একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। বলুন তো প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে এক ম্যাচে চারশ রান ও দশ উইকেট নেওয়া একমাত্র খেলোয়াড় কে? মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেলো? একটু ঘেটে দেখতে হবে অন্তর্জাল দুনিয়া? না! অত ঝক্কি পোহাতে হবে না। সবুর করুণ, বলছি।
তার আগে এক সম্ভাবনার অবহেলিত হওয়ার গল্প বলি। পাকিস্তানের করাচি শহরের একটি কিশোর। ব্যাট আর বল হাতে স্কুল টুর্নামেন্টে আলো ছড়াচ্ছেন। সেই আলো নজর এড়ানো দায়। ব্যাটিং, বোলিং দুটো ক্ষেত্রেই সমান পারদর্শী করাচির স্কুলবালক আফতাব বালুচ।
খুব একটা দেরি হলো না তাঁর পাকিস্তানের প্রথম শ্রেনি ক্রিকেটে পদার্পণের। ১৬ বছর বয়সে ১৯৬৯ সালে তিনি সুযোগ পান। সেখানেও নিজের পারফর্মেন্সর দ্যুতি ছড়িয়ে জায়গা করে নেন পাকিস্তান জাতীয় টেস্ট দলে। মাত্র ১৬ বছর ২২১ দিন বয়সেই পেয়ে যান মর্যাদার টেস্ট ক্যাপ।
বর্তমান ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ষষ্ঠ কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট অভিষেক হয়েছিলো আফতাব বালুচের। তাঁর অভিষেকটা হয়েছিলো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকায় সাদা জার্সিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন আফতাব।
কি অদ্ভুত এক স্বপ্নময় যাত্রা। এত অল্প বয়সেই কিনা পাকিস্তানের দূরন্ত এক একাদশে নিজের জায়গাটা করে নিলেন তিনি। নিজের ভেতরে থাকা ক্রিকেটীয় সত্ত্বার স্ফুলিঙ্গ বেশ ভালভাবেই দেখাতে পেরেছিলেন কিশোর আফতাব।
১৯৬৯ সালের আট নভেম্বর শুরু হওয়া টেস্ট ম্যাচটির একটি মাত্র ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন কিশোর আফতাব বালুচ। ড্র হওয়া সেই টেস্টে করেছিলেন কেবল ২৫ রান। ডানহাতে অফব্রেক বোলিং করতে পারা
কিশোরের হাতে বল তুলে দেওয়াটা বোধহয় প্রয়োজন পড়েনি। তাই উইকেটের ঘরটা খালি। তারপর কোন এক অদ্ভুত কারণে তিনি বাদ পড়লেন জাতীয় দল থেকে। পড়াটাও নেহাৎ স্বাভাবিকই ছিলো। বাঘা-বাঘা খেলোয়াড়দের ভিড়ে একজন কিশোরের বাদ পড়া অবধারিতই ছিলো।
কিন্তু ষষ্ঠ কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট অভিষেক হলেও আফতাব বালুচ সুপরিচিত ছিলেন অন্য এক রেকর্ডের জন্যে। তিনি ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে, পাকিস্তান ঘরোয়া লিগে এক ইনিংসে করেছিলেন ৪২৮ রান। যা কিনা প্রথম শ্রেনী ক্রিকেটে এখন অবধি সপ্তম সর্বোচ্চ রান। শুধু রান না বল হাতেও সেই ম্যাচে ছিলেন তিনি বিধ্বংসী। দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছিলেন দশ উইকেট। ঠিক এখানটায় তিনি বনে গেলেন অনন্য ও অদ্বিতীয়।
তবে জাতীয় দলে ছিলেন তিনি অবহেলিত। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টটি তিনি খেলেছিলেন ১৯৭৫ সালে পাকিস্তানের লাহোরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে দেখা পেয়েছিলেন অর্ধশতকের। সেখানেই থেমে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।
আর আজ থেমে গেলো তাঁর জীবনের অধ্যায়। ৬৮ বছর বয়সে জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি পাড়ি জমালেন পরলোকে। প্রথম শ্রেনী ক্রিকেটে যার নামের পাশে রয়েছে প্রায় নয় হাজার রান ও ২২৩টি উইকেট সেই অবহেলিত ক্রিকেটারকে নিয়ে লেখা হবে এপিটাফ।
পাকিস্তান জাতীয় দলে তিনি খুব একটা সুযোগ না পেলেও দেশের ক্রিকেটে অবদান রেখেছিলেন ঠিকই। অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও জুনিয়র ক্রিকেটার নির্বাচকও ছিলেন। তাছাড়া সিন্ধু প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে যুক্ত থাকাকালীন জীবনে অপ্রতিরোধ্য গুগলিতে আউট হয়ে গেলেন অনন্য রেকর্ডের মালিক আফতাব বালুচ।