ক্রীড়া প্রেমীদের চোখটা এখন টেলিভিশনের পর্দায়। বিশেষ করে ক্রিকেট প্রেমীদের। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর হিসেবেই বিবেচিত হয় ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। সেই লিগের মেগা অকশন শুরু হয়েছে। কে কোন দলে যাচ্ছেন, কার দাম কত উঠছে তা জানার আগ্রহ রয়েছে কম বেশি সবার মাঝেই। আইপিএলের নিলামও বিনোদনের এক চূড়ান্ত মাধ্যম।
তবে আইপিএল নিলামের প্রথম দিনের সবচেয়ে অবাক করা বিষয় ঘটেছে। বেশ বাঘা বাঘা খেলোয়াড়রা রয়ে গিয়েছেন অবিক্রিত। সেই তালিকায় বাংলাদেশ তথা বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান যেমন রয়েছেন ঠিক তেমনি রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ ব্যাটার স্টিভ স্মিথ।
তাঁদের সাথে যুক্ত হয়েছে আরো তিনজন হাই প্রোফাইল খেলোয়াড় সুরেশ রায়না ও দক্ষিণ আফ্রিকান ডেভিড মিলার। কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় বর্তমান আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী রয়ে যান অবিক্রিত।
এদের সবারই বেস প্রাইজ ছিলো দুই কোটি রুপি। তবে সেই বেস প্রাইজেও তাদেরকে দলে ভেড়ানোর আগ্রহ দেখায়নি কোন ফ্রাঞ্চাইজি। অথচ নিলামের প্রথম দিনে যে অর্থের চোখ রাঙানি দেখায়নি আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজিগুলো তা কিন্তু নয়। প্রায় প্রতিটি খেলোয়াড় বিক্রি হয়েছেন তাঁদের বেস প্রাইজেরও বেশি দামে।
সেদিক থেকে সবার উপরে রয়েছে ভারতীয় তরুণ ব্যাটার শ্রেয়াস আইয়ার। মাত্র দুই কোটি রুপি বেস প্রাইজ থেকে তিনি শেষমেশ বিক্রি হয়েছেন ১২.২৫ কোটিতে। দারুণ এক লড়াই শেষে তাঁকে দলে নিতে সক্ষম হয় কোলকাতা নাইট রাইডার্স।
অপরদিকে তরুণ তুর্কি ঈশান কিশানকে ১৫ কোটি ২৫ লক্ষ্য রুপিতে দলে নিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। গত মৌসুমের ‘পার্পেল ক্যাপ’ বিজেতা হার্শাল প্যাটেলকে ১০.৭৫ কোটিতে পুনরায় নিজেদের ডেরায় নিয়ে এসেছে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। নিজেদের সেরা পারফর্মারকে দলে ভেড়াতে পেরে বেশ উৎফুল্ল দেখা যায় ব্যাঙ্গালুরুর কর্মকর্তাদের। এছাড়া গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গারও বিক্রয় মূল্য ছাড়িয়েছে ১০ কোটির কোটা।
হাসারাঙ্গার পেছনে নিজেদের অর্থ ব্যয়ে কার্পণ্য করেনি রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। দিনের তৃতীয় সর্বোচ্চ বিড করে লঙ্কান এই লেগ স্পিন অলরাউন্ডারকে দলে নিয়েছে এখন পর্যন্ত শিরোপার স্বাদ না পাওয়া ব্যাঙ্গালুরু। এবার তাঁরা হয়ত পণ করেই নেমেছেন দল ঘোছাবেন শিরোপা জয়ের জন্যে। নিজেদের পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছে ফ্রাঞ্চাইজিটি।
তবে এখন অবধি অবিক্রিত থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে মোহাম্মদ নবী ও সাকিব আল হাসান এই দু’টি নাম বেশ অবাক করেছে হয়ত দর্শকদের। তাঁদের মতো কার্যকরী দুইজন অলরাউন্ডারের দল না পাওয়া বেশ হতাশাজনক। এই দুইজন খেলোয়াড় রয়েছেন ফর্মেও।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে টানা পাঁচ ম্যাচে ম্যাচ সেরা হয়ে রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন সাকিব। ব্যাটে-বলে সমান তালে পারফর্ম করছেন তিনি। হয়ত তাঁর সমর্থকেরা প্রত্যাশা করেছিলেন তিনি হয়ত একটু চড়া দামেই বিক্রি হবেন।
তবে সাকিবকে চড়া দামে না কেনার পেছনেও যুক্তি দাঁড়া করানো যায়। আইপিএল চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের সূচিতে দুইটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ রয়েছে। একটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অন্যটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। অতএব সাকিবের সার্ভিস পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে পাওয়া যাবেনা বলেই হয়ত তিনি দল পাননি। আর অন্যদিকে মোহাম্মদ নবীর দল না পাওয়ার পেছনে শক্তপোক্ত কোন যুক্তি খুঁজে পাওয়া ভার।
অন্যদিকে স্টিভ স্মিথ এবং সুরেশ রায়নাকে দলগুলো হয়ত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আস্থা রাখতে পারছে না। তাঁরা খুব একটা ফর্মে রয়েছেন তাও নয়। আর সুরেশ রায়না বয়সের দিকটাও নিশ্চয়ই বিবেচনায় রেখেছে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। তবে ডেভিড মিলার একজন জাত ফিনিশার।
তাঁর প্রয়োজনও হয়ত কোন ফ্রাঞ্চাইজি খুঁজে পায়নি তাঁদের পরিকল্পনায়। কেননা ভারতীয় উদীয়মান খেলোয়াড়দের মধ্যেও ফিনিশার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর। সেদিক বিবেচনায় তিনিও হয়ত রয়ে গেছেন অবিক্রিত।
হয়ত এই হাই প্রোফাইল খেলোয়াড়েরা পুনঃরায় উঠবেন নিলামে। দলের একটা কাঠামো দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর প্রয়োজন অনুসারে তাদেরকে দলে ভেড়াবেন ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। তার জন্যে অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে।