তবুও অনন্য এই লড়াই

জীবনের চেয়ে ক্রিকেট অনেক সহজ। একটা ম্যাচ জেতার চেয়ে জীবনের বাইশ গজে টানা টিকে থাকার সংগ্রাম করাটা খুব কঠিন। তার ওপর যদি ব্রেন টিউমারের মত প্রাণঘাতি অভিশাপ যোগ হয়, তখন ব্যাট করাটা আরো মুশকিল হয়ে যায়। যেমনটা হল ক্রিকেটার মোশাররফ রুবেলের ক্ষেত্রে।

একদম জীবনের সর্বোচ্চটুকু দিয়েই লড়াই করেছিলেন। নিজের পরিবার তো বটেই, লড়াইয়ে সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা থেকে শুরু করে যুক্ত ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি।) কিন্তু, শেষ অবধি আর লড়তে পারলেন না। ব্রেন টিউমারের শেষ বাউন্সারটা আর সামলাতে পারলেন না ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল। চলে গেলেন জীবন নদীর ওপারে।

দীর্ঘদিন ব্রেন টিউমারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। দুদিন আগেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় যান। আজ অবস্থার অবনতি হলে আবার হাসপাতালে নেয়া হয়, সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘ইমপ্যাক্ট’ ক্রিকেটার বলতে যা বোঝায় তিনি পুরোটাই তাই। বল হাতে ক্যারিয়ারের সোনালী সময়ে তাঁকে বলা হত আগামী দিনের মোহাম্মদ রফিক। লোয়ার অর্ডারে তাঁর ব্যাটের মূল্যবান রানের দিকে তাকিয়ে থাকে দলগুলো।

তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন যোদ্ধা। ৩৪ বছর বয়সেও যে সংগ্রাম করে জাতীয় দলে ফেরা যায়, সেটা বাঁ-হাতি এই স্পিনার প্রমাণ করেছেন ২০১৬ সালে। ২০১৯ সালেও তিনি বেশ ভাল মতই ছিলেন লড়াইয়ে। দিব্যি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন, পারফরম করছেন।

কিন্তু, এর মধ্যেই হঠাৎ করে এল দু:সংবাদ। ব্রেন টিউমারে স্ত্রৗ ও এক ছেলের ছোট্ট সাজানো সংসারে নেমে এল দু:স্বপ্ন। রুবেলের পরিবার অবশ্য হাল ছাড়েনি। সবাই মিলেই লড়াই চালিয়েছিলেন।  কিন্তু, তাতে শেষ রক্ষা হল না। মাত্র ৪০ বছর বয়সেই জীবনাবসান হল তাঁর।

বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সিতে পাঁচটি ওয়ানডে খেলেছেন। পেয়েছেন চারটি উইকেট। রান করেছেন ২৬ টি। তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। ১১২ টি ম্যাচে প্রায় ৪০০ উইকেটের সাথে ব্যাট হাতে করেছেন তিন হাজারের ওপর রান। অথচ, টেস্টের সাদা পোশাক কখনও গায়েই চড়াতে পারলেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ খেতাবধারী ছিলেন রুবেল। নিষিদ্ধ ক্রিকেট আসর ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) গিয়েছিলেন। আইসিএল-ফেরত না হলে হয়তো জাতীয় দলে আরো লম্বা সময় সার্ভিস দিয়ে যেতে পারতেন।

ক্যান্সার থেকে ফিরে ভারতের যুবরাজ সিং আবারও ক্রিকেট খেলেছিলেন আন্তর্জাতিক ময়দানে। কিন্তু, মোশাররফ রুবেল আর পারেননি। লড়াইয়ে শেষ অবধি জিততে না পারলেও অনবদ্য এক লড়াইয়ের অনন্য দৃষ্টান্তই গড়ে গেলেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। এই লড়াইটার জন্য হলেও তাঁকে আজীবন মনে রাখবে বাংলাদেশের ক্রিকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link