দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বিশ্ব ক্রিকেটে পরিবর্তন হয়েছে অনেক। যত দিন যাচ্ছে, ততই পাল্টে যাচ্ছে এই খেলাটি। নতুন দিনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য ক্রিকেটের টেকনিকেও আসছে পরিবর্তন।
যুগে যুগে অনেক খেলোয়াড় উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে এনেছে অনেক নতুনত্ব, হোক তা ব্যাটে অথবা বলে! যা ক্রিকেটে যোগ করেছে গ্ল্যামার! বিশ্ব ক্রিকেটের আন-অর্থোডক্স শটগুলো সীমিত ওভারের খেলায় দারুণ প্রভাব ফেলে। ব্যাটসম্যানরা উদ্ভাবন করেছেন দারুণ মনোমুগ্ধকর ও অবিশ্বাস্য সব শট!
- রিভার্স সুইপ (মুশতাক মোহাম্মদ / হানিফ মোহাম্মদ)
প্রথাগত সুইপ শটটি রুপান্তরিত হয় রিভার্স সুইপে। রিভার্স সুইপ হচ্ছে সুইপ শট, তবে উল্টো দিকে। সাধারণত ব্যাটসম্যানরা স্পিনারদের বিপক্ষে রিভার্স সুইপ বেশি খেলে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বপ্রথম এই শটটি খেলেন পাকিস্তানি ক্রিকেটার মুশতাক মোহাম্মদ, তবে মুশতাক এটি উদ্ভাবনের জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন তাঁরই সহোদর হানিফ মোহাম্মদকে। পরবর্তীতে অনেক খেলোয়াড় সাচ্ছন্দে রিভার্স সুইপ খেলেছে, যার মধ্যে শচীন টেন্ডুলকার, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। বর্তমানে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মরগানরা দ্রুততার সাথে রিভার্স সুইপ খেলে থাকে।
- প্যাডেল স্কুপ (ডগলাস মারিলিয়ার)
জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার ডগলাস মারিলিয়ার ভারতের বিপক্ষে সর্বপ্রথম এই শট খেলে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইয়কার বা ফুল লেন্থের বলের বিপক্ষে দারুণ কার্যকর একটি শট! বোলারের গতি ও বাউন্স ব্যবহার করে ব্যাটসম্যান এই শট খেলে থাকে। চতুরতা ও সাহসের সাথে খেলা মারিলিয়ারের এই শটটি দারুন ফলপ্রসূ। বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকার যথেষ্ঠ সফলতার সাথে এই শট খেলে থাকেন।
- আপার কাট (শচীন টেন্ডুলকার / বীরেন্দ্র শেবাগ)
আপার কাট শটটি দক্ষতার সাথে খেলেছে ‘লিটল মাষ্টার’ শচীন টেন্ডুলকার। পরবর্তীতে এটি তারই স্বদেশী বীরেন্দ্র শেবাগের ‘ট্রেডমার্ক’ শট হিসেবে পরিচিত। সাধারণত বোলারদের বাউন্সার ব্যাটসম্যান স্লিপ ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে থার্ড ম্যান অঞ্চলে খেলাই হল ‘আপার কাট’। এই শট খেলার জন্য মূলত বলের গতি ব্যবহার হয়।
- দিলস্কুপ (তিলকারত্নে দিলশান)
দিলস্কুপ শটটির আবিষ্কারক শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশান, তাই তার নামের সাথে মিল রেখে শটটির নামকরন হয় ‘দিলস্কুপ’। এটি আসলে স্কুপের পরিবর্তিত সংস্করণ। বোলারের গতি ব্যাবহার করে ব্যাটসম্যান উইকেট কিপারের মাথার উপর দিয়ে এই শট খেলে থাকে। ব্যাটসম্যান দিলস্কুপ খেললে প্রতিপক্ষ দলের ফিল্ডারদের তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর উপায় থাকে না, কারন এই শটের প্রায় নিশ্চিত ফলাফল হল চার বা ছয়।
- হেলিকপ্টার শট (মহেন্দ্র সিং ধোনি)
‘হেলিকপ্টার শট’ এর জনক ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। শটটি খেলার সময় কমপক্ষে একটি পা ভূমি থেকে উপরে শূন্যে অবস্থান করে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে উভয় পা শূন্যে অবস্থান করে। ‘হেলিকপ্টার শট’ খেলার সময় প্রচুর শক্তি ব্যবহার করতে হয়। বিচিত্র এই শট দারুণ কার্যকর।
- সুইচ হিট (কেভিন পিটারসেন)
সুইপ থেকে পরিবর্তিত হয়ে রিভার্স সুইপ আর রিভার্স সুইপ থেকে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে সুইচ হিট। কেভিন পিটারসেন বল করার পূর্বেই তার ‘স্ট্যান্স’ সুইচ করে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের মত শটটি খেলে বলে এর নাম ‘সুইচ হিট’। কেপির এই উদ্ভাবনী শটটি দারুণ বিস্ময়ের জন্ম দেয় কারন একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান কিভাবে এত দ্রুত তার স্ট্যান্স বদল করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের মত দাঁড়িয়ে এত ‘পাওয়ারফুল’ শট খেলে! এটি আসলে কেভিন পিটারসনের দারুণ উদ্ভাবনী চিন্তার প্রতিফলন।
- রিভার্স স্কুপ (এবি ডি ভিলিয়ার্স)
আধুনিক ক্রিকেটের এক অসাধারণ ব্যাটসম্যান। এবি ডি ভিলিয়ার্স সব ব্যাটসম্যান হতে আলাদা, বিচিত্র ও অভূতপূর্ব শুধু তার খেলার ধরনের কারনেই। ক্রিকেটের ব্যাকরন মেনে সকল শট খেলতে পারে আবার পারে খেলতে ব্যাকরণের বাইরে এমন কিছু শট, যা বিশ্ব ক্রিকেটে শুধু তার ব্যাটেই দেখতে পাওয়া যায়। ‘মিস্টার থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’ বা ‘রিভার্স স্কুপ’ শটটি খেলার জন্য হাত সুইচ করে রিভার্স স্কুপ করতে হয়। এই শট খেলার জন্য প্রয়োজন স্কিল এবং হাত ও চোখের দারুণ সমন্বয়। অথচ এবি কত সহজে এই শট খেলে থাকে!
- পেরিস্কুপ (সৌম্য সরকার)
অভিষেকের পর থেকেই নয়নাভিরাম সব শট খেলে নজর কাড়ছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। তার উদ্ভাবিত আলোড়ন-সৃষ্টিকারী শটটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘পেরিস্কুপ’। লেগ সাইডে সরে, শরীরটা সামান্য বাঁকিয়ে সৌম্য সরকার ‘গালি’র ওপর দিয়ে শটটি খেলে থাকে। শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে নিখুঁত নিশানায় পাঠানো দর্শনীয় শটটি নিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব অভিভূত!