ওয়ালটন, ক্যারিবিয়ান পণ্য

বাংলাদেশের ক্রিকেটেপাড়ায় বেশ পরিচিত মুখ চ্যাডউইক ওয়ালটন। ক্যারিবিয়ান এই টপ অর্ডার  ব্যাটসম্যান বিপিএলে খেলেছেন নিয়মিতই। এবারো এসেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে মাঠ মাতাবেন বলে। তবে নিজের সেই জাদুটা দেখাতে পারেননি পুরো আসরে। অথচ বড় ম্যাচে চট্টগ্রামের হয়ে ঠিকই ঝলে উঠলেন এই ব্যাটসম্যান।

বাংলাদেশের আগে ওয়ালটনের সম্পর্কটা বেশ পুরনো। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশ কিছু সিনিয়র ক্রিকেটার যখন বোর্ডের সাথে ঝামেলায় সিরিজ বয়কট করেন তখন বাংলাদেশের বিপক্ষেই প্রথম টেস্ট দলে জায়গা পান এই ক্রিকেটার। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনোই সেভাবে থিতু হতে পারেননি।

২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন ফরম্যাটেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ম্যাচ খেলেছেন। তবে কখনোই নিয়মিত হতে পারেননি। এই লম্বা সময়ে মাত্র ২ টেস্ট, ৯ ওয়ানডে ও ১৯ টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই থেমে আছে ওয়ালটনের ক্যারিয়ার। বলা হয়, ক্রিস গেইলের কারণে নিজের ক্যারিয়ারটা লম্বা করতে পারেননি তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যা খেলেছেন তা ওই গেইলের ইনজুরির কারণেই। অবশ্য সেই সময়গুলো ঠিক কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।

তবুও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের স্বভাবজাত কিছু গুণ তাঁর মধ্যে ছিল। ফলে বিপিএলে নিয়মিতই তাঁর ডাক পড়েছে। ক্যারিবীয়ান প্রিমিয়ার লিগেও নিজের পারফর্মেন্স দিয়ে নজর কেড়েছেন। তবে এবারের বিপিএলে সময়টা ভালো কাটছিল না এই ক্যারিবীয়ানের।

তবে চট্টগ্রামের জন্য বাঁচা মরার ম্যাচেই প্রথম নিজের হাতটা খুললেন। প্লে অফ খেলতে হলে সিলেটের বিপক্ষে সেদিন চট্টগ্রামকে জিততেই হতো। অন্যরা যখন নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসছিলেন তখন উইল জ্যাকসের সাথে দলের হালটা ধরেন। তাঁর ২৩ বলে ৩৫ রানের ইনিংস ছিল চট্টগ্রামের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ন।

তবে  সেখানেই নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি ওয়ালটন। নিজেকে জমা করে রেখেছিলেন আরো বড় মঞ্চের জন্য। প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে এবার দলের হাল ধরলেন খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে। আজ আর উইল জ্যাকস ছিলেন না। ফলে দায়িত্বটা একার কাঁধেই তুলে নিয়ে শুরু হলো চ্যাডউইক ওয়ালটনের পথচলা।

আজও বড় ম্যাচের চাপ সামলাতে পারেননি জাকির হাসান ও আফিফ হোসেনরা। ফলে ৫৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপেই পড়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সেখানকে দলকে তুলে আনেন ওয়ালটন। কখনো সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন শামীম পাটোয়ারিকে। কখনো আবার হাল ধরেছেন মেহেদী হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে।

প্রথমদিকে দলকে একটা শক্ত জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তারপর শুরু হয় ওয়ালটনের ঝড়। থিসারা পেরার এক ওভারে মেরেছেন ৪ টি বাউন্ডারি। সবমিলিয়ে ৪৪ বল খেলে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৮৯ রান। অপরাজিত এই ইনিংসটি খেলেছেন ২০২.২৭ স্ট্রাইকরেটে। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মোট ৭ টি চার ও ৭ টি ছয়। অর্থাৎ ৮৯ রানের ইনিংসের ৭০ রানই করেছেন বাউন্ডারি থেকে।

এছাড়া মিরাজে সাথে গড়েছেন ৫৮ বলে ১১৫ রানের জুটি। যেখানে ওয়ালটনের ব্যাট থেকেই এসেছে ২৮ বলে ৭৮ রান। তাঁর এই ৮৯ রানের ঝড়ো ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ১৮৯ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এই ক্যারিবীয়র ব্যাটে চড়েই এখন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলার স্বপ্ন দেখছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।

 

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link