এবছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় নেই তামিম ইকবাল। বরং ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্মার এনামুল হক বিজয়কে নিয়েই এগিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ। গত কয়েকদিনে হয়তো এই খবরগুলো আপনি বহুবার শুনে ফেলেছেন। তবুও পুরনো এই খবর গুলো নতুন করে বলা প্রয়োজন। কিছু প্রশ্ন করে যাওয়া জরুরি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তামিমের বিদায়টা স্পষ্টই দেখা যচ্ছিল তবে বিজয়কে নিয়ে পরিকল্পনা সাজানোর যে খবর শোনা যাচ্ছে তাঁর বাস্তবতা কতখানি?
টেস্ট ক্রিকেটে এখনো বাংলাদেশের সফলতম ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিম ইকবাল। এছাড়া ওয়ানডে ফরম্যাটে এখন তিনি বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে তামিম ইকবালকে নিয়ে যত আলোচনা ছিল তা হলো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। এই ফরম্যাটটার সাথে গত কয়েকবছর ধরেই মানিয়ে নিতে পারছিলেন না এই ব্যাটসম্যান।
গতবছর থেকেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনিয়মিত তিনি। তবুও একটু সূক্ষ্ম আশা ছিল গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লাল সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সব নাটকীয়তার ইতি টেনেছেন তামিম নিজেই। বিশ্বকাপের আগে নিজেই দল থেকে সরে দাড়িয়েছিলেন। তখনই আসলে অলিখিত ভাবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তামিমের শেষটা লেখা হয়ে গিয়েছিল।
যদিও এরপর ক্রিকেট বোর্ড থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনার নানারকম চেষ্টা চালানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এবছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মাঝখানেই তামিম সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন আগামী ছয় মাস এই ফরম্যাট নিয়ে আর ভাববেন না তিনি। ফলে ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা ম্যাচটিই খুব সম্ভবত তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়ে থাকবে।
ওদিকে এনামুল হক বিজয় ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার। তবে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে সবকিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছেন এই ওপেনার। এবারের ডিপিএলে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন রেকর্ড ১১৩৮ রান। পুরো আসর জুড়ে বিজয় ব্যাট করেছেন ৮১.২৮ গড়ে। তিনটি সেঞ্চুরি ও নয়টি হাফ সেঞ্চুরি নিয়ে অবিশ্বাস্য এক মৌসুমই কাটিয়েছেন তিনি। এর ফল হিসেবে হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও ডাক পাবেন তিনি।
তবে এতকিছুর পরেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিজয় কেমন করবেন সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়। বিশ্বের সেরা বোলারদের বিপক্ষে তিনি এই ফর্ম ধরে রাখতে পারবেন তো? তবে আরো বড় প্রশ্নটা ছোড়া যায় ফরম্যাট নিয়ে। বিজয় অসাধারণ একটা মৌসুম কাটিয়েছেন ওয়ানডে ফরম্যাটে। অথচ তাঁকে পরিকল্পনায় আনা হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য। এই ডিপিএলের আগে বিজয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরিকল্পনায় কোনভাবেই ছিলেন না সেটাও মনে রাখা জরুরি। তাহলে ঠিক কিসের ভিত্তিতে তাঁকে নিয়ে বিশ্বকাপের মত বড় আসরে পরিকল্পনা করবে বিসিবি?
তবে এটা সত্য যে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ কোনভাবেই তাঁদের ওপেনিং জুটি খুঁজে পাচ্ছেনা। গত দুই বছরে অনেকেই আসলেও কেউই জায়গাটা পাকা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বিপিএলে ঝলক দেখানো মুনিম শাহরিয়ারের উপর আস্থা রেখেছে বাংলাদেশ। ফলে এই ওপেনারকে নিশ্চয়ই আরো কিছু ম্যাচ সুযোগ দেয়া হবে।
ওদিকে এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে ইনফর্ম ও নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস। টেস্টে মিডল অর্ডারে খেললেও ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তিনি নতুন বলেই ব্যাট করতে নামেন। এছাড়া আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তিনিই ওপেন করেছিলেন। ফলে অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা লিটনকে নিয়ে তাই কোন ভাবেই টানাহেঁচড়া করতে চাইবে না টিম ম্যানেজম্যান্ট।
লিটন, মুনিম বাদেও আরো কয়েকজন তরুণ ওপেনার পাইপলাইনে আছেন। এই ফরম্যাটের জন্য অনেকদিন ধরেই পরিকল্পনায় আছেন পারভেজ হোসেন ইমন। ওদিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যানের নাম মাহমুদুল হাসান জয়। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করলেও রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে এখনো সুযোগের অপেক্ষায় তিনি। এছাড়া বিপিএলেও ওপেন করতে নেমে নিজের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। ফলে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেও জয়ও খুব ভালো ভাবেই পরিকল্পনায় থাকতে পারেন।
সবমিলিয়ে তামিম না থাকলেও এখন আরো কয়েকজন ওপেনার এই ফরম্যাটের পরিকল্পনায় আছেন। একপ্রান্তে লিটনের নামটা নিশ্চিতই বলা যায়। অন্য প্রান্তে কে জায়গা করে নিবেন সেটাই দেখার অপেক্ষা। আবারো প্রশ্নটা করতে হয়, বিজয়কে নিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ পরিকল্পনার যে খবর তাঁর বাস্তবতা আসলে কতটুকু?