একুশ বছর বয়সী এক ছোকড়া। রীতিমত নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছেন তিনি বিশ্বের এ সময়ের সেরা সব রক্ষণভাগকে। বা পাশ দিয়ে আক্রমণে উঠে যান আলোর গতির সাথে পাল্লা দিয়ে। মুহূর্তে লণ্ডভণ্ড করে ফেলেন সকল পরিকল্পনা। ছেলেটাকে নিয়ে আর যাই হোক কাগজে আঁকা ছক বড্ড মিছে হয়ে যায়।
ছেলেটি ভিনিনিয়াস জুনিয়ার। রিয়াল মাদ্রিদের লেফট উইং যে আগলে রাখছেন। বনে গেছেন আক্রমণের অন্যতম কাণ্ডারি। এতেই ক্ষান্ত নন তিনি। ভিনিসিয়াস যেন ছুটছেন অদম্য গতিতে। সেরাদের কাতারে ঢুকে পড়বার খায়েস নিশ্চয়ই তাঁর। লম্বা সময় ধরে রিয়াল মাদ্রিদে থেকে গেলে নিশ্চয়ই তিনি বনে যেতে পারেন মাদ্রিদের ‘রয়্যাল’ কিংবদন্তি।
তবে একটা মৃদু গুঞ্জন রয়েছে ইউরোপের ফুটবল পাড়ায়। তিনি নাকি ছেড়ে দেবেন রিয়াল মাদ্রিদ। সত্য হওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোটায়। তবুও গুঞ্জন আর ঠেকায় কে। হওয়াটাও যেন স্বাভাবিক। তরুণ এই তারকার সাথে নতুন চুক্তি এখন পর্যন্ত সাক্ষরিত হয়নি। খানিক জটিলতায় ঝুলে আছে। এতটুকু নিশ্চিত রুপেই বলা যায় শেষমেশ লস ব্ল্যাঙ্কোসদের দেওয়া প্রস্তাবেই সাক্ষর করবেন ভিনি।
কারণ তো একটা নিশ্চয়ই রয়েছে। ব্রাজিলের পাড়া-মহল্লা থেকে যুব দলে উঠে আসা খেলোয়াড়কে খুব অল্প বয়সেই রিয়াল মাদ্রিদ নিয়ে আসে। নিজেদের একাডেমিতে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতিভা বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। সেটার একটা ঋণ তো নিশ্চয়ই রয়েছে। তবে ঋণের থেকেও মায়ার একটা বাঁধনে আটকে গেছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র।
বিশ্বসেরা এক ক্লাবের আশেপাশে থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবার সুযোগ তো সবার কপালে জোটেনি। সবাইকে তো নিশ্চয়ই মূল একাদশে দিনের পর দিন ব্যর্থ হবার পরও খেলার সুযোগ দেয় না লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। তবে ভিনিসিয়াস ছিলেন প্রতিভাবান। গোটা রিয়াল মাদ্রিদ সেটা জানত। তাই তো একের পর এক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার পরও ভিনিসিয়াসের পিঠ চাপড়ে বলেছে, ‘ও কিছু নয়, তুমি খেলে যাও।’
আর ভিনিসিয়াস নিজের পিঠের উপর ভরসার হাত দেখে সাহস পেয়েছেন। সেই সাথে নিজেকে মেলে ধরার স্পৃহায় উজ্জীবিত হয়েছে। ভিনি নিজের দূর্বলতা কাটিয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তাইতো, সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়দের একজন বলেই বিবেচিত হচ্ছেন এক সময় ট্রলের সাগরে ভেসে বেড়ানো ‘ভিনি পেলে’।
সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমটায় দুই খানা বড় শিরোপা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছেন একুশ বছর বয়সী এই ছোকড়া। চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা তো মাদ্রিদ জিতেছিল তাঁর করা গোলেই। সব মিলিয়ে এবারে মৌসুমে মাদ্রিদের হয়ে মোট ৪২ খানা গোলে অবদান রেখেছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তিনি যেন প্রতিদান দিতে শুরু করেছেন।
নিশ্চয়ই এমন একজন খেলোয়াড়কে হাতছাড়া করতে চাইবে না রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ইউরোপের বেশ বড় বড় ক্লাব ঠিকই পায়তারা চালাচ্ছে ভিনিসিয়াসকে নিজেদের দলে ভেড়ানোর জন্যে। এর মধ্যে এই সময়ের অন্যতম ধনী ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই অত্যন্ত লোভনীয় প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ভিনিসিয়াসকে। রিয়াল মাদ্রিদের থাকাকালীন যে পরিমাণ আর্থিক স্বচ্ছলতা পাবেন ভিনিসিয়াস তার থেকেও কয়েক গুণ বেশি অর্থের প্রলোভন দেখানো হয়েছে।
এমনটা নিশ্চিত করেছেন খোদ মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। তবে ভিনিসিয়াস তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। তিনি চাইছেন শুভ্র সার্জি গায়ে রঙিন করতে তাঁর ক্যারিয়ার। শুধুমাত্র পিএসজি নয়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেরও আরও বহু ক্লাব প্রস্তাব, প্রলোভন দেখিয়েছে ভিনিসিয়াসকে। তবে কাজের কাজ কেও করে উঠতে পারেনি। খুব শীঘ্রই সকল গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে নতুন চুক্তিবদ্ধ হতে চলেছেন ভিনিসিয়াস, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।