ইমরুল এখন সত্যিকারের ‘অলরাউন্ডার’

শেখ জামালের হয়ে ব্যাট হাতে রান করে যাচ্ছিলেন নিয়মিতই। ইমরুল কায়েস ব্যাটিং এর পাশাপাশি দলের প্রয়োজন হলে কিপিংটাও করেন। সেটা সবারই জানা। বাংলাদেশের হয়েও উইকেটের পিছন সামলেছেন ইমরুল কায়েস। তবে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দেখা গেল ইমরুলের নতুন এক সংযোজন।

প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বলও করলেন ইমরুল কায়েস। একই ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছেন ১৫ রান। আবার উইকেট কিপিং গ্লাভসও পড়েছিলেন তিনি। বল হাতে অবশ্য খুব একটা ভালো করতে পারেননি। এক ওভার বোলিং করে খরচ করেছিলেন ৯ রান।

আর ইমরুল কায়েসের বোলার হয়ে ওঠাতে নাকি সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলেন স্বয়ং সাকিব আল হাসান। সাকিব নাকি তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুই চাইলেই ভালো বোলিং করতে পারিস।’

একদম কৈশোরে নাকি বোলার হিসেবেই যাত্রা শুরু করেছিলেন ইমরুল কায়েস। এই রহস্যটা তিনি নিজেই জানালেন। অফস্পিন বোলিং করতেন। সেই সূত্রেই প্রথম ক্যাম্পে আসেন। এরপর কালক্রমে হয়ে ওঠেন পুরোদস্তর ব্যাটার। তবে, নিজের পুরনো পরিচয়ে একটু একটু করে আবারও ফিরতে শুরু করেছেন ইমরুল।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য এমন বিস্ময়কর ঘটনা আমরা আগেও দেখেছি। যেমন মহেন্দ্র সিং ধোনি একবার কিপিং গ্লাভস তুলে রেখে বল হাতে নিয়েছিলেন। আবার আমাদের হাবিবুল বাশার সুমনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করেছেন। এবার ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিং করে দেখালেন ইমরুল কায়েসও।

ইমরুলের উইকেটরক্ষণের ক্যারিয়ারটাও বেশ বর্ণাঢ্য। নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে একবার মুশফিকুর রহিমের হঠাৎ ইনজুরিতে তাঁকে দাঁড়াতে হয়েছিল উইকেটের পেছনে। রীতিমতো বিশ্বরেকর্ড করে ফেললেন। বিশ্বের প্রথম বদলী উইকেটরক্ষক হিসেবে পাঁচটা ক্যাচ নিলেন এক ইনিংসে। এরপর পরের ইনিংসে ব্যাট হাতেও ইনিংসের সূচনা করলেন।

ওয়ানডে কিংবা টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে কয়েকটি সফল ওপেনিং পার্টনারশিপ আছে তাঁর অর্ধেক কৃতিত্বই তাঁর। আরেক প্রান্তে ছিলেন দেশের ক্রিকেটের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল খান। তর্ক সাপেক্ষে এখন পর্যন্ত তামিম ইকবালের সেরা সঙ্গীও বলা যায় ইমরুল কায়েসকে। ইমরুল কায়েস বাংলাদেশের ক্রিকেটে দিয়েছেন অনেক কিছুই তবে কখনোই প্রিয় পাত্র হয়ে উঠতে পারেননি।

বাংলাদেশ দল বিপদে পড়লেই তাঁকে ডাকা হয়েছে। কোন ওপেনারের ইনজুরি হলেও দলে ডেকে আনা হয়েছে এই ইমরুল কায়েসকেই। বাংলাদেশ দলের বিপদের বন্ধু এই ইমরুল। আবার নিজেও মাঝে কয়েক বছর জায়গাটা পাকা করতে পেরেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে ২০১৪ সালের পর বছর দুয়েক টানা খেলেছিলেন। সেই সময় তামিম ইকবালের সাথে বেশ কিছু স্মরণীয় পার্টনারশিপও আছে তাঁর।

তবে লিটনরা আসার পর থেকেই জাতীয় দলে তাঁর জায়গা কমতে থাকে। আস্তে আস্তে জাতীয় দলের পরিকল্পনার বাইরেই চলে আসেন এই ওপেনার। তবুও ঘরোয়া ক্রিকেট, কিংবা বিপিএলের মত আসর গুলোতে আপনি তাঁকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না।

আবার বিপিএলেরও সফলতম অধিনায়ক তিনি। এবারো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স তাঁর নেতৃত্বে শিরোপা জিতলো। এবার ফাফ ডু প্লেসিস, মঈন আলী, মাহমুদুল হাসান জয়দের নিয়ে গড়া ব্যাটিং লাইন আপ। পিঞ্চ হিটার ধরলে সুনীল নারাইনও ছিলেন। এছাড়া এত তারকার ভিড়ে একাদশে সুযোগই হচ্ছিল না আরেক সম্ভাবনাময় ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনের। এর মাঝেও ছিলেন ইমরুল।

আবার তাঁর নেতৃত্বে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব। যদিও ডিপিএল কিংবা বিপিএলে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর এই সাফল্যের জন্য যতটা না প্রশংসিত হন তারচেয়ে বেশি ট্রলই হয় তাঁকে নিয়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ইমরুলের জায়গাটাই যেন এমন।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রিয় পাত্র হতে পারেননি তিনি কখনো। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েই আছেন ইমরুল কায়েস। তিনি ভালো খেলেন কিংবা মন্দ তাঁকে নিয়ে ট্রল হবেই। আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ইমরুল কায়েসের গল্পটাই ভিন্ন। তবুও ক্রিকেটটাকে ভালোবেসে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন ইমরুল।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link