বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেই ভীষণ জোরে বল করতে পারার জন্য তাঁর নামটা ছড়িয়ে পড়েছিল। দ্রুতই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অভিষেক হলো, ভারতের বিপক্ষে। বল হাতে নেমেই জানান দিলেন তিনি বাংলাদেশের পেস বোলিং লাইন আপের কান্ডারি হতে এসেছেন। অভিষেক ম্যাচেই পাঁচ উইকেটসহ, ২০১৫ বিশ্বকাপেও তাসকিন আহমেদ দুরন্ত।
হঠাতই দেশের ক্রিকেটের নায়ক হয়ে উঠলেন। বিজ্ঞাপন বাজারেও তাঁর প্রভাব পড়েছিল। রাস্তায় বড় বড় ব্যানারে তাঁর ছবি দেখা যেতে লাগলো। হয়ে উঠলেন দেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয়। তবে এরপরেই আবার মুদ্রার আরেক পিঠ দেখেছেন। কখনো ইনজুরি, কখনো লাইন লেন্থে হেরফের করে দল থেকে বাদ পড়েছেন।
তবুও জাতীয় দলের আশেপাশেই ছিলেন। তবে তাসকিন সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেলেন ২০১৯ বিশ্বকাপের দল ঘোষণার দিন। ফিটনেসের কারণ দেখিয়ে তাসকিনকে বিশ্বকাপ দলে রাখা হলো না। এরপরই নিজের ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছিলেন তাসকিন। নিজেকে সেরাদের একজন হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সেজন্যই দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাসকিনের গুরু মাহবুব আলী জাকিরের কাছে।
তাসকিনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে আলাদা করে কর্ম পরিকল্পনা সাজান এই কোচ। আজ থেকে বছর দুয়েক আগে শুরু হয় সেই কঠিন ট্রেনিং। কোচ মাহবুব আলী তাসকিনের সাথে ছিলেন পুরোটা সময়। তবে লড়াইটা লড়তে হয়েছে তাসকিনকেই। নিজের শরীরকে নতুন করে গড়ে তুলতে হয়েছে, খাওয়া-দাওয়ায় লাগাম টেনেছেন, মানসিকভাবে যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী করে তুলেছেন। পাশাপাশি চলছিল স্কিল নিয়ে কাজও।
২০১৯ বিশ্বকাপের সেই ঘটনার পর নিজেকে ফিরে পেতে তাসকিন কতটা মরিয়া ছিলেন তা ফুটে উঠে এই কোচের কণ্ঠেই। খেলা-৭১ কে মাহবুব আলী বলেন, ‘তাসকিন আসলে বদ্ধ পরিকর ছিল। সে আমাকে বলেছল যে আমি সিরিয়াস ক্রিকেট খেলতে চাই। এরপর আমরা ওকে নিয়ে আলাদা করে পরিকল্পনা করি। যেটায় আসলে অকল্পনীয় পরিশ্রম ছিল। সেটা শারীরিক, মানসিক সব দিক দিয়েই।’
তাসকিনকের এই পূনর্জন্মের পিছনে অনেক বড় অবদান আছে এই কোচের। এমনকি সেই সময় তাসকিনকে অনেক কঠিন কথাও বলেছিলেন। তবে এখন তাসকিনের বোলিং দেখে গর্ববোধ করেন তিনি। এই কোচ বলছিলেন, ‘২০২০ সালের শুরুতেই তাসকিন বুঝতে পারে যে ওর ক্রিকেট নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে। এছাড়া আমিও আগে বলেছিলাম যে জাতীয় দলে যদি না থাকতে পারো তাহলে রাস্তায় তোমার এই পোস্টার বেশিদিন থাকবেনা। তখন আর তোমাকে কেউ চিনবেনা। এই জিনিসটা তাসকিনকে খুব ভাবিয়েছিল।’
তবে তাসকিনকে নিয়ে একান্তে কাজ করা এই কোচ মনে করেন এখনো অনেক কিছু করা বাকি। তাসকিনের বোলিংয়ে আরো অনেক উন্নতির জায়গা আছে বলেও তিনি মনে করেন। এমনকি তাঁর গতিও আরো বাড়াতে। তিনি বলেন, `আমাদের টার্গেট ছিল তাসকিন ১৫০ কিমি গতিতে বোলিং করবে। সেভাবেই তাঁর শরীরটাকে আমরা গড়ে তুলেছি। তবে অনেক বেশি খেলার মধ্যে থাকায় পেস নিয়ে আলাদা করে কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে এটা দ্রুতই করে ফেলা প্রয়োজন। কারণ একটা বয়সের পর আর খুব বেশি কিছু করার থাকেনা।‘
আগে শুধু পেসের উপরই নজর দিতেন তাসকিন আহমেদ। তবে এখন লাইন-লেন্থ নিয়ে দারুণ মনোযোগী তিনি। এছাড়া ক্রস সিম বোলিং নিয়েও আলাদা ভাবে কাজ করেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচগুলোতেও ক্রস সিমে বোলিং করে স্বাগতিকদের বিপদে ফেলেছেন। এই ব্যাপারে কোচ মাহবুব আলী বলেন, ‘এটা নিয়েও আমরা অনেক আগে থেকেই কাজ করছি। এখন ম্যাচেও সে করতে শুরু করেছে। আরো যত সময় যাবে, তত ভালো হবে।’