শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে মাঠে নামার আগে অনন্য এক কীর্তি গড়ার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। মাত্র ৬৮ রান করতে পারলেই মুশফিকুর রহিম সাদা পোশাকে পাঁচ হাজার রানের পাহাড় জয় করবেন, এমন সমীকরণকে সামনে রেখে খেলতে নামা মুশফিক অপেক্ষায় রাখেননি ভক্তদের। সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রয়োজনীয় রান তুলে নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ৫০০০ রান পূর্ণ করেছেন এই ব্যাটার। যদিও, কিভাবে সেই মাইলফলকে পৌঁছেছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের মালিকও এখন মুশফিক। পাঁচ হাজারের ওপর রান করেছেন তিনি, এই রান করতে মুশফিকের লেগেছে ৮১ ম্যাচ এবং ১৪৯ ইনিংস। এই কীর্তি ছোঁয়ার পথে মুশফিক এখন পর্যন্ত ২৬ টি ফিফটি করেছেন, শতক হাঁকিয়েছেন আটটি। পাশাপাশি তাঁর নামের পাশে রয়েছে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি যার দুইটি আবার উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে।
টেস্ট ক্রিকেটে নিজ দেশের হয়ে পাঁচ হাজারি ক্লাবে নাম লেখানো ক্রিকেটারদের নাম দেখলে গর্বিত হওয়ারই কথা যে কারোর। অস্ট্রেলিয়ার স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, ইংল্যান্ডের স্যার জ্যাক হবস, ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার গ্যারি সোবার্স, দক্ষিণ আফ্রিকার গ্যারি কারস্টেন, নিউজিল্যান্ডের জন রাইট, ভারতের সুনীল গাভাস্কার, পাকিস্তানের জহির আব্বাস, শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভা – এই কিংবদন্তি নামগুলোর সঙ্গে রেকর্ড বইয়ে একসাথে দেখা যাবে মুশফিকুর রহিমের নামও।
মাইলফলক ছোঁয়ার তৃপ্তিতে মুশফিক নিশ্চয়ই আনন্দিত হবেন। তবে আনন্দের সঙ্গে স্বস্তির অনুভূতিও নিশ্চয়ই হওয়ার কথা তার। গত মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের অন্যতম কাণ্ডারি। প্রোটিয়াদের মাটিতে চার ইনিংসে ৫৯ রান করেন তিনি, সর্বোচ্চ ছিল ৫১ রান। বাকি তিন ইনিংসে তার রান ৭, ০ ও ১। প্রশ্ন উঠেছিল দলে তার জায়গা নিয়েও।
কিন্তু ঘরের মাঠে এসে খারাপ সময়কে ছুটিতে পাঠালেন মুশফিক, প্রমান করলেন কেন তিনি দেশসেরাদের একজন। যদিও, নেতিবাচকম নাসিকতার ব্যাটিংয়ের কারণে প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছেন একই সাথে। ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স সংবাদ সম্মেলনেই বলেছিলেন তিনি নিশ্চিত যে মুশফিক ঘুরে দাঁড়াবে। হ্যাঁ, মুশফিক সেঞ্চুরি করেছেন ঠিকই। কিন্তু, এতটাই মন্থর গতির ব্যাটিং করেছেন যে, আদৌ তাঁর মধ্যে ম্যাচ বাঁচানোর তাড়না আছে কি না – সেই প্রশ্ন তোলাই যায়।
এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে ২০০২ সালে প্রথম এক হাজার রান করেছিলেন হাবিবুল বাশার। ২০০৪ সালে নিজের দুই হাজার রান পূর্ন করেন তিনি। এছাড়া ২০০৬ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিন হাজার রানের মালিক হয়েছিলেন এই সাবেক অধিনায়ক। দীর্ঘ দশ বছরের বিরতির পর চার হাজারি ক্লাবের দেখা পায় বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে চার হাজার রানের ক্লাবে নাম তোলেন তামিম ইকবাল।
প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পাঁচ হাজার রান করার ক্ষেত্রেও মুশফিকের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তামিম। সিরিজের শুরুতে তামিমের সংগ্রহ ছিল ৪৮৪৮ রান। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পাঁচ হাজার রান করার কাছেই ছিলেন তামিম। তবে বাদ সাধলো চট্টগ্রামের প্রতিকূল আবহাওয়া। তীব্র গরমে আর আর্দ্রতার কারণে আউট হওয়ার আগেই ফিরতে হয়েছে ড্রেসিং রুমে।
এদিক থেকে মুশফিককে ভাগ্যবান বলাই যায়। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। তবে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করার সুযোগটি এসেছিলে মোহাম্মদ আশরাফুলের কাছে। কিন্তু ১৯০ রানে অ্যাশ আউট হয়ে যান এবং একই ইনিংসে মুশি পূর্ণ করেন ডাবল সেঞ্চুরি।
পাঁচ হাজার রান করার ক্ষেত্রেও তামিম ইকবালের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৯ রান। কিন্তু পায়ের পেশিতে টান লাগার কারণে মাঠ থেকে চলে যাওয়ায় মুশফিক প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে করতে পেরেছেন পাঁচ হাজার টেস্ট রান। ব্যাটিং চালিয়ে যেতে পারলে হয়তো তামিম প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পাঁচ হাজারি ক্লাবের সদস্য হতে পারতেন। পারেননি, কারণ দ্বিতীয় দফায় ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই তিনি বোল্ড হয়ে ফেরেন সাজঘরে।
মুশফিক প্রশংসায় যেমন ভাসছেন, সমালোচনাতেও পুড়ছেন। এটা মুশফিকের ক্যারিয়ারেরই সবচেয়ে মন্থরতম সেঞ্চুরি। যে মানসিকতায় তিনি ব্যাট করছিলেন, তাতে ম্যাচটা বের করার কোনো তাড়ণা দেখা যায়নি। এমনকি সেঞ্চুরি করার পরও তাঁর মানসিকতা পাল্টায়নি। ম্যাচের মোমেন্টাম পাল্টে দিতে কোনো চেষ্টাই করেননি তিনি। অথচ, দিনের খেলা শেষে বলেন উইকেট নাকি ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভাল ছিল। তারপরও কেন বাড়তি কিছু করলেন না মুশফিক? জবাব দেবে কে? সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক অন্তত কোনো জবাব দেননি।
একই কথা তাঁর পাঁচ হাজারের রানের মাইলফলককে নিয়েও বলাই যায়। পাঁচ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে মুশফিকের লেগেছে ৮১ টেস্ট, ১৪৯ ইনিংস! এই তালিকায় মুশির চেয়ে বেশি সংখ্যক ইনিংস ব্যাট করে পাঁচ হাজার রানে পৌঁছার রেকর্ড আছে আর মাত্র ছয় জনের! বোঝাই যাচ্ছে, সেঞ্চুরি করেও মুশফিক ঠিক স্বস্তিতে নেই। তিনি চাইলেই সকল সমালোচনার জবাব দিতে পারতেন। কিন্তু, সেঞ্চুরি করে সমালোচনার বহর যেন আরো বাড়ল।