এক টেস্টের বিস্ময়/আক্ষেপ

জানুয়ারি ১৫, ১৯৯৬। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের তৃতীয় দিনে জিম্বাবুয়ে তখন বোলিংয়ে। টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার এই দুই দলের লড়াই। প্রথম দুই দিনে বৃষ্টি বাঁধায় নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৫৪ রান। ওই টেস্টে নিউজিল্যান্ডের হয়ে অভিষিক্ত হন লেগ স্পিনার গ্রেগ লাভরিজ। ওইদিন ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৪ রান করার পরই ইনজুরির কারণে ওই টেস্ট থেকে ছিটকে যান লাভরিজ। সেটিই ছিলো তাঁর ক্যারিয়ারের একমাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

মাত্র ৩০ মিনিটেরও কম সময় খেলেছিলেন তিনি! আর ওই ১৫ জানুয়ারি ছিলো লাভরিজের জন্মদিন! নিজের জন্মদিনে ক্যারিয়ারে প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠে নেমে ওইদিনই শেষ হয়ে যায় তাঁর স্বপ্নের ক্যারিয়ার।

সেই ম্যাচের কথা স্মরণ করে লাভরিজ বলেন, ‘আমি নম্বর নাইন হিসেবে ব্যাট করতে যাই। ২০ মিনিটের মতো ব্যাট করেছিলাম। আমি একটুও নার্ভাস ছিলাম না। হেনরি ওলোঙ্গাকে আমি একটা বাউন্ডারি মারি। পরের বলটা সে শর্টে ফেলে আর সেটি আমার আঙুলে আঘাত হানে।’

অস্বস্তিটা শুরু হয় তখন থেকেই। স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘আমি বেশ অস্বস্থি বোধ করছিলাম ব্যাট ধরতে। আমি এক্স-রে করতে যাওয়ার পর তারা শুধু উপরের আঙুলটাই দেখে এবং আমাকে জানায় যে সবকিছুই ঠিকাছে। আমি পরের দিন অনুশীলনে বল করতে গেলাম, কিন্তু পারলাম না। খুব খারাপ লাগছিলো, পরের দিন সার্জারি করলাম। আঙুলের জয়েন্টগুলো ছিঁড়ে গিয়েছিলো। শেষ, ওখানেই সব শেষ!’

ওই টেস্টের আগে বেশ দুর্দান্ত পারফরম করেই জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছিলেন লাভরিজ। নেটেও নিজের স্পিন ভেলকিতে সবাইকে মুগ্ধ করেছিলেন। তবে জিম্বাবুয়ের ফাস্ট বোলার হেনরি ওলোঙ্গার এক শর্ট বলই ক্যারিয়ারে ইতি টেনে দেয় এই স্পিনারের। তবে ওই টেস্ট শেষ পর্যন্ত ড্র হয়।

লাভরিজ বলেন, ‘আমি ১৯৯৪-৯৫ এর শেষে আমি একটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলাম এবং নিউজিল্যান্ডের স্কোয়াডেও ছিলাম। অস্ট্রেলিয়া অ্যাকাডেমির বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড এ দলের হয়ে আমি বেশ ভালো বোলিং করেছিলাম। আমি নেটেও বেশ ভালো করেছিলাম। মার্টিন ক্রোকে বেশ কয়েকবার আউট করি। দিপক প্যাটেলের ইনজুরিতে তাই নিউজিল্যান্ড স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছিলাম। এরপর আঙুলের ইনজুরিতে ছিটকে গেলাম।’

ওই ইনজুরির পর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের পক্ষ থেকে লাভরিজের উন্নতির জন্য পাঠানো হয় অস্ট্রেলিয়ায়। লাভরিজ বলেন, ‘আমার জন্য ভয়ানক ছিলো। যদিও আমি শক্তি পাচ্ছিলাম আঙুলে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট আমাকে অ্যাডিলেডে টেরি জেনারের কাছে পাঠালো (শেন ওয়ার্নের মেন্টর)। তিনি আমাকে বললেন তুমি ওয়ার্নের মতো বল করতে পারবে। সে আমার অ্যাকশন পরিবর্তন করলো, এরপর আমি আর স্বরুপে ফিরতে পারিনি।’

এরপর ক্যামব্রিজ গ্র‍্যাজুয়েট কলেজ থেকে তিনি স্কলারশিপ পান। ২০০২-০৩ মৌসুমে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিকসের হয়ে তিনি আবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফিরেন। এছাড়া তিনি দক্ষিণ আফ্রিকান ক্লাবের হয়েও ক্রিকেট খেলেন। ক্রিকেট ছাড়ার পর তিনি বব জোনস প্রোপার্টিতে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পান।

বর্তমানে তিনি নিউজিল্যান্ডের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত।  কিন্তু, সম্পদ দিয়ে কি আর সব সুখ কেনা যায়! তাই তো কোনোদিনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করার সুযোগই পেলেন না লাভরিজ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link