একটি টেকনোলজিকাল বিতর্ক

প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে। পাথড় যুগ থেকে তামা, রুপা, স্বর্ণ আরো কত যুগ এলো। আবার ঠিক সময় করে সময়ের তাগিদেই হারিয়ে গেলো কালের গর্ভে। বর্তমান যুগটা আধুনিক যুগ। কত রকমের তথ্য প্রযুক্তির বিষ্ফোরণ হচ্ছে দিনকে দিন। সেই প্রযুক্তি ছোঁয়া লেগেছে ক্রিকেট অঙ্গনে।

মানুষের ভুল হয়, আম্পায়ার একজন মানুষ। তাই তাঁর ভুলের খেসারত যাতে না দিতে হয় সে জন্যেই ক্রিকেটে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি। সময়ের সাথে উন্নত প্রযুক্তির সংযুক্তির পালায় নতুন করেই যুক্ত হয়েছে ‘ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম’ যা সংক্ষেপে অত্যাধিক পরিচিত ‘ডিআরএস’ নামে।

কিন্তু আদৌ কি প্রযুক্তি একেবারে নির্ভুল? বোধহয় না। সেই উদাহরণের দেখা তো মিলেই গেলো দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মধ্যকার টেস্ট সিরিজের শেষ টেস্ট ম্যাচে। স্ট্যাম্প মাইকে নিজের রাগ ধরে রাখতে না পেরে খানিক কটু কথা শুনিয়ে দিলেন ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বাদ গেলেন না তাঁর দুই সতীর্থ লোকেশ রাহুল ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ক্রিকেত বিশ্ব এমন কাণ্ডে মোটামুটি নানানরকমের আলোচনা ও পর্যালোচনায় মগ্ন হয়ে গিয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার তৃতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিনে। ২১তম ওভারে বল করছিলেন ভারতের সবচেয়ে অভিজ্ঞ স্পিন বোলারদের একজন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তাঁর করা একটি ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে পরাস্ত হন প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগার। বল লাগে তাঁর প্যাডে এবং হাঁটুর বেশ খানিকটা নিচে। বলের লাইন লেন্থ সবকিছু পর্যালোচনা করে মাঠে থাকা আম্পায়ার তাঁর সিধান্ত জানিয়ে দিলেন। সেটা ছিলো আউট। প্রযুক্তি সুবিধা লুফে নিলেন ডিন এলগার। নিয়ে নিলেন ডিআরএস।

সেখানে ‘হকআই’ নামক সফটওয়্যারে কল্যাণে এবং ব্রডকাস্টারদের দেওয়া ভিডিও চিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানানো হয় যে সত্যিকার অর্থেই সিধান্তটা কোন পক্ষে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু লাইন, লেন্থ সবকিছু যথাযথ থাকার পরও বলটি মিস করে স্ট্যাম্পের উপরিভাগ।

ব্যাস, ঘটনা এতটুকুতেই শেষ হতে পারতো। ভারতীয় খেলোয়াড়া সিধান্ত মেনে নিয়ে ম্যাচটা চালিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু সেই একটি উইকেট পরিবর্তন করে দিতে পারতো ম্যাচের গতিপথ এমনকি সেই একটি উইকেট ভারতীয় ক্রিকেট দলকে উপহার দিতে পারতো একটি মোমেন্টাম। যেখান থেকে সিরিজ এবং দু’টোই জেতার চেষ্টা চালাতে পারতো ভারত।

এত সব সমীকরণ ও মাঠে দুই দলের খেলোয়াড়দের মাঝে ছড়িয়ে যাওয়া উত্তাপের ফলশ্রুতিতেই বিরাট দক্ষিণ আফ্রিকান ব্রডকাস্টার সুপার স্পোর্টের উদ্দেশ্যে স্ট্যাম্প মাইকে নিজের মনোভাব অভিব্যক্ত করেন। তবে ভারতীয় সাবেক বিশ্বকাপ জয়ী ব্যাটার গৌতম গম্ভীর বিরাটের এমন আচরণকে ‘অপরিপক্কতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘বিরাট কোহলির ওরকম করে স্ট্যাম্পের সামনে এসে রাগ ঝাড়ার বিষয়টা বেশ খারাপ এবং অপরিপক্কতার সামিল। একজন আন্তর্জাতিক অধিনায়ক, অন্তত একজন ভারতীয় অধিনায়কের কাছ থেকে এমন ঘটনা কখনোই কাম্য নয়।’

ক্রিকেট ‘ভদ্রলোকের খেলা’ বলেই বেশি সমাদৃত হয়ে আসছে একেবারে শুরু থেকেই। সেই খেলায় আসলেই এমন কার্যকলাপ কারই কাম্য নয়। কিন্তু বিরাট এ বিষয়ে খানিক ভিন্নমত প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমি আমাদের করা কাজটি ঠিক না বেঠিক সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। মাঠে কি হয় বা না হয় তা আমরা বেশ ভাল করেই জানি। মাঠের বাইরে থাকা মানুষজন বিস্তারিত জানেন না। আমরা সেখানে মোমেন্টামটা পেয়ে গেলে আরো তিনটি উইকেট নিয়ে নিতে পারলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো।’

শেষমেশ ম্যাচটি হেরে যায় ভারত। ২-১ ব্যবধানে সিরিজটাও হেরে যায়। যেকোন খেলায় জয়টাই মুখ্য বিষয়। প্রত্যেকটি খেলোয়াড়, প্রত্যেকটি দল চায় যেন তাঁরা জিততে পারে অংশ নেওয়া প্রতিযোগিতা কিংবা ম্যাচ। অনেক সময় নিজেদেরকে সামলে রাখাও যায় না খেলার মাঠে। এমন ঘটনার নজির তো কম নেই। তবুও যেখানে প্রযুক্তিও ফেল করে যায় সেখানে নিয়তির হাতেই সব ছেড়ে দিয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে যাওয়াই তো একজন সত্যিকারের লড়াকু খেলোয়াড়ের মনোভাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link