এক সময় মাসিক অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে ঝাড়ুদারের কাজ করে পরিবারের অর্থনীতিতে সাহায্য করতেন। কিন্তু যার নেশা ক্রিকেট, তাঁর পেশা সেটি হবে; বিধাতা হয়তো এমনটাই লিখে রেখেছিলেন। আর তাই কাজে ইস্তফা তিনি ফিরেছিলেন ক্রিকেটে। এরপর আইপিএলের নিলামে টাকা পাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পেশাদার ক্রিকেটে পথচলা। অন্ধকার গলি থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি দুনিয়ার এই আলোকজ্জ্বল সড়ক – এমন পথের পথিক এক ভারতীয় তরুন, রিংকু সিং।
রিংকুর প্রথম জীবনটা কিন্তু যথেষ্ট কঠিন ছিল। ১৯৯৭ সালে উত্তর প্রদেশের আলিগড়ে জন্ম রিংকুর। তাঁর বাবা কাঞ্চন সিং এলপিজি বিতরণের কাজ করেন। গ্যাস এজেন্সির স্টোরেজ কম্পাউন্ডে ৪ ভাইবোন ও মা বাবার সঙ্গে থাকতেন রিংকু। কিন্তু বাবার সিলিন্ডার বিতরণের কাজে সংসার চলত না। তাই ঝাড়ুদারের কাজ করতে শুরু করেন তিনি। সেসময় থেকে শুরু হয় ক্রিকেট খেলা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা।
উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে পরিবারের অর্থকষ্টের মাঝে বড় হওয়া রিংকু প্রায় এক যুগ আগে ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটের স্রোতে প্রবেশ করেন। ২০১৩ সালে তিনি উত্তর প্রদেশ অনূর্ধ্ব
১৬ দলে সুযোগ পান, এবং এর কয়েক বছর পর অনূর্ধ্ব ১৯ দলে জায়গা করে নেন। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে স্থানীয় টুর্নামেন্টে নিজের প্রতিভার প্রমান দিয়েছিলেন রিংকু।
সেসময় থেকেই হার্ডহিটার হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন রিংকু সিং। বিজয় হাজারে ট্রফিতে ত্রিপুরা’র বিপক্ষে ৪৪ বলে ৯১ রানের একটি ইনিংস তাকে নিয়ে আসে ক্রিকেট ট্যালেন্ট হান্টারদের নজরে। ২০১৭ সালে প্রথমবার তিনি স্থান পান আইপিএলের নিলামে, আর সেবারই কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব তাকে কিনে নিয়েছিল দশ লক্ষ রুপিতে।
দুর্ভাগ্য এবারও পিছু ছাড়ে নি রিংকু সিংয়ের, পুরো আসর তাকে বসে থাকতে হয় পাঞ্জাবের সাইড বেঞ্চে। পরের বছর অবশ্য নিলামে কিছুটা কাড়াকাড়ি হয় তাকে নিয়ে, ভিত্তিমূল্যের চারগুন দামে, আশি লক্ষ রুপিতে আলিগড়ের তরুনকে দলে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। আইপিএল খেলা আলিগড়ের প্রথম ক্রিকেটার রিংকু সিং।
কলকাতার হয়ে নিজের প্রথম আসরে খুব একটা সুযোগ মেলেনি তার, খেলেছেন মাত্র চার ম্যাচ। এই চার ম্যাচে ব্যাট থেকে এসেছে মোটে ২৯ রান। তবে এই তরুণের উপর ভরসা রাখে কলকাতা, আর তাই ২০১৮ থেকে ২০২২ দীর্ঘ এই সময়টা রিংকু কলকাতা তেই কাটাচ্ছেন।
এই লম্বা সময়ে চোট, আর ড্রেসিংরুমে অন্য বড় নামের ভারে সুযোগ পাননি ঠিকমত। এখন পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ১৪ ম্যাচ। তবে নিজেকে যোগ্য প্রমাণের মঞ্চে সফল হয়েছেন তিনি৷ রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে যখন ব্যাট হাতে নেমেছিলেন রিংকু সিং তখন দলের প্রয়োজন ৪৩ বলে ৬৬৷ কিছুটা পর সে সমীকরন দাঁড়ায় ৩০ বলে ৪৬। নিতিশ রানাকে সঙ্গী করে মাত্র ২৩ বলে ৪২ রান করে দলকে জয় এনে দেন বামহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান৷
শুধু দারুণ এক জয় এনে দেননি রিংকু, রীতিমতো ঘোষনা দিয়েই নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। মাঠে নামার আগে নিজের হাতে লিখেছিলেন অপরাজিত ৫০। না, তার অর্ধশতক পূর্ণ হয়নি তবে যা করেছেন তাতেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন রিংকু। এর আগে এবারের মৌসুমে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন রিংকু, সে ম্যাচে ২৮ বলে করেছিলেন ৩৫ রান। এছাড়া চারটা ক্যাচ ধরে ফিল্ডিংয়েও নিজের সক্ষমতা দেখান তিনি।
এক সময়ের সুইপার কলকাতা নাইট রাইডার্সকে সুইপ শটে জিতিয়েছেন; ব্যাট দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়েছেন তাকে নিয়ে করা অযাচিত সব ট্রল আর হাসাহাসিকে। রিংকুকে ঘরোয়া স্তরে উত্তর প্রদেশের হয়ে দেখতে অভ্যস্ত দর্শকরা, আর এখন তিনি আইপিএলের মঞ্চে প্রমাণ করলেন নিজেকে। কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে তৈরি করতে পারলে একদিন হয়তো ভারতের জার্সিটাও গায়ে জড়াতে পারবেন আলিগড়ের ছেলে রিংকু সিং।