রাহুল তেওয়াতিয়া, হোয়াট আ ফিনিশার!

ডাগ আউটে হাসিমুখেই মাথায় হাত দিয়ে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে আছেন গুজরাট অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া! ক্রিজে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন বোলার ওডেয়ান স্মিথও। মুম্বাইয়ের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে দর্শকরাও যেন বিস্মিত! পাঞ্জাবের সমর্থকরা যেন হতবাক। দুই বল আগেই যারা জয়ের আনন্দে অগ্রিম উদযাপনে মেতে উঠেছিল তাঁদের চোখেমুখেই এখন স্পষ্ট হতাশার ছাপ। এই সবকিছুর পেছনে একটি নাম - রাহুল তেওয়াতিয়া।

শেষ ২ বল, প্রয়োজন ১২ রানের।

ক্যারিবিয়ান পেসার ওডেয়ান স্মিথের ফুলার লেন্থে করা পর পর দুই বল মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা! ম্যাচের সমাপ্তি!

কল্পনা কিংবা রূপকথার গল্প নয়, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি!

ডাগ আউটে হাসিমুখেই মাথায় হাত দিয়ে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে আছেন গুজরাট অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া! ক্রিজে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন বোলার ওডেয়ান স্মিথও। মুম্বাইয়ের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে দর্শকরাও যেন বিস্মিত! পাঞ্জাবের সমর্থকরা যেন হতবাক। দুই বল আগেই যারা জয়ের আনন্দে অগ্রিম উদযাপনে মেতে উঠেছিল তাঁদের চোখেমুখেই এখন স্পষ্ট হতাশার ছাপ।

এই সবকিছুর পেছনে একটি নাম – রাহুল তেওয়াতিয়া।

২০২০ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেই লাইমলাইটে এসেছিলেন। ক্যারিবিয়ান পেসার শেলডন কটরেলকে হাঁকিয়েছিলেন এক ওভারে পাঁচ ছক্কা। ছক্কা বৃষ্টিতে শারজাহতে সেবার হারের মুখ থেকে দলকে উঠিয়ে এনে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়েছিলেন তেওয়াতিয়া।

সেই ঘটনায় কেটে গেছে দেড় বছর। সময় বদলেছে, দল পালটে তেওয়াতিয়া এখন রাজস্থান থেকে গুজরাটে। কিন্তু পাল্টায়নি পাঞ্জাবের বিপক্ষে তাঁর সেই আগ্রাসী রূপ। দলটা যদি হয় পাঞ্জাব আর বোলার যদি হয় ক্যারিবিয়ান তাহলে তেওয়াতিয়ার জন্য যেন পোয়া বারো। মুম্বাইয়ে গেল রাতে পাঞ্জাবের বিপক্ষে ক্যারিবিয়ান পেসার স্মিথের উপর তাণ্ডব চালিয়ে আবারও অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিলেন তেওয়াতিয়া।

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে লিয়াম লিভিংস্টোনের ২৭ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৯ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করায় পাঞ্জাব কিংস। বল হাতে এক ওভারে ২৪ রান দিয়েছিলেন রাহুল তেওয়াতিয়া। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাহুলকে ওভাররেটেড থেকে শুরু করে ট্রল বন্যায় ভাসিয়েছেন সমর্থকরা।

তবে পাশার দান উলটে যেতে সময় লাগেনি। লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শুভমান গিলের ৫৯ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৯৬ রানের ঝড়ো ইনিংসে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে গুজরাট। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৪ রান দূরে ৯৬ রানে আক্ষেপ নিয়ে গিল ফিরলে সাত বলে দরকার ছিল তখন ২০ রানের! সেখান থেকে তিন বলে প্রয়োজন ১৩ রানের! স্ট্রাইকে ছিলেন ডেভিড মিলার।

স্মিথের চতুর্থ বলটা ঠিকভাবে মারতে পারেননি মিলার। স্মিথের হাতেই আসে বল! কিন্তু রান নেওয়ার জন্য ক্রিজ ছেড়ে খানিকটা বেরিয়ে আসেন বোলিং প্রান্তে থাকা তেওয়াতিয়া। আর তাঁকে আউট করার নেশায় মত্ত হয়ে থ্রো করেন স্মিথ। ব্যাস, ওভারথ্রো থেকে পেয়ে গেলেন একটি রান। এই এক রানই কাল হয়ে দাঁড়ায় স্মিথ ও পাঞ্জাবের জন্য।

শেষ ২ বলে প্রয়োজন ১২ রানের। ম্যাচে পাঞ্জাবের জয় প্রায় নিশ্চিত। যদি-কিন্ত থাকলেও দুই বলে দুই ছক্কা নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু সেই অসাধ্যই যেন সাধন করে ফেললেন তেওয়াতিয়া। শেষ দুই বলই ইয়োর্কার লেন্থে করতে যান স্মিথ। কিন্তু দুই বলই পড়ে যায় ফুলার লেন্থে। সেখান থেকেই উঠিয়ে নিয়ে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে পর পর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে অবিশ্বাস্য জয় তুলে নেন তেওয়াতিয়া। তেওয়াতিয়ার ৩ বলে অপরাজিত ১৩ রানে ৬ উইকেটের দুর্দান্ত জয় পায় গুজরাট টাইটান্স।

একই ম্যাচে আবারও মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখালেন তেওয়াতিয়া। ঠিক যেন দেড় বছর আগে শারজাহর সেই ঘটনার খানিকটা পুনরাবৃত্তি। সেবারও ব্যাট হাতে একের পর এক ডট বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তখন ট্রল আর হাস্যরসে তেওয়াতিয়া। এরপরই হঠাৎ পালটে যায় ম্যাচের চিত্র। অবিশ্বাস্য তাণ্ডবময় ইনিংসে শূন্য থেকে ম্যাচের নায়ক তেওয়াতিয়া।

টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে ২ বলে ১২ রান থেকে ম্যাচ জেতানো তৃতীয় ক্রিকেটার হলেন রাহুল তেওয়াতিয়া। এর আগে ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেট দল ডলফিনের বিপক্ষে এক ম্যাচে প্রয়োজন ছিল ২ বলে ১২ রানের। সেখান থেকে পর পর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে এই রেকর্ডে প্রথম নাম তুলেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার মিশেল মার্শ। এরপর ২০১৬ সালে আইপিএলেই কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে শেষ ২ বলে চেন্নাই সুপার কিংসের দরকার ছিল ১২ রানের। অক্ষর প্যাটেলকে পর পর দুই ছক্কা হাঁকয়ে জয় তুলে নিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

মার্শ ও ধোনির পর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তেওয়াতিয়া। আইপিএল ইতিহাসে এমন কাণ্ড ঘটেছে দুইবার। আর এই দুইবারই জয়ের কাছ থেকে এমন অবিশ্বাস্য পরাজয়ে প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিল পাঞ্জাব!

টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে ১ বলে ছয় রান দরকার এমন অবস্থায় ছক্কা মেরে ম্যাচ জিতিয়েছেন মোট দশজন। পাঞ্জাবের বিপক্ষে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে এই তালিকার সবশেষ সংযোজন রাহুল তেওয়াতিয়া। আইপিএল ইতিহাসে ধোনির পর তিনি দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে এমন কীর্তি গড়েছেন।

স্মিথের অযাচিত এক ওভারথ্রো কাল হয়ে দাঁড়ালো পাঞ্জাবের জন্য। অবশ্য কেই বা জানতো তেওয়াতিয়া পাঞ্জাবের বিপক্ষে সেই বিধ্বংসী রূপটা এখনও পুষে রেখেছেন!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...