পুড থারলো- নামটা শুনলে জিজ্ঞেস করতে পারেন, এ আবার কে ভাই? বলছি। তবে, তাঁর পরিচয়ে আমি যা বলতে যাচ্ছি, তাতে গালিগালাজ করে ফাটিয়ে ফেলবেন, এরকম ভালো সম্ভাবনা আছে।
পুড থার্লো জীবনে খেলেছেন এক টেস্ট, কোনো উইকেট পাননি। বোঝাই যাচ্ছে, একেবারে যাচ্ছেতাই বোলার ছিলেন তিনি। তারপরেও তিনি ক্রিকেট ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তিনি শুধুমাত্র একটি কারণে। নিজের কোন কীর্তি নয়, তাঁর কারণেই ট্রিপল সেঞ্চুরি করা হয়নি ব্র্যাডম্যানের।
ব্র্যাডম্যানের শেষ ইনিংস নিয়ে কথা হলে অবধারিতভাবে চলে আসে এরিক হলিসের নাম। এই বোলারের বলেই যে ০ রানে আউট হয়েছিলেন শেষ ইনিংসে। অথবা, এমনিতে ম্যালকম ন্যাশ নামে কোন বোলারকে চেনেন? কিন্তু স্যার গ্যারি সোবার্সের ৬ বলে ৬ ছক্কা মানেই ম্যালকম ন্যাশ। যেমনটা, যুবরাজ সিংয়ের ক্ষেত্রে স্টুয়ার্ট ব্রড। হার্শেল গিবস মানে… যাহ! নেদারল্যান্ডের সেই বোলারের নামই ভুলে গেছি।
ভূমিকা শেষ। মূল প্রসঙ্গে আসি। ১৯৩২ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের চতুর্থ টেস্ট। ৫ টেস্টের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া তখন এগিয়ে আছে ৩ – ০ তে। প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৩০৮। ক্ল্যারি গ্রিমেটের দখলে ৭ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড়ে উঠে গেল অস্ট্রেলিয়া, মূল কৃতিত্ব অবশ্যই ব্র্যাড‘সুপার’ম্যানের। এক প্রান্তে উইকেট পড়তে থাকলেও তিনি ছিলেন অবিচল। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮২ এলো বিল উডফুলের ব্যাট থেকে, তিনজন মারলেন ডাক। এর মধ্যে আছেন অ্যালান কিপ্যাক্সও। ব্র্যাডম্যান করলেন অপরাজিত ২৯৯।
২৯৯ রানে আউট হওয়া মানেই যথেষ্ট আক্ষেপের ব্যাপার, অপরাজিত ২৯৯ মানে তো আরও আক্ষেপ। তবে ১০ নাম্বার ব্যাটসম্যান পুড থার্লো যেভাবে আউট হলেন, তাতে ভাগ্যের চাইতে থার্লোই বেশি দায়ী।
নবম উইকেট পড়েছিল ৪৯৯ রানে। এরপরে থার্লোকে স্ট্রাইকিং থেকে দূরে রেখে নিজে খেলছিলেন ব্র্যাডম্যান। সিরিল ভিনসেন্ট যখন ওভারের শেষ বল করলেন, তখন তার রান ২৯৮। এক রান নিয়ে স্ট্রাইক হাতে রাখবেন, এরকমটাই ইচ্ছে ছিল হয়তো তার। কিন্তু এক রান নেয়ার পরই তিনি দেখলেন, অপর প্রান্ত থেকে দৌড় শুরু করেছেন পুড। যেন ব্র্যাডম্যান না, ট্রিপল সেঞ্চুরি বাকি আছে তাঁরই!
ব্র্যাডম্যান বুঝে গেলেন, তার পক্ষে পৌঁছানো অসম্ভব, তবে পুড পৌঁছাতে পারেন এখনও। ফিরে যাওয়ার সঙ্কেতও দিলেন তিনি। কিন্তু হায়! আর কখনওই ক্রিজে পৌঁছাতে পারলেন না পুড।
ডন ব্র্যাডম্যান তাই ২৯৯ রানেই অপরাজিত রয়ে গেলেন!
ট্রিপল সেঞ্চুরি মিসের পরে ডনের কি আফসোস হয়েছিল? হয়েছিল নিশ্চয়ই, কারণ যতই হোক, মানুষ তো নাকি? এর দুই বছর পরে আবার ট্রিপল সেঞ্চুরি করলেন তিনি। ১৯৩০ সালে লিডসে ৩৩৪ করেছিলেন, ১৯৩৪ সালে সেই লিডসেই ৩০৪ করে জোড়া ট্রিপল সেঞ্চুরির মালিক হয়ে গেলেন। তাতে কি সেই ১ রানের আফসোস কমল কিছুটা? সম্ভবত না।
ট্রিপল ট্রিপলের সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলেন বিরেন্দর শেবাগ। পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ট্রিপল সেঞ্চুরির পরে শ্রীলঙ্কার সাথে আউট হলেন ২৯৩ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে আর একজনই ২৯৯ রানে আউট হয়েছেন, তাঁর নাম মার্টিন ক্রো। সারাদিন অসাধারণ ব্যাট করার পরে রানাতুঙ্গার এক সাধারণ ডেলিভারিতে আউট হয়ে গেলেন।
পেশাদের খেলোয়াড়দের নানারকম বিধিনিষেধ থাকে। ইচ্ছে করলেও অনেক কিছু করতে পারেন না তারা। এই ঘটনার পরে পুডকে কী বলেছিলেন ব্র্যাডম্যান, তা হয়তো এখন আর জানাও যাবে না। কিন্তু এই ঘটনার কথা আমি যখন জানতে পারি, আমার নিজেরই পুডকে কাঁচা খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করেছিল।
ব্র্যাডম্যান আসলে কী করেছিলেন কে জানে!