প্রত্যাবর্তনের বিধ্বংসী রূপ

কুইন্টন ডি ককের ব্যাকআপ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অভিষেক হয় হেনরিখ ক্ল্যাসেনের। টি-টোয়েন্টির জন্য অসাধারণ এক প্যাকেজ। উইকেটরক্ষকের পাশাপাশি মিডল অর্ডারে ঝড় তুলতে বেশ পারদর্শী তিনি। তবে ডি কক থাকায় লম্বা সময় ছিলেন উপেক্ষিত। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের আগে প্রায় লম্বা সময় ধরে টি-টোয়েন্টি দলেও তিনি সুযোগ পাচ্ছিলেন না।

মিডল অর্ডারে প্রোটিয়াদের অন্যতম সেরা ভরসা হবার মতন সব রকম সামর্থ্য আর সম্ভাবনা দুটোই আছে ক্ল্যাসেনের। তবে সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে পূর্ণতা দিতে পারেননি তিনি। একাদশে নিজের জায়গা মেলাতে অপেক্ষায় থাকতে হয় কারও বিশ্রাম কিংবা ইনজুরির।

নিজেকে প্রমাণের জন্য এই পৃথিবীতে সবাই হন্যে হয়ে থাকে একটা সুযোগের জন্য। কেউ সেই সুযোগ পায়, কেউ অপেক্ষার কঠিন লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে হারিয়ে যান সবার আড়ালে। কেউ আবার সুযোগ লুফে নিতে না পেরে ব্যর্থদের দলে নাম লিখান। প্রতিযোগিতার এই যুগে একটা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম, সাধনা আর ধৈর্য্য।

সেই অপেক্ষায় ছিলেন ক্লাসেনও। সুযোগটা তাই ক্ল্যাসেনের হাতে এসে ধরাও দিয়েছে। সেই সুযোগকে সফলতার খাতা অবধি টেনেও নিলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ছিলেন ডাগ আউটে। ডি কক থাকায় বরাবরের মতন বেঞ্চ গরম করেছেন তিনি।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ডি ককের বিশ্রামে সুযোগটা ধরা দিল। নিজেকে প্রমাণের জন্য মোক্ষম এক সুযোগ। ভুবনেশ্বরের তাণ্ডবে ততক্ষণে লণ্ডভণ্ড প্রোটিয়াদের টপ অর্ডার। আগের ম্যাচে জয়ের নায়ক রসি ভ্যান ডার ডুসেনও ফিরে গেছেন অল্পতেই। ক্ল্যাসেনের উপর তখন গুরুদায়িত্ব। নিজের সেরাটা জানান দেওয়ার এর চেয়ে বড় সুযোগ হয়ত আগে পাননি?

ভূবনেশ্বর কুমারের স্যুইং ম্যাজিকে শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার। ভূবির বোলিং দাপটে জয়ের স্বপ্নে বিভোর ভারত। এরপরই ক্লাসেনের তাণ্ডব শুরু। বারাবাতি স্টেডিয়ামে ক্লাসেনের ব্যাটে নিশ্চুপ ভারতীয় সমর্থকরা। যুজবেন্দ্র চাহাল, হার্শাল প্যাটেল, ভূবনেশ্বর কুমার, অক্ষর প্যাটেলদের সামনে খেললেন বিধ্বংসী এক ইনিংস। ক্ল্যাসেন ঝড়ে কাটাকে পিন পতন নীরবতা। ভারতীয় সমর্থকদের চেহারায় হারের কষ্টটা স্পষ্ট।

গেল বছর অবশ্য দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি। ১৩১ স্ট্রাইক রেটে প্রায় দু’শোর কাছাকাছি রান করেছেন। তবে ব্যাট হাতে নজরকাঁড়া পারফরম্যান্সটা দেখা যায়নি ক্লাসেনের ব্যাটে। যার ফলে বাদ পড়েন দল থেকে। এরপর একাদশে দেখা নেই। সুযোগটা এলো ভারতের মাটিতে। সেই সুযোগের বাজিমাতও করলেন ৪৫ হাজার সমর্থকের সামনে।

৪৬ বলে ৮১ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। ৫ ছক্কা, সাত চার। ভারতের কাছ থেকে জয়টা একাই ছিনিয়ে এনেছেন ক্ল্যাসেন। দল যখন বিপদে, ক্ল্যাসেন খেললেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। তাও কি-না বোলিং সহায়ক এক উইকেটে। যেখানে প্রোটিয়া বোলারদের সামনে রান তুলতে রীতিমতো ধুঁকেছে ভারতীয় ব্যাটাররা। ভূবনেশ্বরের সামনে যেখানে দাঁড়াতে পারছিল না বাকিরা, সেখানে পালটা আক্রমণ করে চাপের মুখে অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন তিনি।

হতে পারে এটা ক্ল্যাসেনের ভাগ্য পরিবর্তনের এক ইনিংস। দলের প্রয়োজনে কিংবা চাপের মুখেও তিনি ব্যাট হাতে নিজের কাজটা কর‍তে জানেন – সেটা এক ইনিংসেই প্রমাণ করেছেন। তবে ধারাবাহিকতা শব্দটা নিজের নামে পাশে জুড়ে দিতে হবে ক্ল্যাসেনকে। প্রতিযোগিতার মাঝে দলে জায়গা পাঁকা কর‍তে হলে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link