১০০ গড়ের শুভাগত হোম!

টেস্টে ঠিক একশো ব্যাটিং গড় নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৪টা রান। শেষ ইনিংসে এই চারটা রান করলেই এই কিংবদন্তির নামের পাশে আজীবন লিখা থাকতো একশো ব্যাটিং গড়। শেষ ইনিংসে শূন্য রান করে ফেরায় সেই কীর্তি হয়নি বলে ক্রিকেট দুনিয়ার আক্ষেপের কমতি নেই। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, শুভাগত হোম অন্তত একটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন ঠিক ১০০ ব্যটিং গড় নিয়েই।

ব্র্যাডম্যানের সাথে আমাদের শুভাগত হোমের তুলনা করছি বলে ভুল বুঝবেন না। সেই দুঃসাহস কেই বা দেখাবে। তবে এই গতকাল শেষ হওয়ার বিসিএলে (বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ) শুভাগত হোম ব্যাটিং করেছেন ঠিক ১০০.০০ গড়ে এই কথা সত্য। ডন ব্র্যাডম্যান যদি বেঁচে থাকতেন আর এই খবরটা যদি কোনভাবে তাঁর কানে যেতো তাহলে হয়তো শুভাগত হোমকে নিয়ে খানিকটা মজা করতেই পারতেন এই কিংবদন্তি।

সে যাইহোক, এই বিসিএলে শুভাগত হোম ছিলেন রীতিমত অবিশ্বাস্য। এমনকি শেষ ম্যাচে দুই ইনিংসেই করলেন সেঞ্চুরি। প্রথম ইনিংসে করলেন ১১৬। আর দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে আসলো অপরাজিত ১১৪ রানের ইনিংস। আবার বল হাতেও নিলেন তিন উইকেট। পুরো টুর্নামেন্টেই নিজের এই ফর্ম বজায় রেখেছিলেন শুভাগত হোম।

মোট চার ম্যাচে খেলে তার ব্যাট থেকে এসেছে একেবারে ৪০০ রান। এই আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এক ডাবল সেঞ্চুরি সহ ৪৬৮ রান করে তাঁর উপরে আছেন শুধু মোহাম্মদ মিঠুন। ওদিকে এই চার ম্যাচে শুভাগত সেঞ্চুরি করেছেন মোট তিনবার। সর্বোচ্চ ইনিংস এসেছে ১৫২ রানের। আর ব্যাটিং গড় ঠিক ১০০.০০।

শুধু এবছর নয়, গত কয়েকবছর ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পয়ারফর্মার এই শুভাগত হোম। ব্যাট হাতে নিয়মিত রান করে চলেছেন। যদিও জাতীয় দলের হয়ে শেষ খেলেছেন সেই ২০১৬ সালে। খুব বেশি সুযোগ পেয়েছেন তাও না। মাত্র ৮ টেস্ট, ৪ ওয়ানডে ও ৫ টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ার তাঁর। এই অল্প সময় খেলেও অনেক বেশি ট্রলের স্বীকার হয়েছেন।

তবুও ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসায় এক বিন্দু ছাড় দেননি। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন ক্রিকেটটা খেলে গিয়েছেন। ক্রিকেটটাকে উপভোগ করেছেন। তবে সেই তুলনায় সু্যোগ তো পাননিই বরং পেয়েছেন অনেক বেশি সমালোচনার তীর। তবুও ব্যাট কিংবা বল দুটোতেই পারফর্ম করে যাচ্ছেন নিজের মত করে।

ব্যাটিংয়ে তো প্রমাণ করে চলেছেনই। বল হাতেও ক্রিকেট পাড়ার অনেকের নজর কেড়েছেন। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট যারা নিয়ম করে দেখেন তাঁদের অনেকেই দাবি করেন এই মূহুর্তে দেশের অন্যতম সেরা টার্নার শুভাগত হোম। ফলে বলা যায় ব্যাটিং, বোলিং মিলে ক্রিকেটের এক দারুণ প্যাকেজ হতে পারতেন তিনি।

এছাড়া তাঁর দারুণ টেকনিক ও আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের জন্য আগেই পরিচিত ছিলেন। জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে থেকে পেস বোলিংয়ের বিপক্ষেও নিজেকে শক্তিশালী করে তুলেছেন। অনেকেই মনে করেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের এক প্যাকেজ হতে পারেন তিনি। যেকোন দলের ব্যালেন্স আনতেও এমন ক্রিকেটাররা বড় ভূমিকা রাখেন।

এছাড়া বল হিট করতে পারার ক্ষমতা তিনি অনেক আগেই দেখিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হবার আগেই এক ইনিংস খেলে নজর কেড়েছিলেন। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৩০ বলে খেলেছিলেন ৯০ রানের ইনিংস। এরপরের বছরই ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে।

তবে এতদিন ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করেও কখনো জাতীয় দলের বিবেচনায় আসেননা তিনি। তবুও শুধু ক্রিকেটটাকে উপভোগ করেন বলেই এখনো মনের মত করে খেলে যাচ্ছেন। কে তাঁকে নিয়ে ট্রল করলো, জাতীয় দলে ডাক পেলেন কিনা এসব যেন তাঁর কাছে এক তুচ্ছ ব্যাপার। তাঁর কাছে ক্রিকেটটাই সবচেয়ে বড় সত্য।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link