ধোনি গল্পের কার্তিক

২০০৪ সাল। ভারত এ দলের জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া সফর। ভারত এ দলের স্কোয়াডে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও দীনেশ কার্তিক। এই দু’জন ছাড়াও গৌতম গম্ভীর, আকাশ চোপড়া, রোহান গাভাস্কাররাও ছিলেন দলে। উইকেটরক্ষক হওয়া সত্ত্বেও অনুশীলনের ধোনি প্রায় সবাইকেই বল করছিলেন।

জিম্বাবুয়ে সফরের সময় আকাশের রুমমেট ছিল ধোনি। আকাশ সরল মনে ধোনিকে বললেন – নেটে কার্তিককে বল করো না! ও জাতীয় দলের রাডারে আছে। সিনিয়র দলে সুযোগ পেয়ে যাবে। সে সময় ভারত জাতীয় দলের একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটারের সংকটও ছিল।

আকাশের ধারণাই অবশ্য ঠিক হল। প্রায় দুই সপ্তাহের জিম্বাবুয়ে সফর শেষে ভারত জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে গেলেন গাভাস্কার ও কার্তিক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দলে কার্তিক-গাভাস্কার। একদিকে, ভারত এ দল কেনিয়ার উদ্দেশ্য উড়াল দিল। আরেকদিকে, কার্তিক-গাভাস্কাররা জিম্বাবুয়ে থেকে লন্ডনের বিমানে পাড়ি জমালেন জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য।

কার্তিক না থাকায় কেনিয়া সফরে বাধ্যতামূলক কিপিং গ্লাভসটা তাই ধোনির হাতেই উঠলো। শুধু কেনিয়া সফর বলাটা ভুল হবে। কারণ পাকিস্তান এ দলও ছিল – সোজা কথায় ত্রিদেশীয় সিরিজ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কার্তিকের অভিষেক। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর স্বপ্নটা পূরণ হয়ে গেল কার্তিকের। আরেক মহাদেশে ধোনি কেনিয়ার বিপক্ষে লড়াই করে চলেছেন নিজের সামর্থ্য প্রমাণের জন্য। সেই লড়াইয়ে ধোনি অবশ্য স্রেফ পাশই করেননি, বরং লেটার মার্ক পেয়ে গেলেন! কেনিয়া সফরে ভারত এ দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেন ধোনি।

ওই সফরের পরই লাইমলাইটে এলেন এই সম্ভাবনাময় উইকেটরক্ষক ব্যাটার। বছর না গড়াতেই জাতীয় দলে উঠে এলেন ধোনি! সেই ত্রিদেশীয় সিরিজের পারফরম্যান্সের পর ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাদা পোশাকে অভিষেক ধোনির। তবে জাতীয় দলে ধোনি ছিলেন স্রেফ একজন ব্যাটার হিসেবে। কারণ কার্তিক ততদিনে গ্লাভস হাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।

বছর দুয়েক পরেই অনুষ্ঠিত হল বিশ্বকাপ আসর। সেখানে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বে মহেন্দ্র সিং ধোনি। গ্লাভসটাও তাঁর হাতে। দলের আস্থা, ভরসা, বিশ্বাস – সবটাই যেন ধোনির উপর। কিন্তু কার্তিকের অবস্থান কোথায়?

ধোনির আগে জাতীয় দলে পা দেওয়া সেই সম্ভাবনাময় কার্তিক তখন জাতীয় দলের বাইরে। ধোনির কাছে জায়গা হারিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন। সময়ের ব্যবধানে সেখান থেকে ধোনি বনে গেলেন বিশ্বসেরাদের একজন। অধিনায়ক হিসেবে জিতলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপ ট্রফি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি, চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা! কতক দ্বিপাক্ষীক সিরিজ। গ্লাভস হাতে তিনি বিশ্বের সেরাদের একজন। সেরাদের সেরা বলতেও হয়ত অধিকাংশই দ্বিধা করবে না।

সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটারদের একজন ধোনি। ঠিক মুদ্রার আরেক পিঠে কার্তিকের অবস্থান। সেই যে ধোনির কাছে জায়গা হারালেন, আর নিয়মিত হতে পারেননি। দলে এসেছেন, ম্যাচ খেলেছেন; পুনরায় বাদ। কার্তিকের ক্যারিয়ার সাইকেলটা এভাবেই চলে এসেছে। জাতীয় দলে নিজের জায়গা কখনোই পাঁকা করতে পারেননি তিনি।

পেছনে ফেরা যাক। ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) উদ্বোধনী আসর। নিলামের আগেই কার্তিকের প্রত্যাশা ছিল চড়া দামে চেন্নাই সুপার কিংস তাকে কিনে নিবে। তামিল নাড়ুর হয়ে সবচেয়ে বড় তারকা তো তিনিই ছিলেন – তাই প্রত্যাশা করাটাই স্বাভাবিক। তবে ভাবনা-চিন্তা সব পালটে গেল নিলামের দিন। কার্তিকের আশায় পানি ঢেলে নিলামে ধোনিকে দলে ভেড়ালো চেন্নাই।

এখন বছরের হিসেবে সাল – ২০২২। জাতীয় দল থেকে ধোনির বিদায় হয়েছে আরও বছর খানেক আগে। জাতীয় দলের জার্সি ছেড়ে স্রেফ আইপিএল খেলছেন। হয়ত আর এক মৌসুম পর ক্রিকেট থেকেই বিদায় নিবেন। কিন্তু এখনও জাতীয় দলে ফেরার প্রতিযোগিতায় ছুঁটছেন কার্তিক। আইপিএলের পঞ্চদশ আসরে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে চলেছেন। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই মেলাতে সেরাটাই দিচ্ছেন।

কার্তিকের ১৭ বলে অপরাজিত ২৬ রানে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। সেই কার্তিকের ক্যামিওতেই এবারের আসরের প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে গেল ধোনির চেন্নাই। একসাথে পথচলা শুরু। মুদ্রার এপিঠে একজন বনে গেলেন সেরাদের একজন; আরেক পিঠে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর জন্য ছুঁটছেন আরেকজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link