কখনো সামনের পায়ে ভর করে পুল, কখনো কাভার ড্রাইভ, স্ট্রেইট ড্রাইভ, কখনো আবার একটা স্কয়ার কাট। এইসবই যেনো লিটনের সৃষ্টি। এই শট গুলো আরো অনেকেই খেলেন। তবে লিটন যখন খেলেন তখন বোঝা যায় এটা আলাদা, অথেনটিক। যেনো ক্রিকেটের অপরূপ এই সৃষ্টি গুলো তাঁর কাছে শুধুই ছেলেখেলা। যেন একটু হাত ঘোরালেই হয়ে যায়।
সেজন্যই তো হার্শা ভোগলে, ইয়ান বিশপের মত লোকেরা তাঁর একটা ইনিংস দেখার জন্য তাকিয়ে থাকে। তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। কেননা তাঁরা জানেন লিটনরাই ক্রিকেটের শিল্পী। লিটনরাই তো ক্রিকেট নামক খেলাটার সুন্দরতম প্রদর্শন। আজ হ্যাগলি ওভালের সবুজ গালিচায় লিটন আঁকলেন তাঁর আরেকটি মাস্টারপিস। এমন চোখ জুড়ানো শিল্পের প্রশংসা করার মত শব্দ আমরা কোথায় খুঁজে পাই? শুধু চিৎকার করে বলি – লিটন, দ্য আর্টিস্ট।
লিটনকে নিয়ে স্বপ্নটা তো সেই অনেক আগে থেকেই। তবে প্রত্যাশার পারদ আকাশ ছুয়িয়ে তরুণ লিটনকে তিন ফরম্যাটে গুলিয়ে ফেলা হয়েছিল। তাঁর ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও কম নাড়াচাড়া হয়নি। যেনো একজন শিল্পীকে দিয়ে জোর করে আঁকানোর চেষ্টা, লিখানোর চেষ্টা। শিল্প কী আর জোর করে হয়। এতো মনের অনেক গভীরের ব্যাপার।
বাংলাদশ ক্রিকেটকে লিটন তাঁর দেনা চুকাচ্ছেন সুদে আসলে। লিটনের ক্রিকেট ক্যারিশমা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও ধারাবাহিকতা নিয়ে ছিল। রঙিন পোশাকে সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছিল না। টি-টোয়েন্টির দল থেকেও বাদ পড়েছেন। চারপাশে হাজারো সমালোচনা, ট্রল।
তবে চোখ, মুখ বন্ধ করে চট্টগ্রামের বাইশ গজে পড়েছিলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। তবে টেস্টে তাঁর এই ধারাবাহিকতাটা শুরু হয়েছিল গত বছর জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই। হারারতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৫ রানের ইনিংস।
এরপর চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ইনিংসে ১১৪ ও ৫৯ রান। এরপর ঢাকায় প্রথম ইনিংসে ৬ রানে ফেরার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫। এরপর সেই সাত সমুদ্র পারি দিয়ে ব্যাট করতে নামলেন মাউন্ট মঙ্গানুইতে। সেখানে দলের জয়ের ভীত করে দেয়া ৮৬ রানের ইনিংস। এরপর আজ ক্রাইস্টচার্চে আবার সেঞ্চুরি, ১০২ রান।
শেষ ৫ টেস্টে দুই সেঞ্চুরি ও তিন হাফ সেঞ্চুরি। যেন ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুড়ি ফোটাচ্ছেন। গতবছরও উইকেট কিপার ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড়ে রান করেছেন। টেস্টে সারাদিন কিপিং করে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে এসব ইনিংসগুলো যেনো একেকটা লড়াই, সংগ্রাম।
তবে গুনীজনরা বলছেন সব কিছুকে নাকি ছাপিয়ে গিয়েছে আজকের ইনিংস। অনেকদিন পর টেস্ট ক্রিকেট দেখলো এমন মনোমুগ্ধকর সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যান এই মানের ইনিংস খেলতে পারেন এটা ভেবেও আমরা অভিভূত হলাম।
টেস্টে এমন সব ইনিংস খেলে পায়ের নিচে মাটিটা ফিরে পাচ্ছেন। রান করার আত্মবিশ্বাস তাঁর চোখে-মুখে স্পষ্ট। এই ক্ষুধাটা সময়ের সাথে অন্য ফরম্যাট গুলোতেও ছড়িয়ে পড়ুক। বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে টপ অর্ডারে তাঁর মত একজন ব্যাটারেরই অভাব বাংলাদেশের। হয়তো সময়ের সাথে সেই আশাও পূরণ করবেন। শিল্প তো আর বলে কয়ে হয় না।
হার্শা ভোগলে লিটনকে নিয়ে বাজি ধরেছিলেন। লিটনের ক্রিকেট মেধা, ক্লাস দেখে। আমাদের আর ধরতে ভয় কিসের। ক্ল্যাসিক লিটন দাসের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। আরো লাবন্যময় হয়ে উঠুক লিটনের ব্যাট।