‘ভিন্নধর্মী’ ম্যাচ উইনার

স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স, গর্ডন গ্রিনিজ, ক্লাইভ লয়েড, ল্যান্স গিভস, অ্যান্ডি রবার্টস, ভিভ রিচার্ডসন, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার, ডেসমন্ড হেইন্স, ম্যালকম মার্শাল এই এক একটা নাম যেন এক একটা ইতিহাস। তাদের অধীনে ক্যারিবীয় ক্রিকেট পার করে আক্ষরিক অর্থেই সোনালি যুগ। সেই সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে মনে করা হয় ইতিহাসের সেরা ওয়ানডে দল।

স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স, গর্ডন গ্রিনিজ, ক্লাইভ লয়েড, ল্যান্স গিভস, অ্যান্ডি রবার্টস, ভিভ রিচার্ডসন, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার, ডেসমন্ড হেইন্স, ম্যালকম মার্শাল এই এক একটা নাম যেন এক একটা ইতিহাস। তাদের অধীনে ক্যারিবীয় ক্রিকেট পার করে আক্ষরিক অর্থেই সোনালি যুগ। সেই সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে মনে করা হয় ইতিহাসের সেরা ওয়ানডে দল।

১৯৭৫ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, ১৯৭৯-এ এসেও আবারো চ্যাম্পিয়ন ক্লাইভ লয়েডের দল। ১৯৮৩ সালে হ্যাট্রিক শিরোপার হাতছানি। তবে ফাইনালে এসে ভারতের কাছে হেরে রানার্স আপেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আরেকটা পরিসংখ্যান দিলে আরো কিছুটা ধারনা পাওয়া যাবে, ১৯৮৪ সালে টানা ১১ টি টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়ার টানা ৬ টেস্ট জয়ের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। যে রেকর্ড অক্ষত ছিল দীর্ঘ ৬৪ বছর। তখনকার সময় কোন দল দাঁড়াতেই পারত না ক্যারিবীয়দের সামনে। বিশেষ করে তাদের ভয়ংকর পেস বোলিং ইউনিট।

পুরো এক দশক ক্রিকেট বিশ্বে রাজত্ব করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই দল কিনা ১৯৭৯ থেকে ২০১২ – মাঝের এই ৩৩ বছর কোন বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে পারেনি। অবশেষে ২০১২ সালে মারলন সামুয়েলস যা করে দেখিয়েছেন তা করতে পারেনি ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারা কিংবা কোর্টনি ওয়ালস, কার্টলি অ্যামব্রোসদের মত কিংবদন্তিরাও। বলা যেতে একক নৈপুণ্যে ২০১২ তে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিয়েছে মারলন সামুয়েলস।

২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে কলম্বোর প্রেমাদাসাতে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়েছিল ড্যারেন সামির ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফাইনালে টসে জিতে ব্যাটিং এ নেমেছিল ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডসদের উত্তরসূরিরা। রানের না খুলতেই আউট হোন ওপেনার জনসন চার্লস। ১৪ রানের মাথায় গেইলের উইকেট হারালে শুরুতেই চাপে পরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর চলে স্যামুয়েলস শো।

৫৬ বলে ৭৮ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংসের উপর ভর করে লড়াই করার মত পুঁজি পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৩৬ রান তুলেছিল ক্যারিবীয়রা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে শ্রীলঙ্কা। সেদিন মাত্র ১০১ রানে ৮ বল বাকি থাকতে অল আউট হয়ে যায়।

প্রেমাদাসার হাজার হাজার লঙ্কান সমর্থকদের হৃদয় ভেঙেছিলেন একজন মারলন স্যামুয়েলস। বলতে গেলে একাই বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ক্যারিবীয়দের। ৩৩ বছর পর আবারো বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে এক সময়ের প্রতাপশালী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে ম্যাচের ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছিলেন মারলন স্যামুয়েলস।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনালে কলাকাতার ইডেন গার্ডেনস এক রোমাঞ্চকর ফাইনাল ম্যাচ উপহার দিয়েছিল। শিরোপার লড়াইয়ে সে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ড। উত্তেজনার পারাদ ঠাসা ম্যাচে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলা গড়িয়েছিল। শেষ ওভারে ম্যাচ জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ১৯ রান।

বেন স্টোকসের করা সেই ওভারের টানা চার ছয়ে ক্যারিবীয়দের শিরোপা-উল্লাসে ভাসিয়েছিল কার্লোস ব্রাথওয়েট। তখন নন স্ট্রাইকে ৬৬ বলে ৮৫ রান নিয়ে ঠাই দাঁড়িয়েছিলেন মারলন স্যামুয়েলস। টানা চার ছয় মেরে সব আলো সেদিন কেড়ে নিয়েছিলেন ব্রাথওয়েট। তবে সে ম্যাচে উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন ওই মারলন স্যামুয়েলস। তাই ম্যাচ সেরার পুরষ্কার ওঠে তাঁর হাতেই।

দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালের ম্যাচের ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হওয়া চাট্টিখানি কথা না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শিরোপা জয়ী দুই ম্যাচের দুটিতেই ম্যাচ সেরা হওয়া সেই মারলন স্যামুয়েলস, তিনিই তো সত্যিকারের ম্যাচ উইনার। সেটা তাঁকে নিয়ে শত সমালোচনা থাকার পরও সত্য!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link