স্লেজিং ছাড়া আজকালকার ক্রিকেট ভাবাই যায় না।
বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটারদের মনযোগ নষ্ট করতে স্লিপ কিংবা শর্টে দাঁড়ানো ফিল্ডাররা বেশিরভাগ সময় স্লেজিং করে থাকেন। স্লেজিংয়ের জন্য অবশ্য বিখ্যাত অজিরা। তবে ব্রায়ান লারা, স্টিভ ওয়াহ, গ্যারি সোবার্সরাও কথার চালাচালিতে মেতে উঠতেন প্রায়ই। ব্যতিক্রম ছিলেন না পাকিস্তানি তারকা জাভেদ মিঁয়াদাদও। কথা চালাচালি বা স্লেজিংয়ের জন্য বেশ পরিচিত ছিলেন তিনি।
৮৩ এর বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারত তখন বেশ ভাল ফর্মে। ১৯৮৫ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও ফাইনালে উঠে্ন তারা। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে মুখোমুখি হয় পাকিস্তানের। সেবার পাকিস্তানকে আট উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ভারত। ব্যাট হাতে ফাইনালেও ৬৩ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন রবি শাস্ত্রী। টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার হিসেবে ছিল অডি-হান্ড্রেড মডেলের একটি গাড়ি। সেবার দুর্দান্ত পারফর্ম করে এই গাড়িটি জিতেছিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার রবি শাস্ত্রী।
ম্যাচ চলাকালীন শাস্ত্রী বেশ কয়েকবার গাড়িটির দিকে লক্ষ্য করছিলেন। হয়ত তিনি অনুমান করে ফেলেছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা হিসেবে তার হাতেই উঠবে এই গাড়ির চাবি। কিন্তু ব্যাপারটা লক্ষ্য করে শাস্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে জাভেদ বলেছিলেন, ‘তুই বার বার ওদিক কেন দেখছিস? গাড়ির দিকে কেন বার বার তাকাচ্ছিস? ওই গাড়ি তুই পাবি না।’
সেসময় জাভেদকে উদেশ্য করে প্রতিত্তোরে শাস্ত্রী বলেন, ‘ জাভেদ, এটা আমার দিকেই আসছে। ‘
ওই গাড়ি পুরষ্কার হিসেবে জয়ের পর পুরো মেলবোর্নের মাঠ জুড়ে গাড়িতে করে ভারতের কিছু খেলোয়াড়েরা ঘুরে বেড়ান। তবে, জাভেদের স্লেজিংয়ের গল্পের শেষটা এখানেই নয়।
১৯৮৯ সালে পাকিস্তান তখন অস্ট্রেলিয়া সফরে। এক টেস্টে মার্ভ হিউজের বিপক্ষে তখন ব্যাট করছিলেন জাভেদ। বলা হয় মার্ভ হিউজের জিভ ছিল ধারালো। তাঁকে খোঁচানোর মত ভুল করার কথা কেউ ভাবতেন না। ক্ষ্যাপাটে মেজাজের মার্ভকেও খোঁচা মারতে ভাবেননি জাভেদ। সেবার এক টেস্টে মার্ভকে উদ্দেশ্য করে জাভেদ বলে উঠলেন, ‘তোমাকে আজকে মোটা একজন বাস কন্ডাক্টরের মত লাগছে।’
হিউজ অবশ্য প্রতিত্তোরে কিছু বললেন না, ছিলেন সুযোগের অপেক্ষায়। ওই ওভারেই জাভেদকে আউট করলেন হিউজ। ব্যাস, জবাব দেওয়ার মোক্ষম সুযোগ। জাভেদ যখন ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন – তখন তাঁকে উদ্দেশ্য করে হিউজ বললেন, ‘টিকেট প্লিজ।’
এর বছর তিনেক বাদে ৯২ এর বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হয়। প্রথমবার বিশ্বকাপের মঞ্চে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী। ক্রিজে তখন ব্যাট হাতে জাভেদ মিয়াঁদাদ। বল করলেন ক্ষুদে শচীন টেন্ডুলকার। জাভেদ বলটি মিস করলেন কিন্তু উইকেটের পেছন থেকে কিরণ মোরে এমনভাবে আবেদন করলেন যেন বলটি জাভেদের ব্যাট স্পর্শ করে এসেছে৷ আম্পায়ার কিরণের আবেদনে অবশ্য সাড়া দেননি, তবে বেশ বিরক্তই হয়েছিলেন জাভেদ!
এরপর একটা বলে রান আউটের সুযোগ আসে। কিন্তু ফিল্ডার উইকেটরক্ষকের কাছে বল দেওয়ার আগেই ক্রিজের ভিতরে চলে আসেন জাভেদ। উইকেটরক্ষক কিরণ মোরে বল ধরেই স্টাম্প ভাঙার চেষ্টা করেন, অনেকটা জাভেদকে লক্ষ্য করেই ছোট লাফ দেন। এরপরই জাভেদ স্টাম্পের সামনে মোরেকে দেখিয়ে ব্যাঙের মতো লাফ দিতে থাকেন!
২২ গজে প্রতিপক্ষের সাথে কথার লড়াইয়ে এমন বহুবার মেতেছেন জাভেদ। ব্যাট হাতে ফর্মে থাকুক না থাকুক – মুখের লড়াইয়ে তিনি সদা ফর্মেই ছিলেন।