একদিন ফুল ফুটবে

স্রেফ শখের বসে ক্রিকেট খেলাটা শুরু করেছিলেন। মাদ্রাসা পালিয়ে মাঠে গিয়ে বোলিং করতেন। সেই শখটাকে পরে যত্ন নেয় বিকেএসপি। আস্তে আস্তে তাঁর বোলিং এর গতি বাড়ে, নিয়ন্ত্রণ আসে। হাসান মাহমুদ ধীরে ধীরে একজন পরিপূর্ণ পেস বোলার হয়ে উঠেন। মাদ্রাসা পালিয়ে বোলিং করতে যাওয়া এই পেসার খুব দ্রুতই চলে এসেছিলেন জাতীয় দলেও।

ক্রিকেট বোদ্ধারা বলেন তারকা পেসার হবার সব উপাদানই তাঁর মধ্যে আছে। হাসান মাহমুদের উপর এই  ভরসাটা অবশ্য অনেক আগে থেকেই। হাসান মাহমুদের ক্রিকেট যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। ছোট্ট এই পেসার তখন নজর কেড়েছিল কোচ মনিরের। তখন থেকেই লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রিকেট একাডেমিতে শুরু হয়ে তাঁর পেস বোলার হবার যাত্রা।

তখনই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে স্থানীয় কোচদের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। তবে হাসান মাহমুদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট বিকেএসপি। বিকেএসপিতে ভর্তি হবার পর নিজের পেস নিয়ে আলাদ করে কাজ করতে থাকেন। খুব দ্রুতই বলের গতি বেড়ে যায় এই পেসারে। গতিই হয়ে উঠে হাসান মাহমুদের সবচেয়ে বড় শক্তি।

এরপর বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কাঠামো থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসতে থাকেন তিনি। ২০১৫ সালে তিনি চট্টগ্রামের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৬ টুর্নামেন্ট খেলেন। বছর তিনেক বয়সিভিত্তিক টুর্নামেন্ট গুলো খেলে নিজেকে গড়ে তুলেন তিনি। বড় সাফল্য আসে ২০১৮ সালে। সেবছর নিউজিল্যান্ডে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের দলে ডাক পান তিনি।

সেই বিশ্বকাপে মোট ৯ উইকেট পেয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে নিজের বোলিং প্রতিভার ছাপ রেখে এসেছিলেন। ফলে বিসিবিও কড়া নজর রেখেছে এই পেসারের উপর। এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মত টুর্নামেন্ট গুলোতেও নিয়মিত পারফর্ম করতে থাকেন।

তখন থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট এই পেসারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে। দারুণ পেস বোলার হবার পাশাপাশি একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যও আছে হাসান মাহমুদের। ফিল্ডার হিসেবেও বেশ কার্যকর তিনি। ফলে জাতীয় দলে চলে আসতে খুব বেশি সময় প্রয়োজন হয়নি তাঁর।

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে আবারো হাসান মাহমুদ জ্বলে উঠলেন। প্রমাণ করলেন তাঁর বোলিং এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত। সেবার ১৩ ম্যাচ খেলে তুলে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। তবে হাসান মাহমুদের গতি, নিয়ন্ত্রণ নজর কেড়েছিল নির্বাচকদের। ফলে ওই আসরের পরই পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে ডাক পান এই পেসার।

সেই সময় হাসান মাহমুদকে দলে ডাকার কারণ হিসেবে বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন বলেছিলেন,’ হাসান মাহমুদের মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। হাসান মাহমুদকে আমরা বিপিএলে দেখেছি, আগেও দেখেছি। ফাস্ট বোলিংয়ের জন্য যে স্ট্যামিনার দরকার হয় সেটা ওর আছে। সো আমাদের মনে হয়েছে, এই লেভেলে খেলতে যেই বাড়তি সক্ষমতা প্রয়োজন সেটা ওর মধ্যে আছে। দলের জন্য সে খুবই কার্যকর হবে।’

এছাড়া সেই সময় এখনকার মত শক্তিশালী পেস আক্রমণও ছিল না বাংলাদেশের। ফলে তখন হাসান মাহমুদের উপর ছিল বিশাল প্রত্যাশার চাপ। যদিও এই পেসারের ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। মিরপুরে নিজের অভিষেক ম্যাচেই তুলে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ ও একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও নিজের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে ইনজুরি কারণে লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে গিয়েছিলেন। এখন অবশ্য এই পেসার ফিরে আসার গল্প লিখতে চান। ইনজুরি কাটিয়ে আবার মাঠে ফিরতে শুরু করেছেন। এবারের ডিপিএলেও খেলেছেন মোহামেডানের হয়ে। তবে আবার জাতীয় দলে আসতে হলে নিজের আরেকবার প্রমাণ করতে হবে এই পেসারকে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link