সিলেট থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে উঠে এসেছে একগাদা পেসার। আবু জায়েদ রাহি, এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদরা এই সিলেটেরই সন্তান। বলা হয়, সিলেটের আবহাওয়া, উইকেটই নাকি এই পেস ব্যাটারির মূল কারণ। তবে এদের মাঝে একটা নাম আড়ালেই থেকে যায়। পেস বোলারদের জন্য স্বর্গভূমি হয়ে উঠা এই সিলেট থেকেই আবার উঠে এসেছেন বাংলাদেশের নতুন স্পিন সেনসেশন নাসুম আহমেদ।
বছরখানেক আগেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে শুধুই একজন হাসির পাত্র বলে তাঁর জায়গা হয়েছিল।
‘নিউজিল্যান্ডের আকাশ বেশি পরিষ্কার তো, তাই ক্যাচ ধরতে অসুবিধা হয়।’ – এটাই একটা সময় নাসুমের পরিচয় হয়ে উঠেছিল। কত লোকের হাসির পাত্রও বনে গিয়েছিলেন। তবে নাসুম আহমেদের আসল পরিচয়টা তখনো পাওয়া যায়নি। নাসুম তাঁর জাত চেনালেন মিরপুরের মেঘলা আকাশে অজিদের বিপক্ষে।
নাসুমের উত্থানটা মূলত হলো ওই অজিদের ঘরের মাঠে হারিয়েই। এরপর থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যত খেলেছেন ততই তাঁর ইমপ্যাক্টটা বোঝা গেছে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক গুরুত্বপূর্ন চরিত্র হয়ে উঠছেন। টি-টোয়েন্টি থেকে এখন ওয়ানডে দলেও ডাক পেতে শুরু করেছেন। হয়তো দ্রতই মাঠে নামবেন। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন নাসুমই বাংলাদেশের স্ট্রাইক বোলার।
অজিদের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয়ের নায়ক এই নাসুম আহমেদ। মিরপুরে প্রথম ম্যাচেই পেলেন চার উইকেট। তাও চার ওভারে মাত্র ১৯ রান খরচা করে। এরপর ওই পুরো সিরিজেই বাংলাদেশের বড় অস্ত্র ছিলেন নাসুম। এরপর আবার ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও তিনিই ভরসা। সাকিবের সাথে তাঁর বোলিং জুটিটা একেবারে জমে উঠেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে তাঁর ঝুলিতে পড়লো ৮ উইকেট।
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে ধারাবাহিক বোলারটার নাম নাসুম আহমেদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হোক কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেট সব জায়গাতেই নাসুম নিজেকে বারবার প্রমাণ করছেন। ইকোনমিক্যাল বোলার হিসেবে দেশের ক্রিকেটে নিজের একটা স্থান তৈরি করেছেন। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বড় তারকা হয়ে উঠেছেন নাসুম।
এইবছর বিপিএলেও নাসুমের স্পিনে টালমাটাল হয়েছিল ব্যাটসম্যানরা। এবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ১২ ম্যাচ খেলে পেয়েছেন ১১ উইকেট। তবে সবচেয়ে নজরকারা ব্যাপার তাঁর ইকোনমি রেট। পুরো বিপিএলে তিনি বোলিং করেছেন ৬.০৬ ইকোনমি রেটে। এমনকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ২০ ম্যাচ খেলে ফেলার পর তাঁর ইকোনমি রেট মাত্র ৬.৪৪। এছাড়া ২৬ টি উইকেট তো আছেই তাঁর ঝুলিতে।
এইতো কিছুদিন আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও মান বাঁচিয়েছেন এই নাসুমই। প্রথম ম্যাচে আফগানদের হারাতে পেরেছিল বাংলাদেশ। আসলে বলা ভালো ওই ম্যাচে আফগান ব্যাটারদের আঁটকে দিয়ে ছিল এই নাসুম আহমেদই। সেই ম্যাচে নাসুম করেছিলেন অবিশ্বাস্য এক স্পেল। একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে চার ওভার বোলিং করে মাত্র ১০ রান দিয়ে ৪ টা উইকেট।
এভাবেই কেবলই এক হাসির পাত্র দিন দিন একজন গুরুত্বপূর্ন চরিত্র হয়ে উঠছেন নাসুম আহমেদ। অন্তত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নাসুমকে ছাড়া বাংলাদেশের চলেনা। বল হাতে তিনি আর সাকিব হয়ে উঠেছেন প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য আতঙ্কের এক নাম। এইতো নিউজিল্যান্ড থেকে এখন আবার চলে এসেছেন ডিপিএল খেলতে। ঢাকা লিগের ব্যাটসম্যানরা আতঙ্কে পড়ে গেল নিশ্চয়ই।