৩৮ ইঞ্চির এক কাঠের টুকরো। ওজন আর কত হবে সর্বোচ্চ দেড় কেজি। যেদিন সে টুকরো আপনার হয়ে কথা বলবে সেদিন ইতিহাস হওয়া যেন অবধারিত। সেদিন কোটিখানেক আঁখি যুগলে যেন মুগ্ধতা ছড়িয়ে যেতে বাধ্য। তেমনই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ইংলিশ ব্যাটার জশ বাটলার। অদ্ভুত ভাবে তাঁর হাতে থাকা ওই সেই কাঠের টুকরো গলা ফাঁটিয়ে কথা বলছে তাঁর হয়ে।
জোসেফ চার্লস বাটলার, ইংলিশ ব্যাটার। বেশ সমৃদ্ধ এক ক্যারিয়ার। তবে সাদা বলের ক্ষুদ্র সংস্করণে তিনি রয়েছে ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে। তিনি যেন নিজেকে নতুন করে পরিচয় করি দিচ্ছেন টি-টোয়েন্টি সংস্করণের সাথে। হয়ত তিনি এতদিন বাদে এসে আন্দাজ করতে পেরেছেন ঠিক কি করে খেলতে হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। ঠিক কতটা বিধ্বংসী, আগ্রাসী হতে হয় ধৈর্য্যকে সাথে নিয়ে। এসব কিছুই যেন এখন বাটলারের নখদর্পণে।
কি দারুণ ফর্মে রয়েছেন তিনি! কি অসাধারণ ব্যাটিং করছেন! মন যেন জুড়িয়ে যায়, চোখ যেন আরও দেখতে চায়। ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে তিনি খেলেছেন মোটে ছয় ম্যাচ। এর মধ্যেই পেয়ে গেছেন দুইটি দূর্দান্ত সেঞ্চুরি। কি মারকাটারি ব্যাটিং তাঁর! কোন বোলারই যেন তাঁর সামনে ঠিক দাড়ানোর সাহসটুকু পাচ্ছে না। যে আসছে সেই বেধম পিটুনি খেয়ে মাথা নিচু করে বাটলারের প্রতিকার ভাবছে।
তবে তাঁর যেন কোন প্রতিকার নেই। তিনি অপ্রতিরোধ্য, অদম্য। সময়ও তাঁর পক্ষে। তাঁর পক্ষে তাঁর সেই কাঠের টুকরো। তিনি তাঁর তাণ্ডবে যেন থামাতেই নারাজ। বাইশ গজের নটরাজ তিনি। সেখানে চালাচ্ছেন তাণ্ডবলিলা। সব যেন তাঁর সামনে তুচ্ছ, সব কিছুই যেন বড্ড নরবরে। একমাত্র তিনি দৃঢ়, তিনিই আবার ঝড়। এত সব বিশেষণ দিয়েও যেন ঠিক জশ বাটলারের ফর্ম বা তাঁর ব্যাটিংয়ের মাহাত্ম্যকে বেঁধে ফেলা যাচ্ছে না।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গেল মাত্র ২৭ ম্যাচে তিনি সেঞ্চুরি করেছেন চারটি। অথচ এর আগে অবধি তাঁর খেলা ২৮১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেই কোন সেঞ্চুরি। এবার বুঝুন তবে। ঠিক কতটা বিধ্বংসী হয় উঠেছেন জশ বাটলার। তবে বিধ্বংসী কিংবা ধৈর্য্যশীল হওয়া ছাড়াও তিনি খেলছেন রীতিমত ভয়ডরহীন ক্রিকেট। এই তো দ্বিতীয় যে সেঞ্চুরি করলেন আইপিএলে কলকাতার বিপক্ষে সেখানেই তো প্রমাণ রাখলেন।
নব্বইয়ের ঘরে তিনি, ৯৬ রান করেছেন। নির্ভয়ে তিনি প্যাট কামিন্সের ফুলটস বলে শ্রুতিমধুর টাইমিং এবং বিশাল ছক্কা। ছয় মেরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি আদায় করে নেন তিনি। যদিও সে ওভারেই তাঁকে তুলে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিয়াক কামিন্স। বাটলারের এই ফর্ম সবচেয়ে বেশি আনন্দের কারণ হচ্ছে রাজস্থান রয়্যালসের জন্যে। ব্যাটিং ইনিংসের শুরুটা যদি এত আগ্রাসী হয় তবে ম্যাচ জেতা তো অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
তাছাড়া প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই তো হাসছে বাটলারের ব্যাট। সে কাঠের ৩৮ ইঞ্চির এক তক্তায় তো রান হচ্ছে বাদল দিনের মত। সে বাদলে ভিজে যেতে চায় সবাই, রাজস্থান তপ্ত মরুপ্রান্তরে যেন প্রশান্তির বাদল এখন জশ বাটলার। সবচেয়ে প্রশংসনীয় তাঁর স্ট্রাইকরেট। সেটা এখন অবধি রয়েছে দেড়শোর অনেক উপরে। সেটাও তো ফেলে দেওয়ার মত কোন পরিসংখ্যান নয়।
সে পরিসংখ্যানের সাথে যুক্ত হতে পারে তাঁর দুইটি ফিফটি। একটিতে তো ৭০ করেছিলেন হার না মেনে। এমন ফর্ম হয়ত প্রতিটা ব্যাটারের স্বপ্ন। টি-টোয়েন্টি যে বলকে তুলোধুনো করার খেলা সেটা বোঝাতে তো ঠিক জশের মত করেই জৌলুস ছড়াতে হয় ক্রিকেটের সেই সবুজ গালিচায়। জশ বাটলার হয়ত আরও বেশি মুগ্ধতা ছড়াবেন। শতকের ট্যালি ঘরে কাটবেন আরও বেশ কিছু। তর সইছে না!