ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া জিম্বাবুয়ের সেই ‘সোনালি প্রজন্মের’ ক্রিকেটারদের অনাকাঙ্ক্ষিত বিদায়ের পর দেশটির ক্রিকেটাঙ্গনে নেমে এসেছিল অন্ধকার। সেই অন্ধকারকে পাশ কাটিয়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে আপন আলোয় উদ্ভাসিত করেছিল যারা, তাঁদের মধ্যে ব্রেন্ডন টেইলর অন্যতম। যাকে মনে করা হয় ফ্লাওয়ার পরবর্তী যুগে জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে হাতে গোনা অল্প যে কয়েকজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার এসেছেন তাদের মধ্যে নি:সন্দেহে টেলর একজন।
ব্রেন্ডন টেলরের সহজাত স্ট্রোকপ্লে সত্যিকার ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে সর্বদাই একটা মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে দেয়। টেলরের খেলা পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে ক্রিকেট বিশ্বে। বিশেষ করে ফ্রন্টফুটে খেলা ড্রাইভগুলো দেখে প্রশংসা না করে উপায় থাকে না। ক্ল্যাসিকাল ঘরানার কাভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ; নিখুঁত টাইমিংয়ের ব্যাকফুট পাঞ্চ কিংবা নমনীয় কব্জির সূক্ষ্ম কারুকাজে সাজানো ফ্লিক শট! ফ্রন্টফুট-ব্যাকফুট দুটোতেই তার যেন সমান পারদর্শিতা।
একজন টপ ক্লাস ‘পিঞ্চ হিটার’ হিসেবেও টেলরের কথা বলতে হয় বিশেষভাবে। পাওয়ার হিটিংয়ের চেয়ে নিখুঁত টাইমিংয়ের উপরই বেশি নির্ভর করেন তিনি। খুব দ্রুত বলের লেংথ পড়ে ফেলতে পারেন। হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয়া লফটেড শটে তার মত স্বচ্ছন্দ ব্যাটসম্যান কমই আছে ক্রিকেট দুনিয়ায়।
স্পিনারদের বিপক্ষে টেইলরের কার্যকরী অস্ত্র ‘অর্থোডক্স’ সুইপ আর ‘আনঅর্থোডক্স’ রিভার্স সুইপ। স্লগ সুইপ আর প্যাডল সুইপেও দারুণ পারদর্শী তিনি। ব্যাকফুটে গিয়ে চমৎকার লেট কাটও খেলেন তিনি। স্পিনারদের বিপক্ষে কাভারের উপর দিয়ে খেলা টেইলরের ‘ইনসাইড আউট’ লফটেড ড্রাইভ ক্রিকেটের সবচাইতে দৃষ্টিনন্দন শটগুলোর একটি।
অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ফুটওয়ার্কে দুর্বলতা থাকলেও দুর্দান্ত রিফ্লেক্স, হ্যান্ডআই কো-অর্ডিনেশন আর রিস্টওয়ার্ক দিয়ে যেকোন কন্ডিশন ও উইকেট সাথে মানিয়ে নিতে পারেন টেইলর। পেসারদের দ্রুতগতির বাউন্সারের বিপক্ষে টেইলরের একটি বিশেষ শট আছে; থার্ডম্যানের উপর দিয়ে অনায়াসে খেলা ‘আপার কাট’।
পুরো নাম ব্রেন্ডন রোজ টেলর। ১৯৮৬ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি জন্মেছিলেন জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারেতে। ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটই ছিল যার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ঘরোয়া লিগের দল ম্যাশোনল্যান্ডের হয়ে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে অভিষেক।
শৈশবে টেলরের কোচ ছিলেন জিম্বাবুয়েরই আরেকজন বিখ্যাত ক্রিকেটার অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের বাবা ইয়ান ক্যাম্পবেল। প্রথম দেখাতেই টেইলরকে বেশ মনে ধরেছিল তাঁর। খুব অল্প বয়সেই টেইলরের হাতে ছিল দুর্দান্ত সব স্ট্রোক যা তাঁকে মুগ্ধ করত।
সহজাত আক্রমণাত্মক মেজাজের ব্যাটিং আর পরিপক্ব ক্রিকেট মস্তিষ্কের কারণে বয়সভিত্তিক দলগুলোতে অন্য সবার চাইতে একটু বেশিই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকতেন টেইলর। টিম সিলেকশনের ক্ষেত্রে সবসময় অটোমেটিক চয়েজ হিসেবেই বিবেচিত করা হত তাকে।
টেইলরের ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল একজন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে যে কিনা মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়েও সমান পারদর্শী। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটকিপিংয়ের প্রতিও আলাদা একটা ঝোঁক ছিল। ছেলেবেলা থেকেই কোচের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত কিপিং অনুশীলন করতেন তিনি।
শুধু তাই নয়, শৈশব থেকেই অফ স্পিনের হাতটাও মন্দ ছিল না তার। ঘরোয়া ক্রিকেটে অফ ব্রেকে হাত ঘুরিয়ে প্রায়ই ক্রুশাল ব্রেকথ্রু এনে দিতেন তিনি। মোটকথা, ছোট বয়স থেকেই টেইলর ছিলেন একজন মাল্টি ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার।
২০০১ সালে ফার্স্ট ক্লাসে অভিষেকের পর থেকেই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট অঙ্গনে দ্রুত নাম ছড়িয়ে পড়ে টেইলরের। অভিষেকের পর থেকেই জিম্বাবুয়ের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বইয়ে দিতে থাকেন রানের বন্যা। ১৫ বছর বয়সে স্থানীয় টুর্নামেন্ট ‘লোগান কাপে’ দুর্দান্ত এক ডাবল সেঞ্চুরি দিয়েই মূলত আলোচনায় এসেছিলেন টেইলর। ১৬ ও ১৮ বছর বয়সে দুটি অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপও খেলে ফেলেন। দুটি বিশ্বকাপেই জিম্বাবুয়ে দল হিসেবে ব্যর্থ হলেও টেইলর ঠিকই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন।
২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার আর্থিক লেনদেন নিয়ে বোর্ডের সাথে ঝামেলা এবং দল নির্বাচনে নোংরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে ফেলেন। হঠাৎ একযোগে এতজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে হারিয়ে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে একটা বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হয়। সেই শূন্যতা পূরণে জাতীয় দলে অভিষেক করানো হয় একঝাঁক নতুন মুখকে। তাদের মধ্যে যথারীতি টেলরও ছিলেন।
২০০৪ সালের ২০ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বুলাওয়েতে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন ১৮ বছর বয়সী ব্রেন্ডন টেইলর। অবশ্য অভিষেকটা মোটেও স্মরণীয় ছিল না তার জন্য। চামিন্দা ভাসের দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গারে ০ রানেই বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে।
একই বছর হারারেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকটাও হয়ে যায় টেলরের। অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে টেইলর করেছিলেন মাত্র ১৯ ও ৪ রান। ইনিংস ও ২৪০ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচটাও হেরে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে।
২০০৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে প্রথমবারের মত ব্যাট হাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন টেইলর। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দেয়া ২৩৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে জয়ের জন্য শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৫ রান। মাশরাফির ফুলটসে মিড উইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কা মেরে দলকে অসাধারণ এক জয় এনে দিয়েছিলেন টেইলর। ৭২ বলে অপরাজিত ৭৯ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মত পেয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের স্বীকৃতি।
২০০৭ সালের আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ‘জায়ান্ট’ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিয়েছিল ‘পুঁচকে’ জিম্বাবুয়ে। সেই জয়ে গ্লাভস ও ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই ২১ বছরের তরুণ।
অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ১৩৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শেষ ওভারে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। নাথান ব্র্যাকেনের করা শেষ ওভারে টেইলরের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১ বল বাকি থাকতেই সেই রান তুলে নেয় তারা। ওপেনিংয়ে নেমে ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় সাজানো ৪৫ বলে অপরাজিত ৬০ রানের চমৎকার এক ইনিংসের সুবাদে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ব্রেন্ডন টেলর।
ব্যাট হাতে টেলরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা পারফরম্যান্সটি এসেছিল ২০১০ সালে, সাউথ আফ্রিকার মাটিতে। ব্লুমফন্টেইনে প্রোটিয়াদের দেয়া ৩৫২ রানের বিশাল টার্গেটের জবাব দিতে নেমে সেদিন শুরু থেকেই দারুণ খেলছিল জিম্বাবুয়ে। সাধ্যমত চেষ্টার পরও শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ২৮৭ রান করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল আফ্রিকান দলটিকে। ওপেনিংয়ে নেমে পুরো ৫০ ওভার ব্যাট ‘ক্যারি’ করে টেলর খেলেছিলেন ১৩৬ বলে অপরাজিত ১৪৫ রানের ‘মাস্টারক্লাস’ এক ইনিংস!
২০০৫ থেকে ২০১১ পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় বছর, টেস্ট ক্রিকেট আঙিনা থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিল জিম্বাবুয়ে। অবশেষে ২০১১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ‘ঐতিহাসিক’ হারারে টেস্টের মধ্য দিয়ে পুনর্জন্ম ঘটে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের।
সেই ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হন ব্রেন্ডন টেলর। প্রথম ইনিংসে ৭১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১০৫ রানের অসাধারণ দুটি ‘ক্যাপ্টেন্স নক’ খেলে অধিনায়ক হিসেবে নিজের অভিষেকটা রেখেছিলেন স্মরণীয় করে। মাত্র দ্বিতীয় জিম্বাবুইয়ান হিসেবে ‘ক্যাপ্টেন্সি’র অভিষেকেই সেঞ্চুরি করার বিরল গৌরব অর্জন করেন টেলর।
সবচেয়ে বড় কথা, জিম্বাবুয়ে ম্যাচটা জিতেছিল ১৩০ রানে আর টেইলর হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। এই জয়কে টেলর তাঁর ক্যারিয়ারের ‘সেরা মুহূর্ত’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই টেইলর টেস্ট ক্রিকেটে তার সেরা সময়টা কাটিয়েছেন। যেখানে প্রথম ১০ টেস্টে তার একটিও সেঞ্চুরি ছিল না! সেখানে ক্যাপ্টেন্সি পাওয়ার পরের ৭ টেস্টেই তিনি করে ফেলেন চারটি সেঞ্চুরি!
২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন টেইলর। তিন ম্যাচ খেলে ১৫৫ গড়ে করেছিলেন ৩১০ রান! তার স্কোরগুলো ছিল যথাক্রমে ১২৮*, ১০৭ ও ৭৫!
উল্লেখ্য, বুলাওয়েতে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের দেয়া ৩২৯ রানের অসম্ভব লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল জিম্বাবুয়ে! সেটা সম্ভব হয়েছিল ম্যালকম ওয়ালারের ৭৪ বলে ৯৯*, টেলরের’ ৬৫ বলে ৭৫, টাইবুর ৩৯ বলে ৫৩ আর চিগুম্বুরার ৪৩ বলে ৪৭ রানের ইনিংসগুলোর সৌজন্যে।
বলাবাহুল্য, সিরিজ হারলেও সিরিজ সেরার পুরস্কারটা উঠেছিল ব্রেন্ডন টেলরের হাতেই! নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টেও দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৫৮ ও ১১৭ রান করে ব্যাট হাতে নিজের ফর্মটা ধরে রেখেছিলেন তিনি।
টেস্টে টেইলর তার ক্যারিয়ার সেরা ১৭১ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন ২০১৩ সালে, হারারে টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে। একই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও করেছিলেন অপরাজিত ১০২ রান। তৃতীয় জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়েন টেস্ট ক্রিকেটে জোড়া সেঞ্চুরির কীর্তি। টেলরের অসাধারণ ‘জোড়া’ সেঞ্চুরির সৌজন্যেই হারারে টেস্ট সহজেই জিতে নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। যথারীতি ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা উঠেছিল টেলরের হাতেই।
টেইলরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য, অর্জন যাই বলুন সেটা এসেছিল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে আয়োজিত ২০১৫ বিশ্বকাপে। এই টুর্নামেন্টেই ‘প্রথম’ জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ৪০০ এর অধিক রান করার কীর্তি গড়েন টেলর।
গ্রুপ পর্বের ছয় ম্যাচ শেষে দুই সেঞ্চুরি আর এক হাফ সেঞ্চুরিতে ৭২.১৬ গড়ে ১০৮.৯২ স্ট্রাইক রেটে টেইলরের সংগ্রহ ছিল ৪৩৩ রান! এর আগে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে জিম্বাবুইয়ানদের হয়ে এক আসরে সর্বোচ্চ ৩৬৭ রান করেছিলেন সাবেক বাঁহাতি ওপেনার ও অলরাউন্ডার নিল জনসন।
হোবার্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৯১ বলে ১২১ এবং ঠিক তার পরের ম্যাচেই, অকল্যান্ডে ভারতের বিপক্ষে ১১০ বলে ১৩৮ রানের চোখ জুড়ানো দুটি ইনিংস খেলার মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন।
২০১৫ বিশ্বকাপ খেলেই জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সাথে নিজের সম্পর্কের ইতি টানেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। ইংলিশ কাউন্টির দল নটিংহ্যামশায়ারের সাথে তিন বছরের ‘কলপ্যাক চুক্তি’ স্বাক্ষর করে সপরিবারে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে।
দলের মূল ব্যাটিং স্তম্ভটি চলে যাবার পর থেকেই তার অভাব বেশ ভালোমতোই টের পেতে থাকে জিম্বাবুয়ে। টেইলর চলে যাওয়ার প্রায় দুই বছরে ভাল কোন বিকল্প তৈরি করতে পারেনি তাঁরা।
গত কিছুদিন আগেই কাউন্টিতে খেলার চুক্তি শেষ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবারও ফিরে এসেছেন ব্রেন্ডন টেলর। তখন থেকে আবারো তিনি মন দিয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটেই। আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করার দিক থেকে তিনি এই সময় ছাড়িয়ে গেছেন স্বয়ং কিংবদন্তি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে। ওয়ানডে ইতিহাসে তিনি জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যান।
জাতীয় দলের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া লিগেও মাঠ কাঁপিয়েছেন টেইলর। ২০০৭ সালে সর্বপ্রথম খেলেছিলেন ডাচ ঘরোয়া লীগে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ যেমন বিপিএলে চিটাগং কিংস, বরিশাল বুলস; আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ, শ্রীলঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে উথুরা রুদ্রজ ও নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে ওয়েলিংটন ফায়ারবার্ডসের হয়ে খেলেছেন দাপটের সাথে।
২০১৫-২০১৭ সাল পর্যন্ত ইংলিশ কাউন্টিতে খেলেছেন নটিংহামশায়ারের হয়ে। ২০১৪ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম ব্যাংকের হয়েও এক মৌসুম খেলে গেছেন এই জিম্বাবুইয়ান তারকা। সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে গত বছর চালু হওয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ‘মাস্টার্স লিগে’ও অংশ নিয়েছিলেন টেলর। খেলেছেন লিও লায়ন্সের হয়ে।
তবে, টেলরের যাবতীয় মনোযোগ এরপর থেকে জাতীয় দলেই ছিল। হ্যামিল্টন মাসাকাদজার বিদায়ের পর তিনিই ছিলেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা – সেটা একদম ক্যারিয়ারের শেষের দিকেই। তবে, দ্য লাস্ট সামুরাইয়ের ক্যারিয়ারের শেষ বেলাটা যে এমন ফিক্সিংয়ের অন্ধকারে ডুবে যাবে সেটা আর কেই বা জানতো!