সবশেষ ১৭ টেস্টে জয় মাত্র একটিতে! গেল পাঁচ সিরিজের এক সিরিজেও জয়ের দেখা পায়নি ইংলিশরা। সাদা পোশাকে চরম ব্যর্থ সময় কাটাচ্ছে জো রুটের দল।
ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও দলের ব্যর্থতার দায়টা স্বাভাবিকভাবেই বর্তাচ্ছে রুটের ওপর। অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৪-০ ব্যবধানে হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও জয়ের দেখা পায়নি ইংলিশরা। আর এতেই অধিনায়ক হিসেবে রুটের সামর্থ্য নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। টেস্টে টানা ব্যর্থতার দায়ে অধিনায়ক হিসেবে রুটের অপসারণ চান সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটাররা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গ্রেনাডা টেস্টে দশ উইকেটের ব্যবধানে হারের পর সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার মাইকেল আথারটন, নাসেই হুসেইন ও মাইকেল ভন রুটকে অব্যহতি দেওয়ার ব্যাপারে বলেছেন। পাঁচ বছর আগে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের দায়িত্ব নেওয়া রুট ৬৪ টেস্টে জয়ের দেখা পেয়েছেন ২৭ টেস্টে।
অপরদিকে, ২৬ টেস্টেই তাঁর অধীনে হেরেছে ইংলিশরা। টেস্ট ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি হারের দিক থেকে রুটের উপরে আছেন স্রেফ দু’জন! স্টিফেন ফ্লেমিং ২৭ ও সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ হেরেছেন ২৯ টেস্টে।
সাবেক ইংলিশ তারকা ক্রিকেটার ও অধিনায়ক মাইকেল আথারটন বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে রুট ব্যর্থ, এটা সে নিজেও বুঝতে পারছে অ্যাশেজ সিরিজে ভরাডুবির পর। তাঁর দল টানা পাঁচ সিরিজে হেরেছে, সবশেষ ১৭ টেস্টের মাঝে জয় পেয়েছে মোটে একটিতে। বেশ বাজে সময়ের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে ইংল্যান্ড দল। অধিনায়ক হিসেবে রুট নিজের অন্তিম সময়ে আছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটককে প্রাধান্য না দেওয়ার কারণেই ইংল্যান্ড দলের এই অবস্থা। এটা বেশ বাজে একটা দল। একটা সময় এমন আসে যে অধিনায়কের আর কিছুই বলার থাকে না। তাই খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে নতুনত্বের প্রয়োজন। ‘
সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ও জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেইন বলেন, ‘রুট বিশ্বসেরা ব্যাটার। আমার বেশ পছন্দের। কিন্তু আমার মনে হয় অধিনায়ক হিসেবে সে কখনোই ভাল ছিল না।’
রুটের পাশাপাশি অ্যান্ড্রু স্ট্রস, পল কলিংউড ও জেমস টেইলরকে নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচক প্যানেলের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন নাসের।
তিনি বলেন, ‘রুট সরে না দাঁড়ালে তাঁর কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও নিয়ে নেওয়া উচিত। এরপর কোচের উচিত বেন স্টোকসের সাথে বসা। যদি সে মানসিক ভাবে ঠিক থাকে তাহলে তারই এই দায়িত্ব পাওয়া উচিত।’
ডেইলি টেলিগ্রাফকে সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেন, ‘শুধু গ্রেনাডাতেই নয় অস্ট্রেলিয়ায় বার বার এমন হচ্ছে। গেল মৌসুমেও এমন হয়েছে। দল যখনি খারাপ অবস্থানে থাকে রুট সেখান থেকে দলকে টেনে তুলতে পারছেনা। যেই ম্যাচ এক ঘন্টা আগে জেতা উচিত সেটায় আমরা হেরে যাচ্ছি। আমিও ২০০৮ সালে অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাই, কারণ যখন আপনি বুঝবেন আপনার দায়িত্বটা এই পর্যন্তই ছিল। জো’র নিজেকে নিজে প্রশ্ন করা উচিত সে কি আগামী এক দেড় বছর নিজেকে চালানোর মতো শক্তি আছে কি? বর্তমান অবস্থা তো ভাল কিছু দেখাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রুট যদি অধিনায়ক না থাকে তাহলে দলের অবস্থা আর কতটা খারাপ হবে এমন প্রশ্ন তোলাই যায়? আমরা কি মিস করতে যাচ্ছি? যদিও তার রান আমরা মিস করবো না, কারণ সে রানের ধারায় থাকবে। আমরা কি তাঁর কৌশলগুলো মিস করবো? না। যদি তার মধ্যে সেই শক্তি থাকে তাহলে নতুন কোচ তাঁকে সাহায্য করতে পারবে আর এতেই সে কামব্যাক করতে পারে। যদিও আমি আশা দেখছি না।’
সাদা পোশাকে দলের এমন ভরাডুবি আর হতশ্রী চিত্রে ক্ষেপেছেন সাবেক এই তিন ইংলিশ অধিনায়ক। দলের এমন অবস্থায় নতুন স্টাইল, নতুন পরিকল্পনা প্রয়োজন। তাই সাবেক এই তারকারা মনে করছেন অধিনায়কের বদল আসলেই দলে নতুনত্ব আসবে।
অধিনায়ক হিসেবে টানা ব্যর্থতার কারণে ব্যাট হাতে ছন্দে থাকা রুট এখন সমালোচনার কেন্দ্রে। তবে সমালোচনাটা স্রেফ অধিনায়ক রুটকে নিয়ে। অধিনায়ক রুটের সময়টা হয়তো একদম শেষের দিকেই, ইংল্যান্ড ক্রিকেটকে উঠে দাঁড়াতে এই বিপদের সময় গুরুদায়িত্ব কার কাঁধে উঠে সেটাই দেখার বিষয়। নাকি রুটকেই বহাল রাখবে বোর্ড? সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীন হলেও ঘটতে পারে যেকোন কিছুই।