দ্য ভাজ্জি শো

কতশত যে বোলিং অ্যাকশন আমাদেরকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তার হিসেব করা কি আদৌ সম্ভব বলুন? এর মধ্যে ভিন্নধর্মী অ্যাকশনগুলো নজর কেড়েছে সকলের। ভিন্নধর্মী সেই বোলিং অ্যাকশনে বল করা খেলোয়াড়দের একজন ভারতের ডানহাতি অফ-স্পিনার হরভজন সিং। তবে তাঁর বোলিং অ্যাকশন থেকেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো তাঁর গড়া এক রেকর্ড।

সালটা ২০০১, ভারতে খেলতে এসেছিলো পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া। ভারতে টেস্ট খেলতে নামার আগে ততদিনে তাঁরা টানা ১৫টি টেস্ট ম্যাচ জিতে বসে ছিল। বুঝুন তবে দাপট! যথারীতি ভারতে খেলতে এসে সেই দাপট অব্যাহত রইলো প্রথম টেস্টে। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দশ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নেয়। ১৫ যোগ ১ সমান ১৬। টানা ১৬ ম্যাচ জয় অজিদের।

দ্বিতীয় টেস্ট ইডেন গার্ডেন্সে। সেই টেস্টে ছড়ি ঘোরালেন হরভজন সিং। তাঁর ক্যারিয়ার সেই টেস্ট ম্যাচ থেকেই উড়তে শুরু করলো। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে নতুন দিনের আশার দূত হয়ে এলেন হরভজন। সেই টেস্ট ম্যাচে তিনি তুলে নিয়েছিলেন দশ উইকেট। তাঁর থেকেও বড় বিষয় সেদিন তিনি প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে তুলে নিয়েছিলেন হ্যাট্রিক।

১১ মার্চ ২০০১ অর্থাৎ প্রায় বছর কুড়িরও বেশি আগে কলকাতা টেস্টের প্রথম ইনিংসে টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। দারুণ ছন্দে থাকা অস্ট্রেলিয়া হয়ত প্রত্যাশা করেছিলো বিশাল এক রানের পাহাড় গড়বে তাঁরা। সুবিশাল না হোক রানের পাহাড় তাঁরা গড়লেন ঠিক। স্কোরবোর্ডে তুললেন ৪৪৫। তবে সেই ইনিংসে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে রান তুলতে পেরেছিল অজিরা তাও নয়।

সেদিন তাঁদের রান তোলার গতিতে বারেবারে আঘাত করেছিলেন হরভজন সিং। সাতজন ব্যাটারকে তিনি ফিরিয়েছিলেন সাজঘরে। তাছাড়া পর পর তিনজনকে ফিরেছিলেন অস্ট্রলিয়ার দলীয় রান যখন ছিল ২৫২। রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও শেন ওয়ার্নদের মতো খেলোয়াড়দের আউট করেছিলেন তিনি পর পর তিন বলে। তাও আবার টেস্ট ক্রিকেটে। কি অভাবনীয় এক কীর্তি!

প্রথমে তিনি ফেরান রিকি পন্টিং-কে। লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাঁকে। ঠিক একইরকমভাবে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন বা-হাতি ব্যাটার গিলক্রিস্টকে। আর ওয়ার্ন তাঁর তৃতীয় উইকেটে পরিণত হন শর্ট লেগে থাকা ফিল্ডার সদাগোপন রমেশের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ব্যাস লেখা হয়ে যায় বিশ্বরেকর্ড। প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেস্টে হ্যাট্রিকের মালিক সেদিন থেকে হরভজন সিং।

তবে হরভজনের সেই অনবদ্য সাত উইকেট বৃথা হয়ে যেতে নেয় যখন ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৭১ রানে গুটিয়ে যায়। তবে ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় দফা ব্যাট করতে নেমে ভারতের ব্যাটাররা নিজেদের ভুল শুধরে নেয়।

ভিভিএস লক্ষ্মন ও রাহুল দ্রাবিড় এই দুই ব্যাটারের ব্যাটে ভর করে ৬৫৭ রান তোলে ভারত। যার ফলে জয়ের জন্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন গিয়ে দাঁড়ায় ৩৮৪। বিশাল বড় টার্গেট। সেই টার্গেট আর বড় করে তোলেন সেই হরভজন। তিনি এবার তুলে নেন ছয়টি উইকেট। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারদের উইকেট শিকার করেছিলেন উজ্জিবিত থাকা হরভজন।

তাঁর সেই দূর্দান্ত পারফর্মেন্সের উপর ভর করে ভারত ভেঙে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সাম্রাজ্য। টানা ১৬ জয়ের পর অজিদের রাজত্বের অবসান ঘটে তরুণ এক বোলারের বোলিং ঘূর্ণিতে। ভারত সে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল ১৭১ রানে। সেই সাথে ভারত ২-১ ব্যবধানে সিরিজও জিতে নিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link