থাকবে না কোনো আক্ষেপ

টেস্ট ক্রিকেটে উপমহাদেশের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবাল খান। সাইদ আনোয়ারের মত কিংবদন্তি ব্যাটারের অবস্থান যেখানে অষ্টম। তবুও মাঝেমধ্যে খানিক ফর্ম হীনতায় আমরা এই তামিম ইকবালকে নিয়ে সমালোচনার আসর বসিয়ে দেই। সমালোচনা ছাড়িয়ে নিন্দা তিরস্কার অবধি পৌঁছেছে বহুবার। তবুও একটিবার ভাবুন তো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তামিমের মত আরও একজন ওপেনার কি আর আছে আমাদের? অন্তত টেস্ট ক্রিকেটে?

ভাবতে থাকুন তামিমকে নিয়ে। আর তামিম করে যাক নিজের কাজটা।  এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টেই আবার যেন স্বরুপে ফিরলেন তামিম। নিজের ক্যারিয়ারে বার জন ভিন্ন সঙ্গী নিয়ে ওপেন করা তামিম এবার জুটি বাঁধেন তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়ের সাথে। আর যোগ্য সঙ্গ পেলে তামিম ঠিক কি করতে পারেন তার আরও একটি উদাহরণ হয়ে রইলো চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংস।

দীর্ঘ এক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তিনি আবার যেন দেখা পেলন তিন অংকের সে ‘ম্যাজিক ফিগারের’। প্রায় তিন বছর তিন মাসের অপেক্ষা শেষ হল চট্টগ্রাম টেস্টে। সেই ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নিউজিল্যান্ডের হ্যামিলটনে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ‘ড্যাশিং ওপেনার’। নিজের ঘরের মাঠটাকে আবার আপন করে নিয়ে তিনি তুলে নিলেন  ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি।

এই দশটি সেঞ্চুরি করতেও কতবার বিফল হতে হয়েছে তাঁর হিসেব করাটা যেন বেশ কষ্টসাধ্য এক কাজ। তবে বিগত তিন চার ম্যাচের মধ্যেই দুই দফা নব্বইয়ের ঘরে থমকে গিয়েছিল তামিমের ইনিংস। প্রতিটা শতক একজন ক্রিকেটারকে পূর্ণতা দেয়। আর নব্বইয়ের ঘরে আউট হওয়া প্রতিটা ইনিংস যেন বলে বিষাদের এক করুণ গল্প। সে বিষাদের গল্প ছাপিয়ে তামিম বারেবারে লিখে যান সাফল্যের জয়গান।

না শুধু দশম শতক নয়। এই টেস্টের মধ্য দিয়ে তামিম আরও কিছু অর্জন যুক্ত করেছেন নিজের নামের পাশে। সেখানে খানিকটা বড় বড় হরফে লেখা যেতে পারে তামিমের ব্যাটিং গড়। ৪০ গড়ের মাইলফলকটা পার করে ফেলেছেন বা-হাতি এই ওপেনার। বাংলাদেশি কোন ওপেনার তো দূরে থাক, কোন ব্যাটারের টেস্টে ব্যাটিং গড়ও বর্তমানে নেই সে ঘরে।

নিজের শতকের অপেক্ষার অবসান ঘটানোর পাশপাশি আরও একটি অপেক্ষার ইতি ঘটাতেও সহয়তা করেছেন তামিম। প্রায় পাঁচ বছর ও ৬১ ইনিংস পর বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি থেকে বোর্ডে যুক্ত হয়েছে শতরান। এবার মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে সে কাজটা করলেন তামিম। তরুণ জয়ে দারুণ সম্ভাবনাময়। তাঁকে দিক নির্দেশনা দিয়ে দুই জনে মিলে দলের জন্যে জড়ো করেন ১৬২ রান। দলের জন্যে দারুণ শুরু।

তবে মজার বিষয় বাংলাদেশের এই দীর্ঘ টেস্ট যাত্রায় মাত্র আটবার ওপেনিং জুটি থেকে এসেছে শতরান। এর মধ্যে সাতবারই একপ্রান্তের ধ্রুব থাকা ব্যক্তিটির নাম তামিম। সর্বোচ্চ ৩১২ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি ইমরুল কায়েসকে সঙ্গী করে। প্রথমবার শতরান পার করা জুটিতে তাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন জুনায়েদ সিদ্দিকি। নিজের অভিষেক বছরেরই সে কীর্তিতে অংশ নিয়েছিলেন তামিম।

এরপর বাংলাদেশের জন্যে যতকিছু ইতিবাচক তাঁর অধিকাংশতেই জড়িয়ে আছে সাগর পারের ছেলে তামিমের নাম। তাঁর ব্যাট যখনই হেসেছে তখন যেন বাংলাদেশের প্রতিটা দর্শক অপলক দৃষ্টিতে শুধু উপভোগ করে গেছেন। ফর্মে থাকা তামিমের করা প্রতিটা শট যে চোখ লেগে থাকে। ড্যান্সিং ডাউন দ্য উইকেটে এসে হাঁকানো ছক্কা গুলো আলাদা এক বিনোদনে জোগান দেয়।

আমরা আরও একজন তামিমকে ঠিক কবে খুঁজে পাবো আমাদের তা জানা নেই। তবে আমরা যতদিন এই তামিমকে পাচ্ছি ততদিন অন্তত মনভরে উপভোগ করে নেই। ক্যারিয়ারের গোধুলী লগ্নে পৌঁছে যাওয়া তামিমের ব্যাটিং একদিন নিশ্চয়ই খুব করে দেখতে ইচ্ছে হবে। আক্ষেপ খানিকটা কমিয়ে নেওয়া যাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link