মুমিনুল কেন এতটা নির্ভার!

শেষ পাঁচ টেস্ট ইনিংসে দুই অংকের স্কোর করতে পারেননি একবারো। এমনকি শেষ সাত টেস্ট ম্যাচে তাঁর হাফ সেঞ্চুরি মাত্র একটি। ব্যাট হাতে এমন সময় কাটানোর পর বিশ্বের যেকোন ব্যাটসম্যানই নিশ্চয়ই চিন্তিত হয়ে পড়বেন। নিজেকে ফিরে পেতে চাইবেন। তবে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হোক জানিয়েছিলেন তিনি বিশ্বাস করেননা যে তিনি খারাপ সময় কাটাচ্ছেন।

শেষ পাঁচ টেস্ট ইনিংসে দুই অংকের স্কোর করতে পারেননি একবারো। এমনকি শেষ সাত টেস্ট ম্যাচে তাঁর হাফ সেঞ্চুরি মাত্র একটি। ব্যাট হাতে এমন সময় কাটানোর পর বিশ্বের যেকোন ব্যাটসম্যানই নিশ্চয়ই চিন্তিত হয়ে পড়বেন। নিজেকে ফিরে পেতে চাইবেন। তবে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হোক জানিয়েছিলেন তিনি বিশ্বাস করেননা যে তিনি খারাপ সময় কাটাচ্ছেন।

মুমিনুল বিশ্বাস না করলেও মাঠের ক্রিকেট কিংবা পরিসংখ্যান স্পষ্ট বলে দেয় তিনি খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অন্যতম কঠিন সময়টা পার করছেন বললেও খুব একটা ভুল হবে না। অধিনায়কের চাপ সামলে মুমিনুল হক যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। শেষ পর্যন্ত অধিনায়কত্ব কিংবা ব্যাটিং কোনটাই ঠিক হচ্ছেনা।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এই ফরম্যাটটায় নিজেকে প্রমাণ করে এসেছেন। বিশেষ করে দেশের মাটিতে মুমিনুল প্রায়ই বড় বড় ইনিংস খেলতেন। ফলে এই ফরম্যাটে তিন নম্বরে বাংলাদেশের প্রথম পছন্দ ছিলেন এই ব্যাটার।

এখন অবশ্য সেই ছোট্ট মুমিনুল অনেক পরিণত। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এখন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। লাল বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে তিনি নতুন একটি উচ্চতায় নিয়ে যাবেন এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। তবে সবমিলিয়ে অধিনায়ক মুমিনুল ঠিক সফল হতে পারছেন না।

এটাও ঠিক যে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্যটা পেয়েছে তাঁর নেতৃত্বেই। এমনকি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের সেই টেস্টে ৮৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসও খেলেছিলেন তিনি। তবে অধিনায়ক মুমিনুলের অবদান কতটা ছিল সেটা নিয়ে লম্বা আলোচনা হতে পারে।

অধিনায়কত্ব কাঁধে তুলে নেয়ার পর থেকেই নানা সমালোচনা তাঁর পিছনে লেগেই আছেই। বিশেষ করে দলকে সামনে থেকে তিনি কতটা নেতৃত্ব দিতে পারছেন সেই প্রশ্ন উঠে। কিংবা দলের ভিতরে তাঁর গ্রহনযোগ্যতা নিয়েও আলোচনার জায়গা থাকে। এছাড়া অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুলকে কতটা স্বাধীনতা দেয়া হয় তাও এক বিরাট প্রশ্ন।

এরপর আবার রিভিউ নিয়েও বেশ হক্কি পোহাতে হয় এই টেস্ট অধিনায়ককে। প্রায় প্রতি টেস্টেই রিভিউ নেয়া, না নেয়া নিয়ে একটা বিশাল ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। আর অধিনায়ক হিসেবে স্বাভাবিক ভাবেই সেই দায়টা সবচেয়ে বেশি যায় মুমিনুলের উপরে।

যদিও সংবাদ সম্মেলনে এসে কখনোই দায়টা নিজের উপর নেন না তিনি। সবসময়ই যেন খানিকটা নির্ভার থাকতে চান তিনি। এই যেমন ব্যাট হাতে এই খারাপ সময়েও কোন চাপ নিচ্ছেন না মুমিনুল হক। তবে অধিনায়কত্বের এই চাপ যে ব্যাটসম্যান মুমিনুলকে প্রভাবিত করছে তা একেবারেই স্পষ্ট।

পরিসংখ্যান বলছে টেস্ট অধিনায়ক হবার আগে মুমিনুল বাংলাদেশের হয়ে রান করেছিলেন প্রায় ৪২ গড়ে। এরপর গর ১৬ ম্যাচ ধরে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। এই সময়ে তাঁর ব্যাটিং গড়ে নেমে এসেছে মাত্র ৩৩.৪৪ এ। এছাড়া সর্বশেষ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন গতবছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই।

এরপর থেকে ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না এই অধিনায়ক। যেমন শেষ পাঁচ টেস্ট ইনিংসে তাঁর স্কোরগুলো যথাক্রমে ০,২,৬,৫,২। এমনকি ঘরের মাঠ চট্টগ্রামেও রানে ফিরতে পারেননি তিনি। এই বছর খেলা পাঁচ টেস্টে মাত্র ১৯.১২ গড়ে করেছেন ১৫৩ রান। হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মাত্র একবার।

সবিমিলিয়ে অধিনায়ক মুমিনুল নিজের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত না হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটকে চিন্তিত হতেই হচ্ছে। প্রথমত দলের অধিনায়কের এমন ব্যাড প্যাচ পুরো দলের উপরই প্রভাব ফেলে। দ্বিতীয়ত টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। ফলে ব্যাট হাতে তাঁর দ্রুত রানে ফেরাটা ভীষণ জরুরি, এমনকি অধিনায়কত্ব বিসর্জন দিয়ে হলেও।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...