অসংখ্য টুপির এক হার্দিক

অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার নেতৃত্বের দায়িত্ব, তাও আবার নবাগত এক দল। সেখান থেকে লাখো সমর্থকদের সামনে ঘরের মাটিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলে শিরোপা জয়। আইপিএলের মেগা মঞ্চে ব্যাট ও বল হাতে দলের সেরা খেলোয়াড়ও হলেন হার্দিক পান্ডিয়া।

ইনিংসের ১৩ তম ওভারে যেন রাজস্থানের কাছ থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নেন হার্দিক। প্রথম বলে ফর্মের তুঙ্গে থাকা জশ বাটলারকে ফেরালেন তিনি। এবারের আসরে রাজস্থানের করা মোট রানের তিন ভাগের একভাগই এসেছিল বাটলারের ব্যাট থেকে। এজ হয়ে উইকেটরক্ষকের কাছে ক্যাচ দিয়ে বাটলার যখন ফিরলেন দলের রান তখন ৪ উইকেটে ৭৯।

রাজস্থানের শিরোপা জয়ের আশা যেন তখনই শেষ। বাটলারের পর রাজস্থানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসন। তাও স্যামসনের চেয়ে দ্বিগুন বেশি রান বাটলারের। সেদিন স্যামসনও ছিলেন ব্যর্থ। হার্দিক পান্ডিয়ার স্লোয়ার ডেলিভারিতে সাই কিশোরের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি।

লকি ফার্গুসন ১৫৭ কি.মি/ঘন্টার বোলিংয়ে আসরে দ্রুততম ডেলিভারির রেকর্ড গড়লেন, মোহাম্মদ শামির দুর্দান্ত বোলিং; রশিদ খানের কিপটে বোলিংয়ের সাথে দেবদূত পাদ্দিকালের উইকেট – তিন তারকা বোলার থাকা সত্ত্বেও দলের সেরা বোলার হলেন হার্দিক। ৪ ওভারে ১৪ ডট ১৭ রানে শিকার করলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন উইকেট। এমন একটা উইকেট – যেখানে বল স্যুইং হচ্ছে, বাউন্স পাচ্ছে।

ধীরগতির শুরু, দ্রুত উইকেট হারানোর পরেও বাটলারের উপরই আস্থা ছিল দলের। কিন্তু সেটা হতে দেননি হার্দিক। নিখুঁত লাইন-লেন্থ বজায় রেখে বোলিং করেছেন। ব্যাটারদেরকে হাত খুলে খেলার সুযোগই দেননি। ডট বলে চাপ সৃষ্টি করেছেন, সেই ফায়দা নিয়ে উইকেটও পেয়েছেন – রাজস্থানকে ঠেলে দিয়েছেন ব্যাকফুটে।

ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছিলেন এই টুর্নামেন্ট দিয়ে। প্রশ্ন উঠেছিল ফর্মহীনতা, প্রথমবার অধিনায়কত্ব, নতুন দল, ইনজুরি সমস্যা – হার্দিক কতটা সামাল দিতে পারবেন?! তবে হার্দিক সবটা সামলেছেন সমান ভাবে। পেস-সহায়ক উইকেটে ফাইনালে পূর্ণ কোটার ওভার করলেন। দুইজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার সাই কিশোর ও রাহুল তেওয়াতিয়াকে দিয়ে ওভারই করাননি।

ম্যাচ শেষে হার্দিক বলেছিলেন, ‘সাঞ্জু আউট হবার পর (তৃতীয় বলে) আমি পরের যে বলটা করেছি – তখন আমি বুঝতে পেরেছি উইকেটে হার্ড লাইনে বল করতে পারলে, সিম পজিশন ঠিক রাখতে পারলে ভাল কিছু করা সম্ভব। এটা সবকিছু আসরে সঠিক লেন্থ বজায় রাখা, ব্যাটারদেরকে ওই শটস খেলতে বাধ্য করা – এসবের জন্যই সম্ভব হয়েছে।’

বাটলারের পর ব্যক্তিগত পরের ওভারেই শর্ট ডেলিভারিতে শিমরন হেটমায়ারকে ফেরালেন হার্দিক। যে দলটা গুটি কয়েক তারকার উপর নির্ভার হয়ে ফাইনাল অবধি এসেছিল – সেই তারকাদের দ্রুত ফিরিয়ে রয়্যালসকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দেন হার্দিক। টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারের বাজে পারফরম্যান্সের পর লোয়ার অর্ডারে ট্রেন্ট বোল্ট ও ওবেড ম্যাকয়ের দুই ছক্কায় খানিকটা রান বাড়ে রয়্যালসের। যদিও দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৩০ রানেই রাজস্থানকে রুখে দেয় গুজরাট।

ব্যাটারদের জন্য চ্যালেঞ্জিং উইকেট, রাজস্থানের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপ। দ্রুত ঋদ্ধিমান সাহা ও ম্যাথু ওয়েডকে ফিরিয়ে ম্যাচে আশা দেখায় রাজস্থানের বোলাররা। শুভমান গিলকে শূন্য রানে হাতছাড়া করে ম্যাচটাই শেষ করে দেন যুজবেন্দ্র চাহাল। তবে শুরুতে উইকেট হারিয়ে তখন বেশ চাপের মুখে ছিল গুজরাট।

বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতে এবার ত্রাণকর্তা হিসেবে আসলেন হার্দিক। ১১ ওভার শেষেও বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে পারছিল না গুজরাট। ধীরে ধীরে শম্বুক গতিতে রান তুলছিলেন হার্দিক-গিল। এরপর অশ্বিনকে আউটসাইড অফে দুর্দান্ত এক শটে বাউন্ডারি। পরের বলে লেগ স্টাম্পের উপর করা ক্যারম বলটাকে লং অনে উপর দিয়ে ছক্কা – দলকে জয়ের ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন হার্দিক। অশ্বিনের ওভারে ১৫ রান নিয়ে দলকে চাপমুক্ত করে দেন তিনি।

কয়েক ওভার বাদে চাহালের শিকার হয়ে ফিরেন তিনি। তবে ততক্ষণে জয়ের ভীত গড়ে দিয়েছেন হার্দিক। বাকি পথটা সহজেই পাড়ি দেন ডেভিড মিলার ও শুভমান গিল। দলের প্রয়োজনে ৩০ বলে ৩৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস। ১৩১.২৭ স্ট্রাইক রেটে পুরো আসরে ৪৮৭ রান – শিরোপা জেতাতে ব্যাট হাতেও তিনি ছিলেন দলের সেরা পারফরমার।

জশ বাটলার ‘অরেঞ্জ ক্যাপ’, চাহাল ‘পার্পল ক্যাপ’ জিতলেন – আর হার্দিকের হাতে উঠলো শিরোপা। ‘ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড’-এও ভাগ বসান হার্দিকরা। আগের চারবারের চেয়ে এবারের জয়ের আনন্দটা অনেক বেশি। মুম্বাইয়ের হয়ে চার বার শিরোপা জিতেছেন। তবে এবার অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম আসরে শিরোপা জিতিয়েছেন দলকে। যদিও তিনি বলেছেন মুম্বাইয়ের সাথে জয়টা বিশেষ কিছু। কিন্তু সত্যি কি তাই? হয়ত ভবিষ্যতে কোনো সময় তিনি বলে বসবেন, ‘এই সব শুধু বলার জন্যই বলা। ‘

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link