২৬৯ বল, ৩৬৩ মিনিট! ডারবানে হারমারের বিষাক্ত বোলিংয়ে কাঁপছে বাংলাদেশ দল। সাদমান, শান্ত, মুমিনুল, মুশফিকরা ফিরে গেছেন হারমারের সামনে অসহায়ত্ব দেখিয়ে। তবে একপ্রান্তে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিলেন তরুন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।
দল যখন ব্যাটিং বিপর্যয়ে, জয় তখন একপ্রান্তে মাটি কামড়ে পড়ে আছেন। ফলোঅন যখন চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে ঠিক তখনি যেন ত্রাণকর্তা হিসেবে এলেন জয়। খেললেন সত্যিকার টেস্ট মেজাজের এক ইনিংস। দলের বিপদের সময়ে ৩৬৩ মিনিট ক্রিজে পড়ে থেকে করলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি।
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির পথে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের মালিক বনে গেলেন জয়। সেই সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে দেখা পেলেন টেস্ট সেঞ্চুরির। দুর্দান্ত টেম্পারমেন্ট, আত্মবিশ্বাসের সর্বোচ্চটা দেখিয়ে ডারবানের প্রতিপক্ষের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছেন জয়। একদিকে সতীর্থ ব্যাটাররা আসা যাওয়ার মিছিলে যুক্ত হলেও ক্রিজে অনড় ছিলেন জয়।
ধৈর্য্য আর আত্মবিশ্বাস যেন পূর্ণতা পেল এই দুর্দান্ত সেঞ্চুরির মাধ্যমে। সত্যিকার টেস্ট মেজাজের ব্যাটিংটা দেখা মিলল জয়ের ব্যাটেই। ডারবানে প্রোটিয়াদের ডেরায় জয়ের এই ইনিংসটা উদাহরণ হয়ে থাকলো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য।
এই মাহমুদুল হাসান জয় অভিষেকেই শিকার হন সমালোচনার। গেল বছর ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে মিরপুরে সাদা পোশাকে অভিষেক। তবে অভিষেকটা আপন রঙে রাঙাতে পারেননি জয়। প্রথম ইনিংসেই ফিরেন শূন্য রানে! এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন মোটে ৬ রান। দলের ভরাডুবি, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স – সব মিলিয়ে অভিষেকেই সমালোচনার বৃত্তে নিজেকে জড়ান এই তরুন ওপেনার।
এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সুযোগ পেলেন। আর সুযোগ পেয়ে এবার নিজেকে মেলে ধরলেন। মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের ম্যাচে খেললেন ৭৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেট, পেস দাপট, বিরুদ্ধ কন্ডিশনে জয়ের ইনিংসট নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা। ওই ইনিংস দিয়ে যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এই তরুন সম্ভাবনাময়ী তারকা।
ডারবানে আরেকবার প্রমাণ করলেন সাদা পোশাকে ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা হতে পারেন তিনি। অভিজ্ঞ ব্যাটাররা যেখানে হারমারের সামনে দাঁড়াতে পারছিলেন না সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা অনায়াসে খেলে গেলেন তিনি। ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় টেস্টেই দলের হাল ধরতে শিখে গেছেন জয়। ওপেনিংয়ে লম্বা সময় ধরেই তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গির খোঁজে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, সাদমান ইসলামদের সুযোগ দেওয়া হলেও নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারেনি তাঁরা।
জয়ের শুরুটাও ছিল হতাশাজনক। তবে শুরুর ব্যর্থতার পেছনে ফেলে দ্রুতই নিজের সেরা রূপে ফিরেছেন এই তরুন ওপেনার। ওপেনিংয়ে জয়কে উঠিয়ে আনাটা ছিল টিম ম্যানেজমেন্টেরই সিদ্ধান্ত। অভিষেকের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেছিলেন, ‘জয়কে আমরা ওপেনিংয়ে বিবেচনা করছি। ‘
এর আগে কোনো স্বীকৃত ক্রিকেটেই জয় ওপেন করেননি। এমন একজনকে ওপেনিংয়ে খেলানো আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে সমালোচনা করেন সমর্থকরাও। একই সাথে ব্যর্থ হলে ক্যারিয়ারের শুরুতেই ছিটকে যেতে পারেন বলেও ছিল শংকা। সেই জয়ই এখন ডারবানে ওপেনিংয়ে ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে দেখাচ্ছেন আশার আলো। টেস্টে তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গী হিসেবে জয় এখন নিঃসন্দেহে সেরা। বাংলাদেশের ওপেনিং সংকটে জয় এখন দলের অন্যতম সেরা ভরসা।