‘জো’ হুকুম

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আবির্ভূত হওয়ার পর ক্রিকেটারদের মনোযোগটা এই ফরম্যাটেই সবচেয়ে বেশি। ফ্র‍্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হওয়ার পর তো রীতিমতো ক্রিকেটাররা নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে ব্যস্ত এই টুর্নামেন্টগুলোর জন্য। এত অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা কিংবা মাহাত্ম্য কোনোটি কমেনি, স্রেফ ক্রিকেটারদের আগ্রহ কমেছে।

টেস্ট ক্রিকেটকে একজন ক্রিকেটারের সক্ষমতা যাচাইয়ের মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই ফরম্যাট খেলতে এখন বেশ অনীহা বর্তমান ক্রিকেটারদের। তবে, এদের মাঝে গুটি কয়েক আছেন যাদের চোখে ক্রিকেট মানেই ভেসে উঠে সাদা পোশাক, ক্ষনে ক্ষনে রঙ বদলানো সেশন, শেষ দিনের উত্তাপ আর মর্যাদার এক লড়াই।

টেস্ট ক্রিকেটকে আপন করে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে চূড়ায় উঠতে থাকা সেই গুটিকয়েকের মাঝে একজন হলেন জো রুট।

টি-টোয়েন্টির যুগে দিব্যি টেস্ট ক্রিকেটে রান বন্যায় ভাসাচ্ছেন। সাদা পোশাকে তিনি নিয়মিত মুখ। বয়সটা সবে ৩১; ক্রিকেটারদের জন্য প্রাইম টাইম কিংবা ক্যারিয়ারের সেরা সময়। ঠিক সেই বয়সে ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ তকমা গায়ে জড়িয়ে নির্দিষ্ট এক ফরম্যাট মাতিয়ে যাচ্ছেন রুট। অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন; ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলাই ভাল।

সাদা পোশাকে ক্রিকেট বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানো সেই ইংল্যান্ড দলটা হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেছে। প্রতিপক্ষের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করাই যেন থ্রি লায়ন্স খ্যাত ইংলিশদের সাম্প্রতিক চিত্র। ১৭ ম্যাচে মাত্র ১ জয়! – দলের ভরাডুবিতেও ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে যাচ্ছিলেন রুট। কিন্তু স্রেফ অধিনায়কের টুপিটা মাথায় থাকায় – দায়ভারটা তাঁর কাঁধেই উঠছে। অ্যাশেজ হারের লজ্জা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হার – সরে দাড়ালেন অধিনায়কত্ব থেকে।

দায়িত্ব কমেছে, চাপ কমেছে; তবে ব্যাটে রানে ফোয়ারা থামেনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে নতুন এক শুরু রুটের; অধিনায়কত্বের ঝক্কিঝামেলা নেই। চাপমুক্ত থেকেই খেলেছেন। অবশ্য চাপ মাথায় নিয়েও তিনি সময়ের সেরা টেস্ট ব্যাটার ছিলেন। তাই, ‘চাপ’ ব্যাপারটা কখনোই ব্যাট হাতে রুটকে বিচলিত করতে পারেনি। হয়ত এ কারণেই তিনি সমালোচনা কিংবা চাপের সাগরে থেকেও রান করেছেন দেদারসে।

অধিনায়কত্ব ছাড়লেও, ছাড়েননি দলের হাল। নতুন কোচ আর নতুন অধিনায়কের হাত ধরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত শুরুর পরেও লর্ডসে হার চোখ রাঙাচ্ছিল ইংলিশদের সামনে। সেখানেও ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির মিস্টার রুট।

২৭৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ৬৯ রানে নেই দলের ৪ উইকেট। সেখান থেকে বেন স্টোকসকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ান রুট। স্টোকস ফিরলেও শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে ম্যাচ জিতিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন এই ইংলিশ তারকা।

১৭০ বলে ১২ চারে ১১৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পথে ক্যারিয়ারের ২৬তম সেঞ্চুরি তুলে নেন। সেই সাথে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে টেস্টে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করে নাম লেখান আরেক ইংলিশ তারকা অ্যালাস্টেয়ার কুকের পাশে। ৩১ বছর ১৫৭ তম দিনে দু’জনেই টেস্ট ক্যারিয়ারে দশ হাজার রান পূর্ণ করেন।

ইনিংসের দিক থেকে অবশ্য কুকের উপরে আছেন রুট। ২১৮ ইনিংসে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন রুট। অভিষেকের পর থেকে এক দশকের কম সময়ে টেস্টে ১০ হাজার রান করেছেন এমন ক্রিকেটার স্রেফ রুট! ৯ বছর ২১৭তম দিনে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।

অভিষেকের পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৬৪ টেস্ট খেলেছেন রুট। ১৩ সেঞ্চুরি আর ৩৫ ফিফটিতে ৫২.৪৫ গড়ে করেছেন ৫৫৬০ রান। ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৩৩ টেস্ট খেলেছেন। এই ৩৩ টেস্টে ৩৯.৭০ গড়ে করেছেন ২২৬৩ রান; সেঞ্চুরি ৪ ও ফিফটি করেছেন ১৪টি। ২০২১ থেকে এখন পর্যন্ত ২১ টেস্টে ৫৬.২০ গড়ে করেছেন ২১৯২ রান; ৯ সেঞ্চুরির পাশাপাশি করেছেন ৪ ফিফটি।

১৪তম ব্যাটার হিসেবে টেস্টে দশ হাজার রান পূর্ণ করেন রুট। এই ইংলিশ তারকার সামনে হাতছানি সাদা পোশাকে অনন্য উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যাওয়া। আর প্রায় তিন হাজার রান করলে সবাইকে টপকে টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক বনে যাবেন তিনি।

শীর্ষে থাকা শচীন টেন্ডুলকারকে ছুঁতে অবশ্য প্রয়োজন প্রায় ছয় হাজার রান! এত অল্প সময়ে রুট যেভাবে একের পর এক সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসেছেন কিংবদন্তিদের কাতারে – ক্রিকেট বিশ্লেষকদের ভাবনা, শচীনের রেকর্ডটাও ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link