রোমাঞ্চকর প্রতীক্ষা

ঘুরেফিরে সেই একই কথাগুলা বলতে হচ্ছে। আধিপত্য বিস্তার, স্বপ্নের মতো দিন, চালকের আসনে বাংলাদেশ ইত্যাদি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন বাংলাদেশ সম্পর্কে এভাবে টানা ইতিবাচক কথাবার্তার তুবড়ি ছোটাতে হবে বলে কখনোই ভাবিনি।

স্বপ্নটা বোধ হয় সত্যি হবার পথেই। কথায় কথায় ‘বোধ হয়’ বলাটা অনেকের মুদ্রাদোষের মধ্যে পড়ে। সেজন্য ভুল বুঝবেন না। এটা সেই মুদ্রাদোষের ‘বোধ হয়’ না। কেননা বাংলাদেশের স্বপ্ন ও বাস্তবতার মাঝে এখনও যদি/কিন্তুর ব্যাপার রয়েছে। তবে গতদিনের একটা কথা আজ পরিবর্তন করতেই হচ্ছে। মুমিনুল বাহিনীর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জেতার আশাটাকে গতদিন উচ্চাশা বলেছিলাম। আজকের খেলা শেষে সেটাকে উচ্চাশা বলার ন্যূনতম কারণও দেখছি না।

কৃতিত্বটা পেসার এবাদত হোসেনের। ঠিকই শুনছেন। কয়েক মাস আগেও টেস্টে যাঁর বোলিং গড় ছিল শয়ের ঘরে সে-ই বাংলাদেশকে এখন ঐতিহাসিক জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। দিনশেষে কিউইদের হারানো পাঁচটা উইকেটের চারটাই এবাদতের শিকার।

বিশেষ করে পুরোনো বলকে নিপ ব্যাক করিয়ে উইল ইয়ঙয়ের টপ অব অফস্ট্যাম্প হিট করার ডেলিভারিটা দীর্ঘদিন চোখে লেগে থাকবে। যেকোনো পেসারের জন্যই এটা একটা ড্রিম ডেলিভারি৷ এককথায় বে ওভালের তাউরাঙ্গা প্রান্ত থেকে আজ ব্ল্যাকক্যাপ ব্যাটারদের কাঁপিয়ে দিয়েছেন তিনি। সত্যি কথা বলতে এখনও বিশ্বাস করতে একটু হিমশিম খাচ্ছি যে, এটা এবাদত। আমাদের এবাদত।

সবমিলিয়ে পঞ্চম দিনের ক্রিকেটীয় রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে বসেছে বে ওভাল। কাগজে-কলমে তিনটা ফলাফলেরই সম্ভাবনা আছে। তবে আপাতদৃষ্টিতে নিউজিল্যান্ডের জেতার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম।

যদিও বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে টানা আধিপত্য বিস্তার করে খেলায় এখনই আত্মতুষ্টিতে ভুগার সুযোগ নেই বাংলাদেশের। কাজ এখনও বাকি। স্বাগতিকদের হাতে এখনও অর্ধেক উইকেট পড়ে রয়েছে। উইকেটে আছেন রস টেলরের মতো ‘বেস্ট ইন দ্য বিজনেস’। তাঁর সঙ্গী রাচিন রবীন্দ্র যিনি সম্প্রতি ভারতের মাটিতে ব্যাট হাতে প্রতিরোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাছাড়া তাঁদের লেজের ব্যাটসম্যানরাও ভালো ব্যাট করতে পারেন। তাই পঞ্চম দিনে বেশ সর্তক থাকবে হবে এবাদত-মিরাজদের।

মঞ্চ একেবারে প্রস্তুত বাংলাদেশের জন্য। আর ১৭ ওভার পরেই মিলছে নতুন বল। পুরোনো বলেই এবাদত যে কারিশমা দেখালেন আজ তাতে নতুন বলে তাঁর জন্য কাজটা তুলনামূলক সহজ হবার কথা। উইকেটটাও বাংলাদেশের চেনা-পরিচিত উইকেটগুলার মতো। চতুর্থ দিনে দেখলাম স্পিন বেশ ভালোই ধরেছে, আনইভেন বাউন্সও দেখা যাচ্ছে যা পঞ্চম দিনে বাংলাদেশি বোলারদের জিভে জল আনার জন্য যথেষ্ট। তাই এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে শেষদিন দ্রুত উইকেটগুলা তুলে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে।

তবে ইতোমধ্যে সবক’টা রিভিউ হারিয়ে বসা একটা বড়ো ধরনের সেটব্যাক। এটা আগামীকাল মাথাব্যথার কারণ না হলেই হয়। তাছাড়া ক্যাচ ধরার ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন। আজ একাধিক ক্যাচ মাঠে পড়েছে। শেষদিনের ক্রুশাল মোমেন্টে এসব ছাড় পেলে নিশ্চিতভাবে টেস্টটা বাঁচিয়ে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা জাগাবে নিউজিল্যান্ড।

এখন শুধু রাত পোহানোর অপেক্ষা। হতে পারে আগামীকালই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজেদের সেরা জয়টা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আবার তাঁদের সেই স্বপ্নের আকাশে শঙ্কার কালো মেঘও জমতে পারে। ‘ক্রিকেট ইজ আ গ্রেট লেভেলার’ কথাটা যে এমনি এমনিই আসেনি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link