হাসিমুখের জমাট বিষন্নতা

মাঠের ভেতর হোক বা বাইরে, সতীর্থদের সাথে খুনসুটিতে যুজবেন্দ্র চাহালের জুড়ি মেলা ভার। মাঠে সতীর্থদের সঙ্গে রসিকতা করা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোঁচা—চাহালের সরব উপস্থিতি সর্বত্র। কখনো কখনো এই রসিকতার জন্য কখনো কখনো বিরাট কোহলি, ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স কিংবা কেভিন পিটারসেনদের মতো তারকাদের বিরক্তির কারণও হয়েছেন এই লেগ স্পিনার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুজবেন্দ্র চাহালকে ‘ভাঁড়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা এবি ডি ভিলিয়ার্স। ক্রিস গেইল তো খেপে গিয়ে চাহালকে অত্যন্ত বিরক্তিকর তকমা দিয়ে ব্লক করারও হুমকি দিয়েছেন। তাতে অবশ্য চাহালের থোড়াই কেয়ার, নিজের দুষ্টামি আর সতীর্থদের সাথে খুনসুটির মাঝেই নিজেকে ব্যস্ত রাখেন এই লেগি।

তবে সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকেন বলে চাহালের জীবনে যে ভীতিজাগানো অভিজ্ঞতা নেই, তেমন নয়। ‘ভাঁড়’ খ্যাত চাহালের-ও রয়েছে না বলা কিছু কথা; সতীর্থদের নিয়েই রয়েছে কিছু বিভীষিকাময় স্মৃতি যা এতদিন নিজের মধ্যে লালন করে এসেছিলেন চাহাল।

অবশ্য শেষ পর্যন্ত নীরবতা ভেঙেছেন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ২০২২ সালের আইপিএলে খেলা এই স্পিনার। সতীর্থ করুন নায়ার ও রবিচন্দ্রন আশ্বিনের সাথে একটি আড্ডায় চাহাল তুলে ধরেছেন তার সাথে ঘটে যাওয়া কিছু স্মৃতি।

ঘটনাটি ২০১৩ সালের। চাহাল তখন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলের জুনিয়র সদস্য। আইপিএল চলাকালীন এক রাতে টিম পার্টিতে ছিলেন চাহাল সেখানে এক মাতাল ক্রিকেটার তাঁকে ১৫ তলা থেকে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন!

রাজস্থান রয়্যালসের পোস্ট করা ভিডিও-তে চাহাল বলেন, ‘আমার এই কাহিনি কিছু মানুষ জানে। কিন্তু কখনই খোলাখুলিভাবে এ নিয়ে কথা বলিনি। প্রকাশ করিনি এ ঘটনা। ২০১৩ সালে আমি মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের সঙ্গে ছিলাম। বেঙ্গালুরুতে একটা ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম। ম্যাচের পর একটি পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল সেদিন। একজন মাতাল বিদেশি খেলোয়াড় ছিলেন, আমি তাঁর নাম নেব না, দেখলাম তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। এরপর তিনি আমাকে ডাকলেন, বাইরে নিয়ে গেলেন। এরপর আমাকে ধরে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে আমাকে বাইরে ঝুলিয়ে রাখলেন!’

সুস্থ মস্তিষ্কে ভাবলে আপনিও শিউরে উঠবেন। পনেরো তলার বারান্দার বাইরে ঝুলিয়ে রাখার ব্যাপারটি কেমন মনে হয় আপনার? চাহালের ও বা কেমন লেগেছিল?

চাহাল নিজেই বলেছেন, ‘আমি কোনোভাবে তাঁকে ধরে রেখেছিলাম। কোনোভাবে আমার হাত যদি ফসকে যেত, বুঝতেই পারছেন। আমি ১৫ তলার বারান্দায় ছিলাম। ‘এরপরেই অনেক মানুষ এসে আমাকে উদ্ধার করেন, পরিস্থিতি শান্ত করেন। আমি প্রায় অজ্ঞান হয়েই গিয়েছিলাম। আমার মুখে পানি ছিটানো হলো। তখনই আমি বুঝলাম, কোথাও চলে যাওয়ার আগে অনেক ভেবেচিন্তে যেতে হয়। সেবার বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছিলাম। একটুও ভুল যদি হতো সেদিন, আমি ১৫ তলা থেকে পড়ে যেতাম।’

ঘটনা সেখানেই শেষ নয়, চাহালের জীবনের আরো একটি যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতি প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১১ সালে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার পিছনেও ছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলের বিদেশি সতীর্থরা। সেবার জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন এবং লেন্ডল সিমন্সের সাথে মুম্বাই দলের হয়ে আইপিএল খেলেছিলেন চাহাল। ফ্র্যাঙ্কলিন এবং সিমন্স এক রাতে, নিছক মজার উদ্দেশ্যই হয়তো, যুজবেন্দ্র চাহাল এর হাত,পা,মুখ বেঁধে এক রুমে ফেলে রেখে চলে যায়। এবং তারা পুরো রাত চাহালের কথা-ও ভুলে যায়।

পরদিন সকালে উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবে বন্দী অবস্থায় রুমের এক কোনা পড়েছিলেন আজকের ‘রসিক’ চাহাল।

আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে খেলেছিলেন, এরপর সামলেছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু’র স্পিন আক্রমন। এখন নাম লিখিয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসে। সবসময়ই হাসিখুশি এই ক্রিকেটার মাতিয়ে রাখেন পুরো দল-কে, মজা করেন সবার সাথে। কিন্তু তারই সাথে ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুর ‘মজা’ এতদিন লুকিয়েই রেখেছিলেন।

এমন সব অভিজ্ঞতার পরেও চাহাল যে সবসময় হাসিখুশি থাকেন, তা দেখে আশ্চর্য হতেই হবে। সদা হাসিখুশি আমুদে মানুষের জীবনেও এমন কষ্ট থাকতে পারে, সেটা চাহাল বলার আগে ক’জন ভাবতে পেরেছিলেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link