সাফল্য কখনো কখনো নিজের শত্রু হয়ে যেতে পারে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ মেহেদী হাসান মিরাজ। ছিলেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার। জাতীয় দলে এসে পুরোদস্তুর বোলার হয়ে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
আসলে বোলার হতে বাধ্য হয়েছিলেন মিরাজ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে অতিমানবীয় বোলিংয়ের ফলে লোকেরা ধরেই নিলো, তিনি বোলার। কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহেও তাকে বোলারের মতই ট্রিটমেন্ট দিলেন। ব্যাটিং পেতেন ৮-৯ নম্বরে।
একদিকে সাকিব আল হাসানের ছায়া, আরেকদিকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পেলা; সবমিলিয়ে মিরাজ কিছুতেই অলরাউন্ডার হতে পারছিলেন না।
অবশেষে ২০২১ সালে ঘুরে দাড়ালেন। বছরের শুরুতেই তুলে নিলেন টেস্ট সেঞ্চুরি। এরপর আরও একটি ফিফটি পেয়েছেন। বছরের শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ৩৮ রান করে অপরাজিত রইলেন। দেখা গেলো সে বছরে টেস্টে বিশ্বের শীর্ষ তিন অলরাউন্ডারের একজন আমাদের মিরাজ।
ওয়ানডেতেও মাঝে মাঝে এই সামর্থের প্রমাণ রেখেছেন। তবে আজ যেটা করলেন, সেটা মহাকাব্য হয়ে গেলো। আফিফ হোসেন ধ্রুবকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে যোগ করলেন ১৭৪ রানের অপরাজিত জুটি। এই জুটিতে মিরাজ করলেন ১২০ বলে ৮১ রান।
৪৫ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর উইকেটে এসেছিলেন। শুরুতে খুব নার্ভাস ছিলেন। বলছিলেন, ‘শুরুতে আমার খুব নার্ভাস লাগছিলো। পরে আফিফের কনফিডেন্স দেখে আমারও সাহস তৈরি হয়েছে। মনে হয়েছে পারবো।’
গত বছর থেকে অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার শুরু মিরাজের। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে বছরটা শুরু করেছিলেন মিরাজ। ওই টেস্টেই দুই ইনিংসে ৪টি করে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। সেটা ছিলো অলরাউন্ডার মিরাজের প্রদর্শনী। এরপর বছর জুড়েই এটা ধরে রেখেছেন তিনি।
এটা টেস্টের হিসেব। কিন্তু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে একটু একটু করে পিছিয়ে পড়ছিলেন মিরাজ। বল হাতে দারুন পারফরম্যান্স তাকে বোলারদের র্যাংকিংয়ে সেরা তিনে নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু এই ফরম্যাটে ব্যাটিং করার সুযোগই পাচ্ছিলেন না। সেই ক্যারিয়ারের শুরুতে একটা ফিফটি ছিলো। এরপর আর ওয়ানডেতে নিজের ব্যাটিংটা দেখাতে পারেননি।
অবশেষে আজ সুযোগ এলো। এর চেয়ে ভালো করে সুযোগটা আর আসতে পারতো না। তিনি যখন উইকেটে গেলেন, তখন বাংলাদেশের জয়টা অতি কল্পনা করেও দেখা কঠিন। সেখান থেকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়েছেন মিরাজরা দলকে।
কখনো ডিফেন্সের পর ডিফেন্স করেছেন। সময় পার করেছেন। কখনো পাল্টা আক্রমন করেছেন। কখনো স্ট্রাইক রোটেট করে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেছেন। একটা ইনিংসে যত ধরণের কাব্যিকতা থাকতে পারে, তা ছিলো আজ মিরাজের ব্যাটে। শেষ পর্যন্ত জয়ের সৌরভে মাখিয়েছেন ব্যাটটাকে।
নিজে বলছিলেন, ‘মূল ব্যাপার হলো বিশ্বাস। আসলে একটা সময় আমরা বলছিলাম যে, কেউ পারলে আমরাও পারবো। খেলা তো যে কেউ পারে। কিন্তু বিশ্বাস রাখতে হয়। আমি আর আফিফ নিজেদের ওপর বিশ্বাসটা রেখেছিলাম।’
আর বিশ্বাসেরই ফল এই জয়।