আকমল আর্তনাদ

এক সময় ছিলেন সকলের মধ্যমণি। আবার সময়ের পরিক্রমায় হয়েছেন সকলের চোখের কাঁটা। এই দুইটা সময়ই পার করেছেন পাকিস্তানের উইকেট কিপার ব্যাটার উমর আকমল। আলো ঝলমলে এক ক্যারিয়ারের আভাস দিয়ে কেমন যেন মিলিয়ে যেতে শুরু করে নিজেকে হারিয়েই ফেললেন তিনি। কতশত বিতর্কে জড়িয়ে ফেললেন নিজেকে। তারপর অবহেলিত, অবজ্ঞার পাত্রে পরিণত হন উমরা আকমাল।

পাকিস্তান ক্রিকেট দারুণ এক সময় পার করছে বর্তমান সময়ে। দলের প্রতিটা সদস্য উৎফুল্ল। তরুণ খেলোয়াড়দের উপর ভর করেই দল পাচ্ছে সাফল্য। স্বপ্ন দেখছে অপ্রতিরোধ্য এক দল হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে। গত বছর তো তাই-ই ছিলো দল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।

এই তারুণ্যের জয়গান আজ হচ্ছে সমগ্র পাকিস্তান জুড়েই সেই জয়গানে একসময় উমর আকমল থাকতেন। সেটা অবশ্য তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে। তাঁর ব্যাটিংয়ের নান্দনিকতায় মুগ্ধ হওয়া ভক্তের সংখ্যা তো কম নয়।

২০০৯ সালে অভিষেক টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই আকমল তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরি। তাঁকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলো পাকিস্তানের সমর্থকেরা। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ওয়ানডেতেও নিয়মিত রান করতেন তিনি। উইকেটের পেছনেও ধীরে ধীরে হয়ে যাচ্ছিলেন আস্থাভাজন।

ছন্দপতন, মুদ্রার অন্যপিঠটাও দেখতে শুরু করলেন উমর আকমল। তারপর হুট করেই সবাই যেন ক্ষেপে যেতে লাগলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারের বিরুদ্ধে।

নিন্দা, সমালোচনায় ভেসে যেতে থাকেন উমর আকমল। বিতর্কে জর্জরিত হয়ে পড়েন। শুধু যে একটি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি তা নয়। উশৃঙ্খলাকে আপন করে নিয়ে দলের নীতি বিরোধি কাজে লিপ্ত হতে শুরু করেন।

নিজের উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের লাগাম যেন নিজেই টেনে ধরেন উমর আকমল। সেই সাথে যুক্ত হয় ইনজুরি। মাঠের মধ্যে আম্পায়ারদের সাথে বাকবিতণ্ডা যেন নিয়মিত এক কান্ডে পরিণত করে ফেলেন তিনি।

নিজের খ্যাতির অপব্যবহার করে ট্রাফিক পুলিশদের সাথে ঝামেলা করা থেকে শুরু করে থিয়েটারে গানের পুন:রায় চালানোর মতো অহেতুক সব আবদার করে নিছক সব বিতর্কের অংশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন খবরের পাতায়। এমনকি দলের কারফিউ ভেঙ্গে খ্যাতিমান তারকা গায়ক অ্যাকনের কন্সার্ট দেখতে যাওয়ার মতো কাজও করেছিলেন তিনি।

এসবকিছু তাঁর পারফর্মেন্সের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে শুরু করে। শুধু তাই নয় তিনি সবচেয়ে বড় যেই ভুলটা করে বসেন তা হচ্ছে ফিক্সিং এর প্রস্তাবের বিষয় চেপে যাওয়া। তাও একবার নয় দু’বার। পাকিস্তান ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় কারণ এই ফিক্সিং।

এর কবলে পড়েই তো কত প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা হারিয়ে গেছেন কালে গর্ভে। তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ আসিফ ও সালমান বাটরা অন্যতম। সেই স্পর্শকাতর এক বিষয় চেপে গিয়ে ২০২০ সালে ১২ মাসের এক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হন উমর আকমল।

শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, তাঁকে গুনতে হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ রুপি অর্থদন্ডও। সেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পাকিস্তান সুপার লিগে আবার ফিরছেন উমর আকমল। কোয়েট্টা গ্ল্যাডিয়েটর্স তাঁকে দলে ভিরেয়েছে। যদিও প্রথম ম্যাচে সুযোগ পাননি উমর আকমল।

সেই ২০০৯ সালের দিকে উদীয়মান উমর আকমলকে ফিরে পেতে অপেক্ষমান গুটিকতক সমর্থক নিশ্চয়ই চাইবেন ফিরে আসুক উমর আকমল। তাঁর হারানো ফর্ম ফিরে পেয়ে যায়গা করে নেক পাকিস্তান জাতীয় দলে।

২০১৯ এর পর জাতীয় দলে না খেলা উমর আকমল পিএসএল এর একজন পরীক্ষিত পারফর্মার। তিনি ৩২ টি ম্যাচ খেলে করেছেন ৮৩৩ রান।

প্রায় ১৩৭ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা উমর আকমল সাতটি হাফ সেঞ্চুরিও করেছেন। সুতরাং তাঁর ভক্ত সমর্থকরা প্রত্যাশা করতেই পারেন এই টুর্নামেন্ট দিয়েই আকমল ফিরবেন তাঁর আপন ছন্দে। নিজের ‘ব্যাড বয়’ ইমেজ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে হবেন নতুন এক উমর আকমল। সময় বলে দেবে উমর আকমল ঠিক কোন পথে হাটবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link