চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচের একাদশে নাঈম হাসান নামটা কোনভাবেই থাকার কথা ছিল না। ফলে গতকাল সকালে যখন একাদশে এই নামটা দেখা যায় তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন এসেছিল নাঈম হাসানকে নিয়ে। কেননা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দলেই ছিলেন না চট্টগ্রামের এই স্পিনার। হঠাত করেই ডাক আসলো, এসেই কাজের কাজটা করে দিলেন। আর নিজের শহরে এই জাদুটা তাঁর চেয়ে ভালো কেই বা জানে।
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ম্যাচ খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর মিরাজের জায়গাতেই একজন অফ স্পিনারের প্রয়োজন বোধ করে বাংলাদেশ দল। চট্টগ্রামের ছেলে নাঈম হাসানকে তাই ডেকে আনা হয় দলে। তবে স্কোয়াডে আসলেও একাদশে থাকার সম্ভাবনাটা খুবই কম ছিল।
কেননা বাংলাদেশের টিম ম্যানেজম্যান্ট মিরাজের মতই একজন অলরাউন্ডার খুঁজছিলেন। সেই বিবেচনা একাদশে জায়গা প্রায় নিশ্চিতই ছিল মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। তবে খুব সম্ভবত সাকিব দলে যোগ দেয়ায় একজন স্পেশালিস্ট স্পিনার খেলার সাহস দেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ। সেজন্যই প্রথম টেস্টের একাদশে মাঠে নামিয়ে দেয়া হলো নাঈম হাসানকে।
এসবকিছুই তবুও একটি স্বাভাবিক পক্রিয়া বলেই ধরে নেয়া যায়। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট যে আসলে নাঈমদের নিয়ে কতটা উদাসীন সেটা বোঝা যাবে আরেকটু পিছনে ফিরে তাকালে। প্রশ্ন উঠে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নিবেদন নিয়ে, আঙুল উঠে জং ধরে যাওয়া সিস্টেমের দিকে।
নাঈম হাসানের ক্যারিয়ারের শুরু থেকে বলা যাক। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে নিজের অভিষেক ইনিংসেই তুলে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। চট্টগ্রামের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ইনিংসটাই নাঈমকে আলাদা একটি পরিচয় এনে দিয়েছিল। ছয় ফুট লম্বা ডানহাতি এই স্পিনারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার শুরু তখন থেকেই।
এরপর থেকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দলের নিয়মিত মুখ নাঈম হাসান। সাত টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে তুলে নিয়েছিলেন ২৫ উইকেট। বিশেষ করে ডেনিয়াল ভেট্টরি কোচ হয়ে আসার পর এই স্পিনারকে খুব পছন্দ করেছিলেন। নাঈমের উচ্চতা ও টার্ন একটা বড় শক্তির জায়গা হয়ে উঠেছিল। গতবছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ মাঠে নেমেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের শেষ ইনিংসটাতেও নিয়েছিলেন তিন উইকেট।
অথচ এরপর কী এক অজানা কারণে আর একাদশে সুযোগ পাননি তিনি। যদিও গতবছর পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও তিনি দলে ছিলেন। তবে ম্যাচ খেলার সুযোগ হচ্ছিল না। এরপর অবশ্য দল থেকেই বাদ পড়ে যান নাঈম।
টেস্ট দলে নিয়মিত পারফর্ম করতে থাকা নাঈমকে বাদ দেয়ার কারণ জানা গেল বিসিবির এক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে। এবছরের শুরুতেই নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট সিরিজ থাকায় এই স্পিনারকে পরিকল্পনায় রাখতে চায়নি বাংলাদেশ দল। নাঈমকেও নাকি আগে থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল যে তিনি এই দুই সিরিজে থাকছেন না।
তবে সেই ঘনিষ্ট সূত্র জানান নাঈমকে বলে রাখা হয়েছিল যে এরপর ঘরের মাঠে সিরিজে তিনি অবশ্যই দলে থাকবেন। এছাড়া নাঈমকে নাকি বাংলাদেশ দলের হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গ বাড়তি কিছু কাজও দিয়ে গিয়েছিলেন। বিশেষ করে ব্যাটিং নিয়ে আরেকটু কাজ করতে বলেছিলেন তিনি।
ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিসংখ্যান বলে নাঈম জাতীয় দল থেকে পাওয়া নির্দেশনা মাঝের এই সময়টায় ভালো করেই অনুশীলন করেছেন। বল হাতে বরাবরেই মতই বিসিএলে সেরাদের একজন ছিলেন। এছাড়া ব্যাট হাতেও শেষ মৌসুমে বড় ইনিংস খেলেছেন।
ফলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে আবার নাঈম ফিরবেন এমনটাই তো কথা ছিল। তবে দল ঘোষণা করা হলে সেখানে ছিল না এই স্পিনারের নাম। অর্থাৎ বাংলাদেশ দল নাঈমকে নিয়ে যে পরিকল্পনা করেছিল কোন এক অজানা কারণে সেখান থেকে সরে আসে। এখানে আরেকটু প্রশ্ন করে যেতে চাই। নাঈমকে যে টেস্ট দলে রাখা হবেনা কিংবা কেন রাখা হচ্ছেনা এমন কোন আলোচনা কিনা এই স্পিনারের সাথে করা হয়েছিল। উত্তর খুব সম্ভবত কোন আলোচনাই করা হয়নি।
তবে মিরাজের ইনজুরিত আবার সেই নাঈমের কাছেই ফিরে যেতে হয়েছে। শুধুই টেস্ট ক্রিকেট খেলেন বলে হয়তো নাঈমদের নিয়ে করা এই অবহেলা গুলো সেভাবে নজরে আসেনা। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের এখনো এত পিছিয়ে থাকার কারণও খুব সম্ভবত এই জং ধরা সিস্টেম।
তবুও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলে ডাক পাওয়ার পর নাঈম খেলা ৭১ কে বলেছিলেন, ‘আমি যদি সুযোগ পাই তাহলে চাইব আমার বোলিং দিয়ে যেন বাংলাদেশকে জেতাতে পারি।’ বাংলাদেশ এই টেস্টে জিতবে কিনা সেটা জানার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট কথা না রাখলেও নাঈম নিজের দেয়া কথা রাখছেন। বল হাতে ঠিকই নিজেকে মেলে ধরছেন।