‘পাল দো-পাল কি শায়ের হু’, মানে তিনি ক্ষণিকের কবি। যদিও, সেই কাব্যটা চলছে সব ধরণের ক্রিকেট মিলিয়ে প্রায় ২২-২৩ বছর হতে চললো। মহেন্দ্র সিং ধোনির চরিত্রে কিংবা ভূমিকায় – এই সময়ে অবশ্য যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে।
শুরুতে তিনি অনূর্ধ্ব ১৯ দল থেকে ছিটকে গিয়ে বিশ্বকাপ দলের জায়গা হারিয়েছেন। অনেক লড়াই সংগ্রামের পর ট্রেনের চাকরি চালিয়েও ক্রিকেট খেলেছেন, জাতীয় দলে একটা সুযোগের জন্য হন্যে হয়েছেন। জাতীয় দলের শুরুটাও মসৃণ ছিল না কখনও।
এরপর তিনি জাতীয় দলের প্রবল প্রতাপশালী অধিনায়ক বনে যান অভিষেকের বছর তিনেকের মাথায়। নির্বাচকদের নেহায়েৎই ফাটকা এক সিদ্ধান্ত যেন ভারতবর্ষের ক্রিকেটের ইতিহাসে পাল্টে দেয় এক নিমিষে। অধিনায়ক হিসেবে ধোনি কি না জিতেছেন।
একদম তরুণ বয়সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে তিনি ক্রিকেটের মানচিত্রটাই ওলট-পালট করেন। এরপর ওয়ানডে বিশ্বকাপ, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেন। শুধু কি তাই, ভারতের দলটা টেস্টের এক নম্বর শক্তিতে পরিণত হয় এই অধিনায়ক ধোনির কৃতিত্বেই।
তবে, সব কিছুরই তো শেষ আছে। নক্ষত্রদেরও তো একদিন মরে যেতে হয়। এটাই তো নিয়তি। টেস্ট ক্রিকেটটা ছেড়েই দিলেন। অধিনায়কত্ব তুলে দিলেন তরুণ প্রজন্মের হাতে। কালক্রমে সাদা বলের ক্রিকেটেও ধোনির ভূমিকা নিয়ে, দলে জায়গা থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে লাগল।
২০১৫ বিশ্বকাপে যিনি প্রচণ্ড বিক্রমী একজন অধিনায়ক ছিলেন, তাঁকে ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারত নিয়ে গেল নামের ভারে। সেখানেই শেষ। সেমিফাইনালে ‘ম্যাচ উইনার’ হতে পারলেন না। নিজের স্বভাবসুলভ ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে ব্যাটটা ঘোরাতে পারলেন না আকাশে। ব্যস, দল থেকে জায়গাটা খোঁয়ালেন।
সবাই বললেন, ধোনি ফুরিয়ে গেছেন। বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) চুক্তি থেকে জায়গা হারালেন। ধোনিও অপেক্ষা করলেন না। আইপিএলের আগ দিয়ে ইতি টানলেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের।
প্রথম অধ্যায়ের শেষ ওখানেই বলা যায়। দ্বিতীয় অধ্যায়ের গোড়াপত্তনে বিভৎষ এক ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) আসর খেললেন। মনে হচ্ছিল সেখানেই শেষ। ধোনি আর প্রবল হয়ে ফিরলেন ২০২১ সালের আইপিএলে। যথারীতি , আইপিএলের সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্যের অবতারণা হল আরেকবার।
আরেকটিবার ফাইনালের পোডিয়ামে উঠলেন মাহি, ট্রফি হাতে ছবি তুললেন, শরীরে চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সি। একদম শুরু থেকে আইপিএলের এই ফ্র্যাঞ্চাইজির পোস্টার বয় তো তিনিই। আজকাল চেন্নাইতে কেউ আর স্বয়ং মেগা স্টার রজনীকান্তকে নয়, ‘থালাইভা’ বলে ডাকে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে।
না, এখানেই শেষ নয়। লড়াইটা আরেকটু বড় না করলে, আরেকবার নিজেকে চ্যালেঞ্জ না ছুড়লে তিনি ধোনি হলেন কি করতে। তিনি ২০২২ সালেরও যথারীতি আছেন। তবে, এবার ভূমিকাটা পাল্টে গেছে তাঁর। নেতৃত্বের আর্মব্যান্ডটা নিজ হাতে খুলে পরিয়ে দিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজাকে। এবার যেন সত্যিকারের ‘ধোনি ২.০’ শুরু হল।
হ্যাঁ, সেই শুরুটায় চেন্নাই হেরেছে। শ্রেয়াস আইয়ারের কলকাতা নাইট রাইডার্সকে জিততে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। চেন্নাইয়ের ১৩১ রানের জবাবে নয়টি ডেলিভারি আর ছয়টি উইকেট হাতে রেখেই জিতে গেছে কলকাতা, গেল আসরের রানার আপ।
তবে, এর মধ্যেও নিজের একটা স্টেটমেন্ট ধোনি ঠিকই দিতে পেরেছিলেন। তারুণ্যের খেলা টি-টোয়েন্টিতে ৪০ বছর বয়সী ধোনি ৫১ রানের এক ইনিংস খেলেছেন, ৩৮ টি বলে। সাতটি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো সেই ইনিংসটাও এমন এক সময়ে এসেছে যখন ৬১ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে কাঁপছিল চেন্নাই। ইনিংসটা দিয়ে ধোনি যেন আরেকবার বলে দিতে চাইলেন, ‘ফুরিয়ে গেছি বলার সময় আদৌ আসেনি।’
ধোনি ২.০ আরো প্রবল হোক, ধোনির মুকুটের পালকে আরো কয়েকটা পালক যোগ হোক, বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এভাবেই বারবার নিজেকে প্রমাণ করে যান, প্রত্যাশা এটাই। তা না হলে তিনি আর ধোনি কেন!