ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রথম আসরের পর্দা উঠেছিল ২০০৮ সালে। সেবারই প্রথম ও শেষ বারের মত আইপিএলের মঞ্চে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। এরপরই আজীবন নিষেধাজ্ঞা পাওয়ায় বিশ্বের জনপ্রিয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আর দেখা মেলেনি।
আইপিএলের প্রথম আসরে মোট ১২ জন পাকিস্তানি ক্রিকেটার খেলার সুযোগ পান। শোয়েব আখতার, সালমান বাট, উমর গুল, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, কামরান আকমল, ইউনুস খান, মিসবাহ উল হক, শহীদ আফ্রিদি, আজহার মেহমুদ, সোহেল তানভীর ও মোহাম্মদ আসিফের মত তারকারা সেবার আইপিএল মাতিয়েছিলেন। এই তালিকায় যুক্ত হতে পারতো আরও একটি নাম।
পাকিস্তানী অলরাউন্ডার ইয়াসির আরাফাতকে আইপিএল খেলতে প্রস্তাব দেওয়া হয় কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) পক্ষ থেকে। আরাফাত অবশ্য আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বড় কোনো তারকা ছিলেন না কখনোই। পাকিস্তানের হয়ে তিনটি টেস্ট খেলেন। সাথে ১১ টি ওয়ানডে আর ১৩ টি টি-টোয়েন্টিতেও দেখা যায় তাঁকে।
যদিও, ইংলিশ কাউন্টির নিয়মিত মুখ হওয়ায় তাঁকে ঘিরে আগ্রহ ছিল। ওই সময়ও তিনি ব্যস্ত ছিলেন কাউন্টিকে। কেকেআরের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আলোচনার পরেও ইয়াসির খুব একটা সাড়া দেননি। পরবর্তীতে কেকেআরের মালিক বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান নিজেই তাঁর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন – এমনটাই দাবি করেন ইয়াসির।
ক্রিকেট ডেনের ইউটিউব চ্যানেলে এক শো-তে ইয়াসির বলেন, ‘পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আইপিএলের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছিল খেলোয়াড়দের। আমি তাঁদের মধ্যে ছিলাম না, আমি খেলতে পারিনি। আমি সে সময় কেন্টের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলছিলাম। কেকেআরের একটা স্কাউটিং দল আমার কাছে এসেছিল। ভারত থেকে শুধু আমার সাথেই দেখা করতে সেখানে যায়। একটা ম্যাচের সময় আমার সাথে তাঁদের দেখা হয়। ওরাই আমাকে জানায় যে, খোদ শাহরুখ খান আমার ব্যাপারে আগ্রহী।’
শাহরুখের কথা শোনার পর ব্যাপারটাকে গুরুত্ব সহকারে নিতে চাননি ইয়াসির। শাহরুখ তাঁকে দলে নেওয়ার জন্য কলকাতা থেকে একটা দল পাঠিয়ে দিবে ইংল্যান্ডে – এমন কিছু তিনি ভাবতেই পারছিলেন না।
ইয়াসির বলেন, ‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম এটা স্রেফ রসিকতা। শাহরুখ খান আমার সাথে চুক্তির ব্যাপারে কথা বলতে কাউকে কেনই বা পাঠাবেন। তারা আমাকে একটা চুক্তিপত্র দিয়েছিল, যেখানে সব শর্ত লেখা ছিল।’
তবে আইপিএল খেলার ব্যাপারে তখনও নিশ্চিত ভাবে কিছুই জানাননি এই অলরাউন্ডার। চুক্তিপত্রেও সাক্ষর করেননি তিনি। এরপর বেশ কিছুদিন বাদে কেকেআর ম্যানেজমেন্ট থেকে একটা মেইল পান তিনি। সেখানে অবশ্য প্রস্তাব পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ না করায় একপ্রকার অভিযোগ করে বসে কেকেআর। এরও দিন কয়েক বাদে একটা ফোন পেলেন ইয়াসির। ফোনের ওপাশে ছিলেন শাহরখ খান!
তিনি সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ বাদে আমি একটা মেইল পেলাম। যেখানে তাদের সাথে যোগাযোগ না করায় রীতিমত অভিযোগ ছিল। এরপর আলোচনা সেখানেই থেমে যায়। তাদের কাছ থেকে আমি পুনরায় তিন বছরের চুক্তির একটা প্রস্তাব পেলাম। এবার শাহরুখ নিজেই আমাকে ফোন দিল! সে আমেরিকা যাবার সময় কারও মাধ্যমে আমার চুক্তিপত্রটাও উঠিয়ে নিয়েছিল।’
এরপর কথাবার্তা বেশ এগোলেও আইপিএলে আর খেলা হয়নি ইয়াসিরের। মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে বোমা হামলার পরই আইপিএল কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের গায়ে আজীবন আইপিএলে খেলায় নিষেধাজ্ঞার অদৃশ্য এক সিল বসিয়ে দেন।
ইয়াসির বলছিলেন, ‘এরপর মুম্বাইয়ে বোমা হামলা হল। আর আইপিএলে আজীবনের জন্য পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল।’