নিভৃত এক চরিত্র

হ্যাটট্রিক! পরপর তিন বলে তিন উইকেট!

পাড়ার ক্রিকেটেও হ্যাটট্রিক করলে সেটা নিয়ে হইচই হয়। ক্লাব ক্রিকেটেও হ্যাটট্রিক করলে পত্রিকায় ছবি ছাপা হয়। আর এটা রীতিমতো জাকজমকপূর্ণ টুর্নামেন্ট, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের বাঁচা মরার লড়াইয়ের ম্যাচে করা হ্যাটট্রিক।

কিন্তু কামরুল ইসলাম রাব্বির দূর্ভাগ্যটা দেখেন। এমন বড় ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেও সেভাবে আলোচনায় নেই। আলোচনায় না থাকাটা অবশ্য খুব অস্বাভাবিক না। কারণ, সেটা ছিলো ব্যাটসম্যানদের এক ম্যাচ। নাজমুল হাসান শান্ত সেঞ্চুরি করে দলের জন্য ২২০ রানের পর্বত দাড় করিয়েছিলেন। জবাবে পারভেজ হোসেন ইমন সেঞ্চুরি করে দলকে নাটকীয় জয় এনে দিয়েছিলেন। আর এই দুই সেঞ্চুরির মাঝখানে পড়ে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে রাব্বির হ্যাটট্রিকটা।

হ্যাঁ, কামরুল ইসলাম রাব্বির গোটা ক্যারিয়ারটাই এমন। তিনি যাই করেন না কেন – সেটা থেকে যায় আলোচনার বাইরে। খুবই নিভৃত এক চরিত্র তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের বড় পারফরমার তিনি বরাবরই। তবুও, আজ অবধি সাদা বলের ক্রিকেটে অভিষেকই হয়নি এই ফাস্ট বোলারের। এমনকি তাঁর পারফরম্যান্সগুলো নিয়েও যেন আলোচনা হয় খুব সামান্য।

বরিশালের ছেলে কামরুল ইসলাম রাব্বি নজরে আসেন অনুর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সময়ে। জাতীয় দলের জার্সি অবশ্য ইতোমধ্যে গায়ে চড়িয়েছেন। ২০১৬ সালে অভিষেকের পর সাতটি টেস্ট খেলে ফেলেছেন। তবে নিয়মিত হতে পারেননি। আর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এখনও সুযোগ পাননি। অথচ, সীমিত ওভারই তো তাঁর শক্তির জায়গা।

চাইলে গেল ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দিব্যি খেলে ফেলতে পারতেন রাব্বি। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশি পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফর্মে ছিলেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। সেবার বঙ্গবন্ধু কাপ টি-টোয়েন্টিতে ২৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন রাব্বি। কিন্তু, সেবার আর কপাল খুলেনি তাঁর।

বিশ্বকাপ শেষে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে হঠাৎ করেই ইনজুরি বাঁধান মুস্তাফিজুর রহমান। তখন ডাক আসে কামরুল ইসলাম রাব্বির। শোনা যাচ্ছিল, সেবার টি-টোয়েন্টি অভিষেকটা হয়ে যাবে। কিন্তু আর হয়নি। রাব্বি অবশ্য লড়াই করাটা ছেড়ে দেননি। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আসছেন নিয়মিত, ঘাম ঝরাচ্ছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে যখন যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন, সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। পারফরমও করছেন।

একটা ভিন্নরকম তথ্য দিয়ে শেষ করি। ছক্কা হাঁকিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছেন এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা ১২। সেই তালিকায় চারজন বাংলাদেশি আছেন। চারজনের একজন হলেন রাব্বি। যদিও, রাব্বি কখনোই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নন।

৪৭ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার পর ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় রাব্বির। এই সিরিজে মাত্র এক উইকেট নেন রাব্বি। কারণ বাকি সব উইকেট স্পিনাররা তাদের নিজের পকেটে ভরেন। এমন শুরু নিশ্চয়ই রাব্বি চাননি।

যদিও, ব্যাটিংয়ে দৃশ্যটা একটু ভিন্ন ছিল। সেবার ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলীকে ছক্কা মেরে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের রানের খাতা খোলেন রাব্বি। স্পিনারদের দাপটে এখন আর ঠিক মত জাতীয় দলে ডাক পাননা কামরুল ইসলাম রাব্বি। তবে, সময় পাল্টেছে। সব ফরম্যাটেই এখন পেসারদের কদর বাড়ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। পেসাররা তাঁদের প্রাপ্য সম্মান পেতে শুরু করেছেন। হয়তো এরই ধারাবাহিকতায় পেসার রাব্বিও আবার পায়ের নিচে মাটি ফিরে পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link