নিখুঁত লাইন-লেন্থ আর টাইট বোলিং, সাথে ভাল টার্নও পান। তবে ছয় বছরের প্রায় দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি জাতীয় দলের অনিয়মিত এক মুখ। ব্যাকআপ স্পিনারের ভূমিকায় দলের সাথে সফরসঙ্গী হন তিনি। ঝুড়ি ভর্তি উইকেটের দেখা না পেলেও কিপটে বোলিংয়ের জন্য বেশ পটু তিনি।
গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তে দলকে উইকেটও এনে দিয়েছেন বেশিরভাগ সময়। বেশ প্রতিভাবান, সেই সাথে সামর্থ্য আছে; তবে নিজেকে খানিকটা দুর্ভাগা মানতেই পারেন। মোহান্মদ হাফিজ, শাদাব খান, ইমাদ ওয়াসিমদের ভীড়ে জাতীয় দলের নিজের জায়গাটা ছয় বছরেও যে পাঁকা করতে পারেননি বাঁ-হাতি মোহাম্মদ নওয়াজ।
যখনই সুযোগ পেয়েছেন, চেষ্টা করেছেন সেরাটা দেওয়ার। লোয়ার অর্ডারে ঝড়ো ফিনিশিংয়ের জন্যও বেশ পরিচিত তিনি। তবে এই কোটায় দলের নিয়মিত মুখ থাকেন শাদাব খান। যার কারণে প্রায়ই উপেক্ষিত থাকতে হয় নওয়াজকে।
সাল ২০১১। মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের দেওয়া ২৬২ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ব্যাট করছে বাংলাদেশ। উমর গুলের বোলিং তোপে সেদিন মুখ থুবড়ে পড়েছিল বাংলাদেশের বোলিং শিবির। তবে, বল হাতে সেদিন দুর্দান্ত এক স্পেল করেছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ। ৪ ওভারে ২ মেইডেনসহ মাত্র ১৫ রানের বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নিয়েছিলেন।
এরপর কেটে গেছে প্রায় এগারো বছর। ওয়ানডেতে ১০ ওভারের স্পেলে পাকিস্তানের আর কোনো বোলার বিশের কম রান দিয়ে স্পেল শেষ করতে পারেননি। কিপটে বোলিংয়ের দিক থেকে প্রায় এক দশক ধরে ওয়ানডেতে হাফিজের সেই ফিগারটি পাকিস্তানের সেরা স্পেল।
রেকর্ডটা এখনও তাঁর নামেই আছে। তবে দীর্ঘ সময় পর পাকিস্তানের কোনো বোলার দশ ওভারের স্পেলে বিশের কম রান দিতে সক্ষম হয়েছেন। মুলতানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাজিকাল এক স্পেল করেন মোহাম্মদ নওয়াজ।
নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টায় সবসময় মত্ত থাকেন। যখনই সুযোগ পান নিজের সেরাটা দিয়ে দলের জয়ে অবদান রাখতে চান। নিজের জায়গা পাঁকা করতে নজরকাঁড়া পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই সেটিও তিনি জানেন।
- ১০ ওভার। ৪৩ ডট। ১৯ রান। ৪ উইকেট। ১.৯ ইকোনমি রেট।
শামরাহ ব্রুকসকে লেগ বিফোর আর ব্রেন্ডন কিং, রভম্যান পাওয়াল, নিকোলাস পুরানদের পরাস্থ করলেন দুর্দান্ত সব টার্নে। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। মুলতানের মাটিতে এটি ওয়ানডেতে সেরা বোলিং। ষাট বলের স্পেলে ৪৩ ডট! প্রতিপক্ষকে স্রেফ চাপে রেখেছেন এমন নয়, রান বের করার সুযোগটাই দিয়েছেন খুব কম।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার হলেও চার উইকেটের দেখা এবারই প্রথম নয়। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ২০১৬ সালে অভিষেকের পর ষষ্ঠ ম্যাচে শারজাহতে ৪২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ওই সিরিজেই আবুধাবিতে ৪০ রানে শিকার করেছিলেন আরও ৩ উইকেট।
অবাক করা ব্যাপার হল, ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নওয়াজ শিকার করেছেন ২৫ উইকেট। এই ২৫ উইকেটের ১২ উইকেটই নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এমনকি ১৮ ওয়ানডের মাঝে সর্বোচ্চ পাঁচটি তিনি খেলেছেন ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে মিরপুরের মাটিতে শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয় এনে দিয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় এনে দিলেন দলকে। পরের ম্যাচে জাদুকরী স্পেলে একাই গুড়িয়ে দিয়েছেন ক্যারিবীয়দের।
ব্যাটে-বলে নিজের সামর্থ্যটা ঠিক প্রমাণ করে চলেছেন তিনি। এবার কি তবে নিজের জায়গাটা পাঁকা করতে পারবেন দলে? নাকি দলের সফরসঙ্গী হিসেবে ঘুরে বেড়াবেন এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে।