রুপগঞ্জের ঠিকানায় ভবনগরের চিঠি

দুপুরবেলা মায়ের কড়া নির্দেশ, যাওয়া যাবে না বাইরে খেলতে। এই নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়নি এমন ছেলে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কমবেশি আমি, আপনি আমরা সবাই মায়ের সে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে বাইরে খেলতে যাইনি তা কিন্তু নয়। গিয়েছি, আঘাত নিয়ে ভয়ে ভয়ে ফিরেছি। তবে কেউ কেউ সে আঘাতকে শক্তি আর মায়ের চোখ রাঙানিকে অনুপ্রেরণা মেনে নিয়ে হয়েছেন পেশাদার খেলোয়াড়। তেমনই একজন ভারতের চিরাগ জানি।

দুপুরবেলা মায়ের কড়া নির্দেশ, যাওয়া যাবে না বাইরে খেলতে। এই নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়নি এমন ছেলে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কমবেশি আমি, আপনি আমরা সবাই মায়ের সে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে বাইরে খেলতে যাইনি তা কিন্তু নয়। গিয়েছি, আঘাত নিয়ে ভয়ে ভয়ে ফিরেছি। তবে কেউ কেউ সে আঘাতকে শক্তি আর মায়ের চোখ রাঙানিকে অনুপ্রেরণা মেনে নিয়ে হয়েছেন পেশাদার খেলোয়াড়। তেমনই একজন ভারতের চিরাগ জানি।

ক্রিকেটার হিসেবে খুব একটা সুখ্যাতি নেই তাঁর। তবে ভারতের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এবং প্রাচীনতম ক্রিকেট টুর্নামেন্ট রঞ্জি ট্রফি যেতার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। শুধু যে জিতেছেন তা নয়, রীতিমত পারফরম করেছেন ব্যাট-বল হাতে। এই তো কদিন আগেই পেয়েছেন নিজের প্রথম শ্রেণি ক্যারিয়ারের সর্বপ্রথম দ্বিশতক। এর পরের ম্যাচেই খেলেছেন ১৪০ রানের এক দূর্দান্ত ইনিংস।

২০১৯/২০ মৌসুমের সৌরাষ্ট্রের হয়ে যেবার তিনি রঞ্জি জিতেছিলেন সেবার ছিলের দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পারফরমার। অলরাউন্ডার চিরাগ ৫৪৪ রান করেছিলেন। শুধু তাই নয় বল হাতেও নিয়েছিলেন ১৭টি উইকেট। একেবারে অলরাউন্ডার খোচিত এক পারফরমেন্সের পরিসংখ্যান। তবে তিনি হতেই পারতেন না ক্রিকেটার। কেননা তাঁর মায়ের ছিল কড়া নির্দেশ, হওয়া যাবে না ক্রিকেটার।

অথচ তাঁর বাবা ছিলেন একজন পুলিশ সদস্য। বাবার কাছ থেকেই বরং আরও বেশি নিষেধাজ্ঞা আসার কথা ছিল। তবে তাঁ ঘটেনি চিরাগের ক্ষেত্রে। বাবা তাঁকে সমর্থন জুগিয়ে গেছেন একেবারে শুরু থেকেই। চিরাগ বলেন, ‘আমার বাবা একজন পুলিশ সদস্য ছিলেন আর আমার মা একজন গৃহিনী। আমার মা আমাকে খেলতে দেখতে পছন্দ করতেন না তবুও আমি ঘর থেকে লুকিয়ে বের হতাম আর ক্রিকেট খেলতাম। আমার বাবা আমাকে প্রচণ্ডভাবে সমর্থন দিয়ে গেছেন।’

বাবার সমর্থনে ক্রিকেটার হয়েছেন ঠিক। তবে ক্রিকেটকে নিজের পুরোটা সপে দিতে পারেননি চিরাগ। মা নিশ্চয়ই চেয়েছেন ছেলে একটা সরকারি চাকরি করুক। মায়ের কথাও রেখেছেন চিরাগ। তিনি চাকরি করছেন ভারতের ডাকবিভাগে। তবুও ক্রিকেটের জন্যে একটা টান তো রয়েই গেছে তাঁর। ক্রিকেট তো তাঁর জীবনের প্রথম প্রেম। সে প্রেম কি আর ভোলা যায়? যায় না।

তাইতো ভবনগর থেকে ক্রিকেটই সব এমন এক বার্তা নিয়ে তিনি হাজির হয়েছেন রুপগঞ্জে। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের দল লেজেন্ডস অব রুপগঞ্জ হয়েছে তাঁর ঠিকানা। খেলছেন মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বাধীন দলে। তাহলে বুঝুন, ঠিক কতটা অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ এবারের লেজেন্ড অব রুপগঞ্জ। রঞ্জি ট্রফি বিজেতা যেমন এ দলে আছেন তেমনি এ দলে রয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম সফল অধিনায়ক।

সে অন্য আরেক গল্প। চিরাগের গল্পে ফেরা যাক। শৈশবে নিষেধ থাকলেও স্কুল জীবন থেকেই ক্রিকেট খেলাটা শুরু করেন চিরাগ জানি। তিনি বলেন, ‘আমি স্কুল জীবন থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু করি। আমি ভবনগরে থাকতাম। সেখানে কোন অনুশীলনের জন্যে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তবুও আমি ক্রিকেট অনুশীলন চালিয়ে যাই। আর স্কুল পর্যায়ে খেলার পর আমি ভবনগরেই অনুষ্ঠিত হওয়া অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ট্রায়ালে অংশ নেই।’

অনূর্ধ্ব ১৭ দলের সে ট্রায়াল থেকেই মূলত শুরু চিরাগ জানির পেশাদার ক্রিকেটের পদযাত্রা। এরপর তিনি ভিন্ন ভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলে তিনি নিজেকে পরিণত করেছেন। মাঝে ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাথে যুক্ত ছিলেন। তবে তাঁদের হয়ে কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর। নানা প্রতিকূলতার পরও তিনি ক্রিকেটটা চালিয়ে গেছেন বলেই তো তিনি টিকে আছেন আজো।

এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দারুণ ছন্দে রয়েছে তিনি। চারটি অর্ধশতক ছাড়াও ১২২ রানের অসাধারণ এক ইনিংসও উপহার দিয়েছেন লেজেন্ড অব রুপগঞ্জকে। ডিপিএলে তাঁর ব্যাট থেকে এখন পর্যন্ত এসেছে ৪১০ রান। শুধু যে নিজের ব্যাটার সত্ত্বাকে তুলে ধরছেন তিনি তা কিন্তু নয়। পুরোদস্তুর একজন অলরাউন্ডার হিসেবেই পারফরম করেছেন তিনি। ১২টি উইকেটও রয়েছে তাঁর নামের পাশে।

সিটি ক্লাবের বিপক্ষে মাত্র ২৮ রান দিয়ে নিয়েছিলেন চার উইকেট। ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটে অর্জন করা সবটুকু অভিজ্ঞতা নিংড়ে দিচ্ছে চিরাগ জানি এবারের ডিপিএলে। লেজেন্ডস অব রুপগঞ্জের চিরাগ বাতি হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন, আর নিজের প্রথম প্রেম ক্রিকেটের সাথে কাটাচ্ছেন দারুণ এক সময়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...