উপেক্ষার গ্লানি সাফল্যে হারায়

অ্যাশেজ সিরিজে ভরাডুবি। সাদা পোশাকে ইংল্যান্ডের অবস্থাও বেশ করুণ। দুই অভিজ্ঞ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। অনুমেয় ছিল এবার হয়ত বাদ পড়তে যাচ্ছেন এই দুই ইংলিশ তারকা। এরপরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ থেকে বাদ পড়লেন।

সমর্থকদের প্রশ্ন, ‘ব্রড-অ্যান্ডারসন জুটি কি তাহলে নিজেদের ক্যারিয়ারের শেষটা দেখে ফেলেছে?’ বয়সের হিসেবে অনেকেই অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো, আরেকটি সুযোগ; আরও একবার নিজেকে প্রমাণ করলেন।

বয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। শরীরটাও এ বয়সে আর সমর্থন করে না; কিন্তু এখনও বল হাতে স্যুইং আর পেস ম্যাজিক দেখাতে ব্যস্ত অ্যান্ডারসন। বাদ পড়ার পর সবাই ভেবেছিল অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের ইতিটা এখানেই। কিন্তু ভিন্ন কিছু ভেবেছিলেন এই পেসার। ফেরার চেষ্টায় এই বয়সেও নিজের সেরাটা দিলেন।

চুলে পাঁকন ধরেছে, বয়সও বাড়ছে ঠিক; কিন্তু চেহারায় কিংবা শরীরী ভাষায় ক্লান্তির ছাপ মোটেও নেই। এখনও ছুঁটছেন, সেই আগের মত স্যুইং, পেস – প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের মাত দিচ্ছেন; তিনি কোথায় থামবেন সেটা হয়ত নিজেও জানেন না।

দলের ব্যর্থতায় জো রুটের অধিনায়কত্বের টুপিটা মাথায় উঠলো বেন স্টোকসের। অধিনায়কত্ব পেয়েই ঘোষণা দিলেন, ‘অ্যান্ডারসন-ব্রডকে তিনি দলে ফেরাবেন।’ ব্যস নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের স্কোয়াডে প্রত্যাবর্তন এই দুই পেস তারকার।

প্রত্যাবর্তনের মঞ্চটাকে নিজের মত সাজানোর ভাবনায় ছিলেন অ্যান্ডারসন। নির্বাচকদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে তিনি চেয়েছিলেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। বয়স হলেও, দমে যাননি; এখনও ইংল্যান্ডকে দেওয়ার মত অনেক কিছু আছে। সেই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিলেন প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই।

অ্যান্ডারসনের দাপুটে বোলিংয়ে মাত্র দুই রানেই দলের দুই ওপেনার প্যাভিলিয়নে। অগ্নিঝড়া বোলিংয়ে শেষ করলেন প্রথম স্পেল। স্যুইং আর পেসের মিশেলে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারদের জন্য আতংকে রূপ নেন এই পেসার।

টম ল্যাথাম, উইল ইয়ঙ, কাইল জেমিসন ও টিম সাউদিকে নিজের শিকার বানিয়ে লর্ডসে প্রথম ইনিংসে নিলেন ৪ উইকেট। বয়স আর ফর্মের দোহাই দিয়ে দল থেকে বাদ দেওয়ার জবাবটা বল হাতে সপাটে নির্বাচকদের গালে দিলেন অ্যান্ডারসন।

টেস্ট ইতিহাসে একই ইনিংসে প্রতিপক্ষের দুই ওপেনারকে আউট করার সর্বোচ্চ রেকর্ডটা এখন অ্যান্ডারসনের দখলে। ২৭ ইনিংসে তিনি প্রতিপক্ষের দুই ওপেনারকে নিজের শিকার বানিয়েছেন; ২৬ বার এই কীর্তি গড়ার অস্ট্রেলিয়ান তারকা গ্লেন ম্যাগ্রা আছে দ্বিতীয়তে।

‘বয়স স্রেফ একটা সংখ্যা মাত্র’ – ক্রিকেট পাড়ার বেশ প্রচলিত এই প্রবাদটা শুধু অ্যান্ডারসনের মত ক্রিকেটারদের জন্যই। প্রতিনিয়ত তিনি প্রমাণ করে চলেছেন, বয়সের বাঁধা তিনি মানেন না। ইংলিশদের নতুন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের আগে অভিষেক হয় অ্যান্ডারসনের।

২০০৩ সালে লর্ডসে ৭৩ রানে শিকার করেছিলেন ৫ উইকেট। তখনও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অভিষেক হয়নি। ১৯ বছর বাদে লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শিকার করলেন ৬৬ রানে ৪ উইকেট। সেসময় অভিষেক না হওয়া ম্যাককালাম এখন ব্যাট-প্যাড তুলে রেখে এখন অ্যান্ডারসনদের কোচ। আর এই ইংলিশ পেসার এখনও ২২ গজটাকে নিজের প্রাসাদ বানিয়েছে রাজত্ব করে চলেছেন।

সেই ১৯ বছর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লর্ডসে সাদা পোশাকে দৌড় শুরু; সেই লর্ডসে এখনও তিনি ছুঁটছেন এখনও অবিরাম গতিতে। ধারাবাহিকতা আর ফর্ম ধরে রেখে এভাবেই তিনি ছুঁটতে থাকুন অবিরাম গতিতে – সমর্থকদের চাওয়াটা এটাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link