফুলটা আরো বড় হয়ে ফুঁটুক।