খেলায় তো হারজিত থাকেই, ক্রিকেটও বা এর ব্যতিক্রম হয় কি করে! আর সেই আধিপত্ত দেখানোর লড়াইয়ের বাইশ গড়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেট খেলায় ম্যাচের ফলাফলে প্রভাব না ফেলতে পারলে আসলে সেই পারফর্মেন্সের খুব একটা গুরুত্ব থাকে না। তাই প্রত্যেকটা খেলোয়াড় চেষ্টা করে জয়ের জন্যে অবদান রাখতে।
দলগত খেলা ক্রিকেটে এমন অনেক দলগত পারফর্মেন্সের নজির মিলবে যা কিনা আজ অবধি ক্রিকেটপ্রেমীদের মনের আলাদা একটা জায়গা করে রেখেছে। খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স ছাপিয়ে দলগত পারফর্মেন্সগুলোই মনে গেঁথে যায়। রানের বিচারে ওয়ানডেতে বিশাল সব জয় গুলোও হয়ত ক্রিকেট প্রেমীরা ভুলতে চাইবে না। অথবা জানতে চাইবে নতুন করে। দু’টোই হবে আজ। রোমন্থন হবে স্মৃতি।
- নিউজিল্যান্ড বনাম আয়ারল্যান্ড, ২০০৮
রান বিবেচনায় সবচেয়ে বড় জয়টা এসেছিলো নিউজিল্যান্ডের পক্ষে। ২০০৮ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৯০ রানের বিশাল জয় তুলে নিয়েছিল ব্ল্যাকক্যাপসরা। জেমস মার্শাল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ঝোড়ো দেড়শ ছাড়ানো রানের উপর ভর করে ৪০২ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। খরচ হয় কেবল দুই উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে কিউই বোলারদের প্রতিহত করার কোন পন্থাই যেন জানা ছিলো না আইরিশ ব্যাটারদের। মাত্র ২৮.৪ ওভার খেলে ১১২ রানে গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। যার ফলস্বরুপ ইতিহাসের সেরা ওয়ানডে জয়ের একটি লেখা হয়ে যায় ব্ল্যাকক্যাপসদের খাতায়।
- অস্ট্রেলিয়া বনাম আফগানিস্তান, ২০১৫
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্বিতীয় বড় রান ব্যবধানে জয়ের পাশাপাশি বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বোচ্চ রান ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার দখলে। ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া বিশাল ব্যবধানে জিতেছিলো আফগানিস্তানের বিপক্ষে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়া স্কোরবোর্ডে জড়ো করে ৪১৭ রান।
বিনিময়ে তাঁদের ছয়টি উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয়েছিলো আফগানিস্তান। ডেভিড ওয়ার্নার সেই ম্যাচে করেছিলেন ১৭৮ রান ১৩৩ বল খেলে। এত বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অজিদের ঘরের মাঠে সুবিধা করতে না পেরে মাত্র ১৪২ রানে অল আউট হয় আফগানিস্তান ইনিংসের প্রায় ১২ ওভার বাকি থাকতেই। এতেই রেকর্ড গড়া জয়ের দেখা পায় অস্ট্রেলিয়া।
- দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম জিম্বাবুয়ে, ২০১০
জিম্বাবুয়েকে আতিথিয়তা দিয়ে তাঁদের বিপক্ষেই রেকর্ড গড়া জয় তুলে নিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১০ সালে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এবি ডি ভিলিয়ার্সের ও জে পি ডুমিনির ব্যাটের উপর ভর করে ৪০০ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় প্রোটিয়ারা।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দারুণ পেস আক্রমণের সামনে নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। তাঁদের ইনিংসের ইতি ঘটে মাত্র ১২৭ রানে। ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আসে ২৭২ রানের বিশাল বড় জয়।
- দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম শ্রীলঙ্কা, ২০১২
ঘরের মাঠে অতিথিদের ডেকে তাঁদের বিপক্ষে রেকর্ড গড়াটাকে হয়ত দক্ষিণ আফ্রিকা শিল্পের পর্যায় নিয়ে যেতে চায়। জিম্বাবুয়ের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও রেকর্ড গড়া জয় তুলে নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, সেই আবার নিজেদের ঘরের মাঠেই ২০১২ সালে। লঙ্কানদের বিপক্ষে ব্যবধান ছিলো ২৫৮ রানের।
প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৩০১ রান খরচা হয়েছে আট উইকেট। লাসিথ মালিঙ্গার ফাইফারের পরও হাশিম আমলার শতকে রান ৩০০ ছাড়ায় প্রোটিয়াদের। দ্বিতীয় ইনিংসে লংকানদের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। মাত্র ৪৩ রানেই গুটিয়ে যায় লংকান ব্যাটিং অর্ডার। মাত্র ২০.১ ওভার খেলতে পেরেছিলো শ্রীলঙ্কান ব্যাটাররা।
- ভারত বনাম বারমুডা, ২০০৭
ক্রিকেট পরাশক্তি ভারতের বড় রান ব্যবধানের একটি জয় থাকবে না তা মেনে নেওয়া কষ্টকর। তবে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিলো বাকি সবার থেকে বেশ খানিকটা দূর্বল। বিশ্বক্রিকেটে এখন আর সচারচর দেখা মেলে না এমন এক দেশ বারমুডা। তাঁদের বিপক্ষেই ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ২৫৭ রানের বড় এক জয় পেয়েছিল ভারত।
প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে স্কোরবোর্ডে ৪১৩ রান তুলতে সক্ষম হয় ভারত। বীরেন্দ্র শেবাগের শতক ও সৌরভ গাঙ্গুলির ৮৯ রান তাঁদেরকে এই বিশাল রানের পাহাড় গড়তে সহয়তা করে। জবাবে বারমুডা ৪৩.১ ওভার পর্যন্ত খেলা টেনে নিয়ে গেলেও রান আর খুব বেশি বাড়াতে পারেনি। যার ফলশ্রুতিতে ১৫৬ রানে অল আউট হয় বারমুডা। আর বিশ্বকাপ মঞ্চের দ্বিতীয় বড় জয় লেখা হয়ে থাকে ভারতের নামের পাশে।